বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এজন্য সংস্থাটির ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বার্ষিক বাজেটে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। তবে রাজউক চেয়ারম্যান বদলের পর সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ কমিয়ে নিয়ে আসা হয় মাত্র এক লাখ টাকায়। এ খাত থেকে কেন টাকা সরানো হয়েছে বা সরিয়ে নেওয়া টাকা অন্য কোনও খাতে ব্যবহার করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেনি রাজউক।
এ খাত থেকে বরাদ্দ দেওয়া অর্থ সরিয়ে নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের দাবি, রাজউকের সামনে যাতে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন না হয় সেজন্যই বরাদ্দ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিক সভা-সমাবেশেও তারা ক্ষোভ জানিয়েছেন। লিখিতভাবেও চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছেন। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বঙ্গবন্ধু রাজউক ডিপ্লোমা প্রকৌশল পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও রাজউকের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আল আমীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাজউক ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপনের জন্য আমরা জোর দাবি জানিয়েছি। এরপর কর্তৃপক্ষ এ খাতে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখে। পরবর্তী সময়ে মাত্র এক লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। লিখিতভাবে প্রতিবাদ করেছি। কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা বর্তমান চেয়ারম্যানের কাছেও দাবি করেছি, তিনি যাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ মঞ্জুর করে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপনের ব্যবস্থা নেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যান বজলুল করিম চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যান থাকাকালে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণের জন্য বরাদ্দ রেখেছিলাম। কিন্তু এখন অবসরে গিয়েছি। এগুলো এখন আর কী বলবো? আমি আর কিছু বলতে চাই না।’
জানা গেছে, ২০১৬ সালে রাজউকের তদানীন্তন চেয়ারম্যান বজলুল করিম চৌধুরী রাজউক ভবনের সামনের উন্মুক্ত স্থানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ম্যুরাল স্থাপনের উদ্যোগ নেন। পরে বিষয়টি বোর্ডসভায় অনুমোদন নিয়ে একটি প্রকল্পও গ্রহণ করেন তিনি। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণ প্রকল্প’। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ খাতে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দও রাখা হয়। কিন্তু, ২০১৭ সালের ১৪ মে রাজউকের চেয়ারম্যান হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে একই বছরের ২২ জুন দায়িত্ব গ্রহণ করেন অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদায় রাজউকের সদস্য ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান।
অভিযোগ রয়েছে, আব্দুর রহমানের সময়কালেই এই বাজেট সংশোধন করে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণের বরাদ্দ মাত্র এক লাখ টাকায় নিয়ে আসা হয়। এরপর ২০১৮-১৯ অর্থবছরেও এ খাতে মাত্র এক লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু সেই টাকা খরচ হয়নি। ২০১৯ সালের মে মাসে চেয়ারম্যান হিসেবে মেয়াদ শেষ হয় আব্দুর রহমানের। এরপর ১৯ মে রাজউকে নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে অতিরিক্ত সচিব সুলতান আহমেদকে নিয়োগ দেয় সরকার। তবে তিনি দায়িত্ব পেলেও ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে বাড়েনি রাজউক ভবনের সামনের উন্মুক্ত বাগানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণে বরাদ্দ। এই বাজেটেও এই খাতে সেই এক লাখ টাকাই বরাদ্দ দেওয়া আছে।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, মাত্র এক লাখ টাকা দিয়ে জাতির জনকের ম্যুরাল নির্মাণ করলে সেটি মানসম্মত হবে না। এ কারণে কর্তৃপক্ষ ম্যুরালটির নির্মাণকাজ এখনও শুরু করতে পারেনি।
বিষয়টি নিয়ে রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপনের জন্য একটা আলোচনা ছিল। চেষ্টাও করা হয়েছে। কিন্তু আমার সময়ে বরাদ্দ কমানো হয়েছে কিনা সেটা এই মুহূর্তে আমার জানা নেই।’
পরে তাকে জানানো হয়, বর্তমানে ম্যুরাল নির্মাণ প্রকল্পের জন্য মাত্র এক লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘বলে কী? এক লাখ টাকা দিয়ে তো কয়টা পাথরের দামও হবে না। এই টাকা দিয়ে কীভাবে ম্যুরাল স্থাপন করা যাবে।’
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি রাজউক চেয়ারম্যানকে বলে দিচ্ছি। কীভাবে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া ৫০ লাখ টাকা মাত্র এক লাখ টাকা হয়ে যায়?’
জানতে চাইলে রাজউক চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোন ফাঁকে এটি হয়ে গেছে জানা নেই। মন্ত্রী মহোদয় নির্দেশ দিয়েছেন ৫০ লাখ টাকা থেকে কীভাবে এক লাখ টাকা হলো তা খতিয়ে বের করার জন্য।’