X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিজ বোমা হামলা: ৪৭ মামলার বিচার নিষ্পত্তি হয়নি ১৫ বছরেও

জামাল উদ্দিন
১৭ আগস্ট ২০২০, ০৯:০০আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২০, ১১:১০

আদালত

জামা’তুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গিরা এই দিনে (১৭ আগস্ট) সারাদেশে নজিরবিহীন কাণ্ড ঘটিয়েছিল ২০০৫ সালে। সেদিন স্তম্ভিত হয়ে যায় গোটা দেশের মানুষ। শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুর রহমানের (বাংলা ভাই) নেতৃত্বাধীন জেএমবি দেশের ৬৩ জেলার প্রায় ৫শ’ স্পটে একই সময়ে সিরিজ বোমা হামলার মাধ্যমে নিজেদের সরব উপস্থিতি ও সক্ষমতার জানান দিয়েছিল সেদিন। জেএমবি’র এই সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় ওইদিন দু’জন নিহত ও শতাধিক লোক আহত হয়েছিলেন। এসব বোমা হামলার ঘটনায় সারাদেশে ১৫৯টি মামলা হয়েছিল। গত ১৫ বছরে এখনও ৪৭টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জেএমবি’র সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারাদেশে মামলা হয়েছিল ১৫৯টি। তদন্ত শেষে ১৬টি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) দেওয়া হয়। আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে ১৪৩টি মামলার। এরমধ্যে নিম্ন আদালতে ৯৬টি মামলার বিচার কাজ শেষ হয়েছে। বিচারাধীন আছে আরও ৪৭টি মামলার কার্যক্রম। এসব মামলায় এজাহারে নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছিল ২৪২ জনকে। আর অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছিল এক হাজার ১২১ জনকে। এরমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছিল ৯৮৮ জনকে।

দীর্ঘ ১৫ বছরেও ৪৭টি মামলা কেন নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়নি জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঢাকার আদালতে ১৭টি মামলা ছিল। এরমধ্যে কয়েকটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন ও কয়েকটির বিচার শেষ করে আসামিদের সাজা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পাঁচটি মামলা বিচারাধীন আছে। সেগুলোও সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।’ মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সাক্ষীদের অনুপস্থিতিই মূল কারণ। অনেক ক্ষেত্রে সাক্ষীদের পাওয়া যায়নি। সাক্ষীদের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। পুলিশও চেষ্টা করছে সাক্ষীদের খুঁজে বের করতে। চাঞ্চল্যকর এসব মামলা চাইলেই তো শেষ করে দেওয়া যায় না। তারপরও সাক্ষী যা হয়েছে, বা আরও কয়েকটা সাক্ষী নিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করে বিচার কাজ শেষ করার চিন্তাভাবনা আছে।’

জঙ্গি দমনে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, ১৫ বছর আগের এই ঘটনায় দেশে-বিদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করলেও ওই সময়ে চারদলীয় জোট সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী বলেছিলেন, দেশে জঙ্গিবাদ মিডিয়ার সৃষ্টি। কয়েক বছর পর জঙ্গিবাদ ব্যাপকভাবে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তবে জঙ্গিদের পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করা না গেলেও তাদের আগের সেই নেটওয়ার্ক কিংবা সক্ষমতা এখন আর নাই। বিগত বছরগুলোতে জেএমবি, নব্য জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ (এবিটি) বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের নেটওয়ার্ক ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময় তারা সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করলেও পুলিশের সতর্কতার কারণে তাদের সেসব প্রচেষ্টাও সফল হয়নি। ১৯৯৮ সালে আল কায়েদার অনুসরণে জেএমবি যাত্রা শুরু করেছিল। কিন্তু ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ রাতে শীর্ষ দুই নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাইয়ের ফাঁসির মধ্যদিয়ে জেএমবি’র প্রথম অধ্যায়ের সমাপ্তি হয়েছিল। পরে জেএমবি’র আমিরের দায়িত্ব পান হবিগঞ্জের সাইদুর রহমান। ২০১০ সালে তাকে গ্রেফতার করা হলেও তিনি এখনও পুরনো জেএমবি’র আমির হিসেবে বহাল রয়েছেন। পরে জেএমবি দু’ভাগ হয়ে একটি গ্রুপ নব্য জেএমবি নামে আবির্ভূত হয়। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজানে সেই নব্য জেএমবি’র সদস্যরাই হামলা চালিয়েছিল বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজারে বোমা হামলার পরিকল্পনা নিয়েছিল নব্য জেএমবি’র সদস্যরা। ওই ঘটনায় মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) সিলেট থেকে পাঁচ জঙ্গিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের গ্রেফতারের পর জঙ্গিদের নতুনভাবে হামলার কৌশল ও পরিকল্পনার বিষয়টিও জানতে পারেন গোয়েন্দারা। তারা পুলিশকে জানায়, আগের মতো সংঘবদ্ধভাবে না করে লোন উলফ বা এককভাবে হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। এ বিষয়ে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘জঙ্গিরা চেষ্টা করে নিত্য নতুন কৌশল নিতে। কিন্তু আগের মতো সেই সক্ষমতা নেই তাদের।’

দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ বিভাগের এআইজি মো. সোহেল রানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুলিশ ১৭ আগস্টের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলোর তদন্ত শেষ করেছে যথাযথভাবে। সেই অনুযায়ী আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। দেশকে জঙ্গিবাদের হাত থেকে মুক্ত রাখতে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট। ফলে বর্তমানে জঙ্গি ও সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তারপরও এ বিষয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবসময়ের জন্য সতর্ক থাকার এবং সামাজিকভাবে মানুষের সচেতনতারও কোনও বিকল্প নেই।

জঙ্গি দমনে কাজ করেন এমন পুলিশ কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সাল থেকে জুলাই (২০২০) পর্যন্ত দেশে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ৮৩টি অভিযান চালানো হয়েছে। তবে এর বাইরেও বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে জঙ্গি সদস্যদের গ্রেফতার করা হচ্ছে এবং অভিযান চলমান রয়েছে। এসব অভিযানে ৯৪টি মামলা হয়েছে। চার্জশিট দেওয়া হয়েছে ৬৬টি মামলার। ৯৪টি মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি করা হয় ৪৯৩ জনকে। ৮৩টি অভিযানে দেশি-বিদেশি পিস্তল ও রিভলবার উদ্ধার করা হয় ৬২টি। শর্ট মেশিন গান (এসএমজি) উদ্ধার করা হয় পাঁচটি। পিস্তল, রিভলবার ও এসএমজির ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয় ৬২টি। গুলি উদ্ধার করা হয়েছে ৫৭১ রাউন্ড। বোমা উদ্ধার করা হয়েছে ৭৫টি। দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে ১০৯টি। আর গুলশানে ২০১৬ সালে হলি আর্টিজানে হামলার পর জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বড় অভিযানগুলো শেষে ২৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল।

/এপিএইচ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হজ এজেন্সিগুলোর কথার সঙ্গে কাজের কোনও মিল নেই: ধর্মমন্ত্রী
হজ এজেন্সিগুলোর কথার সঙ্গে কাজের কোনও মিল নেই: ধর্মমন্ত্রী
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
টিভিতে আজকের খেলা (২ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২ মে, ২০২৪)
ঘরের মাঠে পিএসজিকে হারিয়ে এগিয়ে থাকলো ডর্টমুন্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালঘরের মাঠে পিএসজিকে হারিয়ে এগিয়ে থাকলো ডর্টমুন্ড
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!