দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ভারত ও বাংলাদেশের নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দুদিনের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষ হয়েছে। আর সেখানেই দুদেশের মধ্যে অপার সম্ভাবনাময় একটি পর্যটন প্যাকেজেরও দিগন্ত খুলে গেছে- আর সেটা হলো কলকাতা থেকে সুন্দরবনের নদী-নালা বেয়ে ঢাকা অভিমুখী লাক্সারি ক্রুজ।
বৃহস্পতিবারের বৈঠকে (২৫ অক্টোবর) দিল্লির লে মেরিডিয়ান হোটেলে ভারত ও বাংলাদেশের জাহাজ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা প্রোটোকল রিভার রুট ও কোস্টাল শিপিংয়ের (উপকূলীয় জাহাজ চলাচল) জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) চূড়ান্ত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পরস্পরের উপকূল ঘেঁষে কিংবা নির্দিষ্ট নদীপথ ধরে দুদেশের পণ্য ও যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচলে আর কোনও বাধা থাকবে না। দুদেশের জাহাজ এই পথ ধরে কীভাবে যাবে, কী নিয়ম মেনে চলবে, কোথায় কে নিরাপত্তা জোগাবে- এসব খুঁটিনাটি বিষয়গুলো এখন দুদেশের সম্মতিক্রমেই চূড়ান্ত হয়ে গেছে।
নদীমাতৃক বাংলাদেশের নানা নদী ঘেঁসে রিভার ক্রুজের যে অসম্ভব ‘ট্যুরিজম পোটেনশিয়াল’ আছে, ভারতের বেশ কিছু ক্রুজ অপারেটর বহুদিন ধরেই সেই সম্ভাবনা নিয়ে অবহিত। দুদেশের সমঝোতা স্বাক্ষরিত হওয়ার পর তারা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে চেষ্টা করছেন। এমনই একটি উদ্যোগের নাম- কলকাতার লাক্সারি ক্রুজ অপারেটর ‘ভিভাডা ক্রুজ’।
এই মুহূর্তে http://vivadacruises.com/ ওয়েবসাইটে গেলেই দেখা যাবে, তারা ইতোমধ্যেই কলকাতা থেকে ঢাকা দুসপ্তাহের ‘ক্রস কান্ট্রি প্যাকেজে’র বিস্তারিত দিয়ে রেখেছেন। কলকাতা থেকে শুরু করে ধীরলয়ে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ফরেস্টের গা ঘেঁষে, বরিশাল হয়ে, চাঁদপুরে ইলিশের জন্য থেমে ১৩ দিনের মাথায় কীভাবে সোনারগাঁ ছুঁয়ে তাদের প্রমোদতরী ঢাকায় ভিড়বে– সেই বিবরণ পড়লেও রোমাঞ্চিত হতে হয়।
ভিভাডা ক্রুজের কনসালট্যান্ট (অবসরপ্রাপ্ত) লে. কর্নেল এস আর ব্যানার্জি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইউরোপের দানিয়ুব বা রাইন নদীর বুকে রিভার ক্রুজ যদি সারা দুনিয়ার পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারে, তাহলে দুই বাংলার অপূর্ব নদীপথগুলোর ক্ষেত্রেও তা না করতে পারার কোনও কারণ নেই।’
জানা যায়- এই রুটেই পড়বে বিশ্ববিখ্যাত সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য, যা রয়েছে সীমান্তের দুপার ঘেঁষেই। কপাল ভাল হলে মিলতে পারে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সাক্ষাতও, আর তা না-হলেও কোনও ক্ষতি নেই, গ্রামবাংলার শান্ত সুন্দর জীবনের অপূর্ব দৃশ্যপট যে পর্যটকদের মন ভরিয়ে রাখবে তা নিয়ে ক্রুজ অপারেটররা নিশ্চিত।
তবে এটাও ঠিক, ভারতের ক্রুজ লাইনগুলো এই যাত্রাপথের জন্য মূলত বিদেশি পর্যটকদেরই নিশানা করছেন– যাদের খরচ করার ক্ষমতা বেশি, বিলাসবহুল নৌযানে তাদের প্রতি রাতের ভাড়াও গুণতে হবে সম্ভবত ডলারে। তবে চাহিদা বেশি হলে এই আন্তর্জাতিক রিভার ক্রুজ অবধারিতভাবে দুদেশের সব পর্যায়ের পর্যটকদেরও হাতের নাগালে চলে আসবে।
জানা গেছে, কলকাতার বেশ কিছু ক্রুজ অপারেটর যেমন এই পথে জাহাজ চালানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। তবে বাংলাদেশের পর্যটন সংস্থাগুলি এখনও তেমন কোনও উদ্যোগ নিয়েছে তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে সংশ্লিষ্টদের মনে করছেন, কলকাতা থেকে রিভার ক্রুজ শুরু হলে অচিরেই ঢাকা থেকেও বাংলাদেশের পর্যটকবোঝাই জাহাজ কলকাতার দিকে রওনা দেবে।