X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

অক্টোবর থেকে ১৬ উপজেলার প্রাথমিক স্কুলে রান্না করা খাবার

এস এম আববাস
০১ জুলাই ২০১৯, ১৫:৩৩আপডেট : ০২ জুলাই ২০১৯, ২২:৪৯

অক্টোবর থেকে ১৬ উপজেলার প্রাথমিক স্কুলে রান্না করা খাবার

বেসরকারিভাবে দেশের তিনটি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুপুরে রান্না করা খাবার বিতরণ (মিড-ডে মিল) কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের পর এবার সরকারিভাবে ১৬টি উপজেলায় এই কর্মসূচি চালু চালু করা হবে। সরকারের স্কুল ফিডিং কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক মো. রুহুল আমিন খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১ অক্টোবর থেকে স্কুলে রান্না করা খাবার বিতরণের পাইলট কর্মসূচি  চালু করা হবে। আর ২০২০ সাল থেকে নতুন প্রকল্প আসছে। নীতিমালা তৈরি হলে পর্যায়ক্রমে সারাদেশেই এই কর্মসূচি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।’

বেসরকারিভাবে বর্তমানে ডব্লিউএফপি (ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রোম) বরগুনা জেলার বামনা, জামালপুরের ইসলামপুর এবং বান্দরবানের লামা উপজেলার প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই কর্মসূচি পারচিালনা করছে। আর  স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে। কর্মসূচির আওতায় সপ্তাহের পাঁচ দিন খিচুড়ি এবং বৃহস্পতিবার দেওয়া হয় উচ্চপুষ্টি সমৃদ্ধ বিস্কুট।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযান (ক্যাম্পে)-র উপপরিচালক কে এম এনামুল হক বলেন, ‘বর্তমানে দেশের ১০৪টি উপজেলার ১৫ হাজার ৮০টি বিদ্যালয়ে তাদের স্কুল ফিন্ডিং কর্মসূচি চালু আছে। এরমধ্যে ৯৩টি উপজেলায় সরকারি অর্থায়নে এ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব স্কুলে শিশুদের উচ্চপুষ্টির বিস্কুট দেওয়া হয়।’  তিনি বলেন, ‘তবে এর পাশাপাশি দেশের তিনটি উপজেলায় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) অধীনে স্কুল মিল কর্মসূচি চালু রয়েছে। এই স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীদের দুপুরে  রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে।’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে স্কুল শিক্ষার্থীদের বিস্কুট দেওয়ার কর্মসূচি শুরুর পর থেকে দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করে। বরগুনার বামনা, জামালপুরের ইসলামপুর এবং বান্দরবারে লামা উপজেলায় ডব্লিউএফপি’র আওতায় ২০১৩ সাল থেকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে মিড-ডে মিল বা দুপুরে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়।

শিক্ষার্থীদের স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালুর পর থেকে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযান (ক্যাম্পে) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পুষ্টিমান ঠিক রেখে জাতীয় মিড-ডে মিল পলিসি তৈরির জন্য সরকারকে সুপারিশ করে আসছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জাতীয় ‍স্কুল মিল নীতিমালা প্রণয়নের জন্য ২০১৬ সালে একটি কমিটি গঠন করে। ২০১৭ সালে এ নীতিমালার খসড়া প্রনয়ণ করা হলেও নানাবিধ কারণে দেরি হয়। সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘জাতীয় স্কুল মিল নীতি-২০১৯’ চূড়ান্ত করেছে, যা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে পুরোপুরি সরকারিভাবে পাইলট প্রকল্প হিসেবে দেশের ১৬ জেলায় আগামী অক্টোবরে থেকে চালু হচ্ছে জাতীয় স্কুল মিল কার্যক্রম। এরপর দেশের আরও ১০৪টি উপজেলায় এ কর্মসূচি চালু করা হবে। আর সারাদেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিল বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে আট হাজার কোটি টাকা।

ডব্লিউএফপি পরিচালিত রান্না করা খাবারের মেন্যু

প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য উচ্চপুষ্টি সম্পন্ন ৯০ গ্রাম চাল, ডাল ২৫ গ্রাম, উচ্চ পুষ্টি সম্পন্ন তেল ১২ গ্রাম, আলু ১৫ গ্রাম, সবজি ২০ গ্রাম, হলুদ এক  গ্রাম, লবণ ৩ গ্রাম ও পরিমাণ মতো মসলা দিয়ে স্কুলের রান্নাঘরে তৈরি হয় খিচুড়ি। এতে বিভিন্ন রকমের সবজি ব্যবহার করা হয়। সপ্তাহের চার দিন শুধু খিচুড়ি দেওয়া হয়। আর একদিন খিচুড়ির সঙ্গে ডিম দেওয়া হয়। সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার দেওয়া উচ্চপুষ্টি সম্পন্ন বিস্কুট। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে প্রথম শিফটের এবং দেড়টায় দেওয়া হয় দ্বিতীয় শিফটের খাবার। শিশুরা বাড়ি থেকে টিফিন বক্স সঙ্গে করে নিয়ে আসে।    

১৬ জেলার স্কুল মিল পাইলট কর্মসূচি

সপ্তাহের ছয় দিনের মধ্যে তিন দিন রান্না করা খাবার এবং তিন দিন বিস্কুট দেওয়া হবে। সরকারে স্কুল ফিডিংয়ের আওতায় বিস্কুট কর্মসূচিতে শিক্ষার্থী প্রতি আট টাকা করে খরচ হয়। রান্না করা খাবার দেওয়া হলে এই খরচ দাঁড়াবে ১৮টাকা। খসড়া জাতীয় স্কুল মিল নীতি অনুযায়ী, একজন শিশুর দৈনিক শক্তি চাহিদার ৩০ শতাংশ এবং পুষ্টি চাহিদার ৫০ শতাংশ স্কুলের খাবারে নিশ্চিত করা হবে।

অক্টোবর থেকে ১৬ উপজেলার প্রাথমিক স্কুলে রান্না করা খাবার

ক্যাম্প’র উপপরিচালক কে এম এনামুল হক বলেন, ‘ন্যূনতম খাদ্য তালিকায় খাবারের বৈচিত্র্য বিবেচনা করে ১০টি খাদ্যগোষ্ঠীর মধ্যে কমপক্ষে চারটি খাদ্যগোষ্ঠী নির্বাচন করতে হবে। যেখানে একটি প্রাণীজ উৎস থেকে নিতে হবে।’ স্কুল মিল পলিসি অনুযায়ী, ১০টি খাদ্যগোষ্ঠির মধ্যে রয়েছে— শস্য, কন্দ ও শিকড় এবং উদ্ভিদ জাতীয় বিভিন্ন ধরনের ডাল ও মটরসুটি, বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও বিচি, বিভিন্ন ধরনের মাংস ও মাছ, দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য, ডিম, গাঢ় সবুজ শাক-সবজি, ভিটামিন ‘এ’ সমদ্ধ ফল ও সবজি, অন্যান্য শাক-সবজি ও ফল।    

যেসব জেলায় রান্না করা খাবার দেওয়া হবে

স্কুল মিল কর্মসূচির আওতায় উপজেলা নির্বাচন করা হয়েছে দারিদ্র্য ম্যাপ অনুযায়ী। সরকারি কর্মসূচির আওতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খাবার দেওয়া হবে— কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারি ও রাজিবপুর, দিনাজপুরের ফুলাবাড়ি, পাবনার বেড়া, নওগাঁ জেলার পোরশা, গাইবান্ধার সাঘাটা, জেলার নলিতাবাড়ি, জামালপুরের ইসলামপুর, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া ও কাউখালী, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, যশোরের ঝিকরগাছা, খুলনার বাটিয়াঘাটা, বরগুনার বামনা, লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলা এবং সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায়।

নির্বাচিত ১৬ উপজেলার মধ্যে বান্দরবানের লামা উপজেলা নেই। তবে ডব্লিউএফপি পরিচালিত লামার পাইলট প্রকল্প শেষ হলে এই ১৬ উপজেলার সঙ্গে লামা উপজেলাও যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
নামেই শুধু সরকারি কলেজ, নানা সংকটে ব্যাহত শিক্ষা কার্যক্রম
প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি কখনও পূরণ হয় না: ডা. বিধান রঞ্জন
নিকলীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে অনুমোদনহীন কামাল ব্রিকস, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা
সর্বশেষ খবর
সরকারের জাতীয় ঐকমত্যের উদ্যোগে বাধা একটি দল: জামায়াত সেক্রেটারি
সরকারের জাতীয় ঐকমত্যের উদ্যোগে বাধা একটি দল: জামায়াত সেক্রেটারি
বিচার, সংস্কার এবং নতুন সনদের বাস্তবায়নে জনগণই আমাদের একমাত্র শক্তি: নাহিদ ইসলাম
বিচার, সংস্কার এবং নতুন সনদের বাস্তবায়নে জনগণই আমাদের একমাত্র শক্তি: নাহিদ ইসলাম
কাবরেরার পদত্যাগ চেয়ে নিজেই অপসারিত শাহীন!
কাবরেরার পদত্যাগ চেয়ে নিজেই অপসারিত শাহীন!
‘ভবিষ্যতে আ.লীগ বলে কোনও দল থাকবে না’
‘ভবিষ্যতে আ.লীগ বলে কোনও দল থাকবে না’
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
খেলাপিতে ধসে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বিপদে আমানতকারীরা
খেলাপিতে ধসে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বিপদে আমানতকারীরা