X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১
সাক্ষাৎকারে আইনমন্ত্রী

হাইকোর্টে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা শুনতে না চাওয়া ছিল বিচার বিভাগের দৈন্যতা

বাহাউদ্দিন ইমরান
১৫ আগস্ট ২০২০, ১০:০০আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২০, ১০:১১


আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)
‘দেশে আইনের শাসন থাকলে যেকোনও হত্যার বিচার হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে যে দেশ প্রমাণ করতে চায় তারা আইনের শাসনে বিশ্বাস করে না, সেই দেশের শাসকরা এমন আইন করেন যাতে কোনও হত্যাকাণ্ডের বিচার না হয়। দুঃখজনক হলেও বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার পরিবারের ১৭ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই এর বিচার হওয়া উচিত। অথচ তৎকালীন শাসকদের কিছু ছিলেন খুনি। তারা একটি আইন (ইনডেমনিটি অর্ডার) করলেন যে, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে পারবে না। এমনকি তখনকার অবৈধ সরকারের পরেও যারা ক্ষমতা দখল করে সরকার গঠন করেছে বা নির্বাচিত সরকার গঠন করেছে তারাও এই বিচার করেনি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আসতে হয়েছে, তারপর এই মামলা শুরু করতে হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে যেকোনও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হয়ে থাকে। কিন্তু সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জিয়াউর রহমান এবং হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে সেই মামলা করার স্বাভাবিক নিয়মেরও ব্যত্যয় ঘটেছে। তাই ১৯৯৬ সালের জুন মাসে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২ অক্টোবর এই মামলার এফআইআর হয়। তখন থেকেই আমাদের এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হয়। এরপর মামলার তদন্ত শেষে ১৯৯৭ সালের ১৩ জানুয়ারি অভিযোগপত্র দাখিল হয়। এরপর একই বছর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচার শুরু হয়’— বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার শুরুর প্রেক্ষাপট সম্পর্কে এমনটাই বলছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তার এ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলা ট্রিবিউনের স্টাফ রিপোর্টার বাহাউদ্দিন ইমরান।















বাংলা ট্রিবিউন: বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা পরিচালনায় আপনার বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক এবং আপনার সংযুক্তি ঘটে কীভাবে?

আনিসুল হক: আমার পিতা একজন প্রথিতযশা আইনজীবী ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর কর্মী, এমনকি তার বন্ধুও ছিলেন। পাকিস্তান আমলে বিভিন্ন আন্দোলনের কারণে করা মামলায় বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে যেতেন তখন সেসব মামলাও আমার বাবা পরিচালনা করতেন। সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করলেন আমার পিতা এই মামলার পরিচালনার যোগ্য। আমি তখন থেকে শেষ পর্যন্ত এই মামলা পরিচালনায় বাবাকে সহযোগিতায় দায়িত্বপ্রাপ্ত হই। আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

বাংলা ট্রিবিউন: দীর্ঘদিন পর বিচার শুরু হওয়ায় মামলার তথ্য-উপাত্ত, সাক্ষী সংগ্রহ কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?

আনিসুল হক: মামলা তদন্তের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটি তখন সিআইডিকে দিয়ে করানো হয়েছিল। ২১ বছর পর মামলা শুরু হওয়ায় অনেক সাক্ষ্য-প্রমাণ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ায় রেকর্ড দেখে তাদের জোগাড় করে, তাদের সঙ্গে কথা বলে এই মামলার বিষয়বস্তু, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। সে সময় এই তদন্তের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিল তাদের প্রত্যেককে এজন্য ধন্যবাদ জানাবো। কেননা, অত্যন্ত অল্প সময়ে তারা আমাদের একটি সুষ্ঠু তদন্ত উপহার দিয়েছিলেন।

বাংলা ট্রিবিউন: মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে হত্যাকাণ্ডের পেছনে কি কি কারণ খুঁজে পেলেন?

আনিসুল হক: বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও তার স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নকে ধ্বংস করে দেওয়া, বঙ্গবন্ধু কেন এই দেশকে স্বাধীন করতে পারলেন— এমন সব বিষয়ে কিছু মানুষের প্রতিহিংসা, আক্রোশ এবং উচ্চাভিলাষী চিন্তার কারণেই তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল।

বাংলা ট্রিবিউন: মামলা পরিচালনায় প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কী ছিল?

আনিসুল হক: যারা মামলাটির তদন্ত করছিলেন তারা প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার লোককে জিজ্ঞাসাবাদ করে ৬১ জন সাক্ষীকে বের করেছিলেন। কেননা, তখন একই নামে একাধিক ব্যক্তি থাকায় এই প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। তাই ঘটনার ২১ বছর পর মাত্র ৩ মাসে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করাটাই বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল। আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

বাংলা ট্রিবিউন: মামলাটি পরিচালনায় বিশেষ কোনও স্মৃতি মনে পড়ে কিনা?

আনিসুল হক: বিচারিক আদালত থেকে আপিল বিভাগ পর্যন্ত এই মামলায় যেসব লিগ্যাল ইস্যু উঠে এসেছে এবং প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেসব লিগ্যাল ইস্যু এই ভারত উপমহাদেশসহ যেসব দেশের সঙ্গে আমাদের আইনের মিল রয়েছে, সেসব দেশেও এ মামলাটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

বাংলা ট্রিবিউন: হত্যাকাণ্ডের মামলাটি পরিচালনা করতে গিয়ে কোন বিষয়টি এখনও আপনার জন্য পীড়াদায়ক হয়ে আছে?

আনিসুল হক: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার যে ২১ বছর বন্ধ ছিল- এই দুঃখ, এই কলঙ্ক বাংলাদেশে মোছা যাবে না। আরেকটি হচ্ছে, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ হওয়ার পরও যেন রায় কার্যকর না হয়, সেজন্য খালেদা জিয়া ২০০১ সালে সরকার গঠন করা থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মামলার বিচার বন্ধ রেখেছিল।

বাংলা ট্রিবিউন: এই মামলা শুনতে হাইকোর্টের কয়েকজন বিচারপতির অপারগতা প্রকাশের কারণ কী ছিল?

আনিসুল হক: ওনারা কোনও কারণ দেননি। তবে আমি মনে করি, এটি আমাদের বিচার বিভাগের জন্য লজ্জার অধ্যায়। যখনই এই কথাটি উঠবে তখনই আমাদের বিচার বিভাগের একসময়ের দৈন্য প্রকাশ পাবে। প্রতিবেদকের সঙ্গে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

বাংলা ট্রিবিউন: মামলার চূড়ান্ত রায়ের পর আইনজীবী হিসেবে আপনার তখনকার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?

আনিসুল হক: জাতি বিচার পেয়েছে, কিন্তু কলঙ্কমুক্ত হয়নি- এটাই ছিল আমার সেদিনের প্রতিক্রিয়া।

বাংলা ট্রিবিউন: এই মামলায় বিদেশে অবস্থানকারী দণ্ডপ্রাপ্তদের রায় কার্যকরে আর কত অপেক্ষা?

আনিসুল হক: আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যাদের অবস্থান সম্পর্কে জানি, তাদের বিষয়ে আলোচনা করছি। আর যাদের অবস্থান জানি না, তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। যতদিন সম্পূর্ণ রায়টি কার্যকর না হবে, ততদিন এই প্রচেষ্টা চলবে।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনাকে ধন্যবাদ।

আনিসুল হক: বাংলা ট্রিবিউনকেও ধন্যবাদ।




ছবি: নাসিরুল ইসলাম।

/এমআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রেলক্রসিংয়ে রিকশায় ট্রেনের ধাক্কা, বাবার মৃত্যু মেয়ে হাসপাতালে
রেলক্রসিংয়ে রিকশায় ট্রেনের ধাক্কা, বাবার মৃত্যু মেয়ে হাসপাতালে
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পুরস্কার পেলেন কুবির চার শিক্ষার্থী
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পুরস্কার পেলেন কুবির চার শিক্ষার্থী
গরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৪)
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন