X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

শঙ্কায় খামারিরা

শফিকুল ইসলাম
১২ জুলাই ২০২০, ২৩:৪৮আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২০, ০০:১১

গরুর খামার (ফাইল ছবি) খামারে পালিত গরু নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন খামারিরা। কোরবানি উপলক্ষে পশুরহাট এখনও বসেনি। অপরদিকে বন্যার পানিতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের খামার তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। এ বছর ক্রেতা কম। এর প্রথম কারণ করোনা আতঙ্ক আর দ্বিতীয় কারণ মানুষের আর্থিক সঙ্গতি কমে গেছে। ফলে কোরবানির পশু কম বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব কারণে খামারে পালিত সব পশু এ বছর বিক্রি হবে কিনা অথবা হলেও প্রকৃত দাম তারা পাবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় সময় পার করছেন খামারিরা। কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের একাধিক খামারির সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নিজেদের গরু হাটে তোলার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছেন দেশের খামারি ও গৃহস্থরা। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির জন্য সারা দেশে প্রস্তুত করা গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০টি। এরমধ্যে গরু ও মহিষ ৪৫ লাখ ৩৮ হাজার, ছাগল ও ভেড়া ৭৩ লাখ ৫৫ হাজার ও অন্যান্য পশু উট, দুম্বা চার হাজার ৫০০টি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী ও সদর উপজেলার সীমান্ত পথে নদীর পানিতে ভাসিয়ে দিয়ে প্রতি রাতে ভারতীয় শত শত গরু ও মহিষ দেশের সীমানায় প্রবেশ করানো হচ্ছে। বিশেষ করে সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের দই খাওয়া, উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়ন এবং নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের সীমান্তের নদীপথে প্রচুর ভারতীয় গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হচ্ছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এসব গরু সংশ্লিষ্ট উপজেলার হাটগুলোতে বিক্রির জন্য তোলা হচ্ছে। সেখান থেকে তা ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট জেলার গরু ব্যবসায়ীরা—এমন অভিযোগ রয়েছে। তবে বিজিবি-২২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ জামাল হোসেন জানিয়েছেন, নদীতে পানি বেড়ে গেছে বিধায় সীমান্তপথে ভারতীয় গরু চোরাচালান বেড়ে গেছে। তবে তা প্রতিরোধে বিজিবি তৎপর রয়েছে।

সাতক্ষীরার খামারি আব্দুর রশিদ জানিয়েছেন, বন্যার পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। এ অবস্থায় গরু রাখা ও গরুর খাবারের সংকট দেখা দিতে শুরু করেছে। করোনা পরিস্থিতিতে এ বছর বিক্রির অবস্থাও ভালো না। অন্যান্য বছর এই সময় অর্থাৎ কোরবানির আগেভাগেই খামার থেকে বেশিরভাগ গরু বিক্রি হয়ে যেতো, কিন্তু অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পরিস্থিতিটা ভিন্ন। এখনও গরুর বাজার কোথায় বসবে তা চূড়ান্ত করতে পারেনি কেউই। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আগের মতো এ বছর কোরবানির পশুর হাট বসানোর সুযোগ নাই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাট বসাতে হলে বিস্তর খোলা জায়গার প্রয়োজন হবে। কিন্তু সেই বিস্তর জায়গা নির্ধারণ করা নিয়ে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন। আবার খোলা স্থান পেলেই হবে না, সেখানে বেপারিদের থাকার সুযোগ দিতে হবে, খাবার সুযোগ থাকতে হবে, নিশ্চিত করতে হবে পশু বিক্রি করা নগদ অর্থ এবং খামারিদের নিরাপত্তা।

খামারিরা জানিয়েছেন, রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী এলাকার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার মাঠে গরুর হাট বসে। এ বছর সেভাবে বসতে পারছে না। রাজধানীসহ দেশের চারটি শহরে কোনও পশুর হাট না বসানোর সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কারিগরি কমিটি। গরুর হাটে ৫০-এর বেশি বয়সের মানুষের আগমন নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে একটি পশু থেকে আরেকটি পশু এমনভাবে রাখতে হবে যাতে ক্রেতারা কমপক্ষে ৩ ফুট বা ২ হাত দূরত্ব বজায় রেখে পশু কিনতে পারেন। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে রয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের সম্ভাবনা। সেখানে জরিমানার ভয়ও রয়েছে। এতসব মেনে এ বছর পালিত পশু বিক্রির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত খামারিরা।

সাতক্ষীরার খামারি গফুর হাওলাদার জানিয়েছেন, তারা অনলাইন বেচাকেনায় অভ্যস্ত নন। অনলাইনে যারা পশু বিক্রির সুযোগ নেবেন, তারাও কেউই খামারি নন। তারা মধ্য স্বত্বভোগী। এদের দৌরাত্ম্যে প্রকৃত খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। লাখ লাখ গরু বা ছাগল কি অনলাইনে বেচাকেনা সম্ভব? শহরের আধুনিক কিছু স্থানে হয়তো অনলাইনে বেচাকেনা সম্ভব হবে, বাকি স্থানে পশু বিক্রি করতে হবে আগের নিয়মে। আর সেই নিয়মে এবছর পশু বিক্রি করতে গেলে সৃষ্টি হবে নানা প্রকার বিপত্তি। কারণ, রাজধানীসহ দেশের চার জেলায় যদি আসলেই কোনও পশুর হাট না বসে তাহলে সেই পশুগুলোর ভাগ্যে কী ঘটবে তা কেউ জানে না। এ ধরনের এক অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন খামারি গফুর হাওলাদার।

এদিকে বাগেরহাটের একাধিক খামারি জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যবিধিতে আসলে কী আছে তাও তারা পুরো জানেন না। রাজধানীর হাটগুলোয় গরু এনে তা যদি বিক্রি করতে না পারে তাহলে সেগুলো কীভাবে ফিরিয়ে নেবেন তা নিয়েও চিন্তিত তারা। এর ওপর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানী বা চট্টগ্রামে গরু নিয়ে আসার সময় চাঁদাবাজি তো রয়েছেই। তারা বলছেন, সরকারের উদ্যোগের তো কোনও কমতি নাই। কিন্তু মাঠের চিত্র তো ভিন্ন। স্বচক্ষে বাজারের অবস্থা না দেখলে গরুর হাটের দুরবস্থা যে কাউকে বোঝানো খুবই কঠিন।

এ প্রসঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানিয়েছেন, গবাদিপশু বিপণন ও পরিবহন সমস্যা সমাধানে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে হটলাইন স্থাপন করা হবে। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক হটলাইনে সম্পৃক্ত হবেন। গবাদিপশুর বাজারগুলোতে প্রায় ১২০০ মেডিক্যাল টিম কাজ করবে, যাতে রুগ্ন গবাদিপশু বাজারে না আসতে পারে। এছাড়াও কোরবানির হাটে স্বাস্থ্যবিধি প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনোভাবেই একজন খামারি বা বিক্রেতা বা সংশ্লিষ্ট অন্য কেউ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে ব্যাপারে সরকার সতর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, রাজধানী ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উদ্যোগে কোরবানির পশু বিক্রির অনলাইন প্লাটফর্ম ‘ডিএনসিসি ডিজিটাল হাট’ উদ্বোধন করা হয়েছে। শনিবার (১১ জুলাই) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অনলাইন প্লাটফর্ম ডিএনসিসি ডিজিটাল হাট উদ্বোধন করা হয়। এটুআই ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই ই-হাটের কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

/এমআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসবে, আশা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসবে, আশা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য
স্লিপিং ট্যাবলেট খেলেও ভূতের ভয়ে সরকারের ঘুম আসে না: গয়েশ্বর
স্লিপিং ট্যাবলেট খেলেও ভূতের ভয়ে সরকারের ঘুম আসে না: গয়েশ্বর
অবন্তিকার আত্মহত্যা: প্রশাসনকে লালকার্ড দেখালেন শিক্ষার্থীরা
অবন্তিকার আত্মহত্যা: প্রশাসনকে লালকার্ড দেখালেন শিক্ষার্থীরা
সর্বাধিক পঠিত
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সাকিবকে আমার বাসায় নিয়ে আসেন: মেজর হাফিজ
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সাকিবকে আমার বাসায় নিয়ে আসেন: মেজর হাফিজ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
‘বিএনএমের সদস্য’ সাকিব আ.লীগের এমপি: যা বললেন ওবায়দুল কাদের
‘বিএনএমের সদস্য’ সাকিব আ.লীগের এমপি: যা বললেন ওবায়দুল কাদের
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার