X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাতারাতি কেন বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করলো ভারত?

দিল্লি প্রতিনিধি
০২ অক্টোবর ২০১৯, ১৮:২৯আপডেট : ০২ অক্টোবর ২০১৯, ১৮:৫৪

পেঁয়াজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন আড়াই বছর পর রাষ্ট্রীয় সফরে দিল্লিতে যাচ্ছেন, দুই দেশের সৌহার্দ্যের প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশ ট্রাকের বহরে চাপিয়ে ৫০০ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে পাঠাচ্ছে, তখনই গত রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ভারত সরকারের একটি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে হতচকিত করে দিয়েছে। সেটা হলো—হঠাৎ করেই বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিলো ভারত।

সিদ্ধান্তটা এতই আকস্মিক নেওয়া হয়েছে যে, রফতানিকারকরা পর্যন্ত সম্পূর্ণ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। দিল্লি থেকে ছুটির দিনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত পৌঁছামাত্র পেঁয়াজভর্তি ট্রাকগুলো সীমান্তেই আটকে দেওয়া হয়েছে।

হিলি, ফুলবাড়িসহ বিভিন্ন সীমান্ত চেকপোস্টে সেই ট্রাকগুলো এখনও থমকে আছে। এমনকি যেসব অর্ডারের জন্য অনেক আগেই এলসি খোলা হয়েছিল, সেগুলোকেও মাল খালাস করতে দেওয়া হয়নি। ফলে বাংলাদেশের খুচরো ও পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের চড়া দাম আরও চড়া হয়েছে। কোথাও কোথাও এক কেজি পেঁয়াজ দেড়শ’ টাকায়ও ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে।

‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ এদিন এক প্রতিবেদনে লিখেছে, ‘ভারত থেকে একটা পেঁয়াজও যেন সীমান্ত পেরোতে না-পারে, সেই মর্মে প্রতিটা চেকপোস্টে কড়া নির্দেশ পাঠানো হয়েছে।’

কিন্তু কেন হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত নিলো ভারত?

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের ঠিক আগে এই ধরনের পদক্ষেপ আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশীকে কোনও ইতিবাচক সংকেত দেবে না, এটা সরকারের ভালোই জানা আছে। তারপরও একরকম নিরুপায় হয়েই আমরা রফতানি পুরোপুরি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি।’

এরআগে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিদেশে পেঁয়াজ রফতানি কমাতে ভারত প্রতি টন পেঁয়াজের ন্যূনতম রফতানি মূল্য এক ধাক্কায় বাড়িয়ে ৮৫০ ডলার করেছিল। কিন্তু তারপরও নেপাল, শ্রীলঙ্কা বা বাংলাদেশে রফতানির পরিমাণ প্রায় কমেনি।

এরপরই ভারতের ক্রেতা সুরক্ষা সচিব এ কে শ্রীবাস্তব রবিবার সকালে ডিরেক্টর জেনারেল অব ফরেন ট্রেড আলোক চতুর্বেদীকে জরুরি চিঠিতে বলেন, ‘দেশের বাজারে পেঁয়াজের মূল্য নাগালে রাখতে আমাদের মনে হয় রফতানি সম্পূর্ণ বন্ধ করার কথা বিবেচনা করা উচিত।’

যেমন কথা, তেমন কাজ। ওই চিঠি পাওয়ার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হুকুম চলে আসে—এখন থেকে একটা পেঁয়াজের ট্রাকও আর সীমান্ত পেরোতে পারবে না।

আসলে ভারতের খুচরো বাজারেও পেঁয়াজের মূল্য মাত্র দুই-তিন সপ্তাহের ভেতরে বিশ রুপি কেজি থেকে একশ’ রুপিতে ঠেকেছে। মৌসুমি বৃষ্টির শেষ পর্বে যেভাবে মহারাষ্ট্রের নাসিকসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রবল বৃষ্টিপাত ও বন্যা হয়েছে, তাতে পেঁয়াজের ফলন সাংঘাতিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নাসিক হলো ভারতের পেঁয়াজের রাজধানী। নাসিক থেকে পেঁয়াজের সরবরাহ ব্যাহত হলে তার প্রভাব পড়ে সারাদেশেই। কিন্তু এবার পেঁয়াজের বাজারে আগুন লাগার ঘটনা সরকারকে যেভাবে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে, তা প্রায় অভাবনীয়।

দিল্লিতে জেএনইউ-র অধ্যাপক ও বিখ্যাত ফুড হিস্টোরিয়ান পুষ্পেশ পন্থ বলছিলেন, ‘উত্তর ভারতে আসলে পেঁয়াজের সঙ্গে পলিটিক্সের সম্পর্ক খুব নিবিড়। ভারতের একটা বিরাট অংশের মানুষ খাবার প্লেটে পেঁয়াজ ছাড়া ভাবতেই পারেন না, আর সেটার মূল্য ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেলে তাদের সব রাগ গিয়ে পড়ে সরকারের ওপর।’ তিনি আরও বলেন, ‘পেঁয়াজের মূল্য বাড়ার জেরে ভারতে সরকারের পতন হয়েছে, এরকমও বহু নজির আছে। কাজেই এখন রফতানি বন্ধ করাসহ সরকার যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেগুলো একরম নি-জার্ক রিঅ্যাকশন বলেই আমার ধারণা।’

আসলে ভারতের মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার মতো দুটো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আর তিন সপ্তাহও বাকি নেই। দুটো রাজ্যেই বিজেপি ক্ষমতায় আছে, আর সেই দখল ধরে রাখতেও তারা মরিয়া। পূর্ব ভারতের ঝাড়খন্ড আর রাজধানী দিল্লিতেও বিধানসভা ভোট অদূরেই—পেঁয়াজের অগ্নিমূল্য সেখানেও নির্বাচনি উত্তাপ বাড়াতে পারে, এই আশঙ্কা আছে পুরোমাত্রায়।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল তো ইতোমধ্যেই তার সরকারের পক্ষ থেকে একটু সস্তায় পেঁয়াজ বেচার ব্যবস্থা করে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে শুরু করে দিয়েছেন।

দ্বিতীয়ত, ভারতে প্রধান উৎসবের মৌসুমও (ফেস্টিভ পিরিয়ড) সদ্য শুরু হয়েছে—এ মাসের শেষ দিকেই উত্তর ভারতের প্রধান উৎসব দিওয়ালি (দীপাবলি), বাঙালিদের দুর্গাপূজা আর দশেরাও একেবারে দোরগোড়ায়। বছরের এই সময়েই সবচেয়ে বেশি কেনাকাটা করেন ভারতীয়রা। আর তখন তাদের যদি একশ’ রুপি কেজিতে পেঁয়াজ কিনতে হয়, তাহলে সেই উৎসবের আনন্দ অনেকটাই মাটি হতে বাধ্য।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এসব কারণেই সরকার একরকম নিরুপায় হয়ে বাংলাদেশ বা নেপালে পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ করেছে। তাতে যদি দেশের বাজারে মূল্যের একটু লাগাম পরানো যায়।’ লং টার্মে কূটনীতির গুরুত্ব যদিও কম নয়, কিন্তু আপাতত শর্ট টার্মে ঘরোয়া রাজনীতির দাবিকে কিছুতেই ফেলা যাচ্ছে না বলেও হাসতে হাসতে এই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।

/এমএনএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিএনপির ‘ইন্ডিয়া-আউট’ ক্যাম্পেইন: বাস্তবতা ও সম্ভাব্য ফলাফল
বিএনপির ‘ইন্ডিয়া-আউট’ ক্যাম্পেইন: বাস্তবতা ও সম্ভাব্য ফলাফল
নায়কের জন্মদিনে নায়িকারা...
নায়কের জন্মদিনে নায়িকারা...
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আধুনিকায়নে কাজ করবে জাইকা ও বিএফডিসি
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আধুনিকায়নে কাজ করবে জাইকা ও বিএফডিসি
ট্রেনের ৪৫ হাজার টিকিট কিনতে দেড় কোটির বেশি হিট
ট্রেনের ৪৫ হাজার টিকিট কিনতে দেড় কোটির বেশি হিট
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের