X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

কেবল অবহেলা করেই তীব্র করোনা ঝুঁকিতে তরুণরা

জাকিয়া আহমেদ
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৪:০০আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৮:৪৪

করোনা টেস্ট

করোনাতে বয়স্ক এবং যারা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত অর্থাৎ কো-মরবিড তাদেরকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হলেও তরুণরাও এর বাইরে নয়। তরুণরা নিজেরা যেমন ঝুঁকিতে রয়েছে, তেমনি তাদের মাধ্যমে পরিবারের অন্যদেরও সংক্রমিত হবার আশঙ্কা থাকে। তাই তাদেরকেই বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। একইসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তরুণদের ভাবনা হচ্ছে তারা নিজেরা সারভাইব করে যাবে।

গতকাল সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়াদের মধ্যে ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে রয়েছেন দুইজন। আবার এ পর্যন্ত মোট মারা যাওয়াদের মধ্যে ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে রয়েছেন ১০৯ জন, যা শতকরা হিসাবে দুই দশমিক ২৯। আর ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে রয়েছেন ২৮৪ জন, যা পাঁচ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

করোনাভাইরাসের শুরুর দিক থেকে এখন পর্যন্ত বয়স্করাই এতে বেশি কাবু হচ্ছে বলে মনে করা হলেও যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের নিয়ে করা প্রাথমিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে তরুণরাও করোনাতে আক্রান্ত হচ্ছেন। আর তার কারণ করোনাভাইরাস নিয়ে তাদের অসচেতনতা এবং করোনাকে ‘পাত্তা’ না দেওয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) করা এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তরুণদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি যতটুকু মনে করা হচ্ছিল তা তার চেয়ে বেশি হতে পারে।

এদিকে, তরুণদের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে  বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ৬০ বছরের কম বয়সী এবং অপেক্ষাকৃত স্বাস্থ্যবান রোগীরা কেন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মারা যাচ্ছে তা আরও ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।

ডব্লিউএইচও’র বিশেষজ্ঞ ডা. মারিয়া ভ্যান কেরকোভ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই মুহূর্তেও অনেক কিছুই অজানা। সামগ্রিকভাবে যারা মারা গেছেন তারা মারাত্মক রোগে ভুগছিলেন এবং আইসিইউতে বয়স্কদের মৃত্যু হচ্ছিল। কিন্তু কয়েকটি দেশে আমরা দেখতে পেয়েছি ৩০/৪০ বা ৫০ এর কোঠায় থাকা ব্যক্তিরাও আইসিইউতে মারা গেছেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি আরও বেশি তরুণ, যারা মারাত্মক রোগে আক্রান্ত না হয়েও মারা যাচ্ছেন।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, কোরিয়ায় করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া প্রতি ছয় জনের মধ্যে এক জনের বয়স ৬০ বছরের নিচে। ইতালিতে আইসিইউতে মারা যাওয়া ১০ থেকে ১৫ শতাংশ রোগীর বয়স ৫০ বছরের নিচে।

আর ২১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে রোগী ‘ভালোই পাওয়া যাচ্ছে’ মন্তব্য করে সিলেটের একমাত্র করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল শহীদ শামসুদ্দীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. আলিম আল রাজি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এমনকি আইসিইউতেও এ বয়সের রোগী পাচ্ছি আমরা।

ডা. আলিম আর রাজি বলেন, তরুণদের মধ্যে আমার পরিচিত অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন, হাসপাতালে ভর্তি হবার হার খুব বেশি না হলেও সেটা ফেলে দেবার মতো নয়। এর কারণ তরুণরদের অবহেলা। তারা যেভাবে উদাসীন আচরণ করছে, যতটা গুরুত্বহীন ভাবছে ততটা হওয়া উচিত নয়। ইতোমধ্যে হাসপাতালে কিন্তু উল্লেখযোগ্য পরিমাণ এই কম বয়সী রোগী ভর্তি থাকছেন।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) প্রধান অধ্যাপক ডা. শাহজাদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ২১ থেকে আইসিইউতে তেমন রোগী পাচ্ছি না, কিন্তু অ্যারাউন্ড ৪০ আমরা অনেক রোগী পাচ্ছি, যেটা আগে পেতাম না। এমনকি ৩৫ থেকে ৪৫−এই বয়সের রোগী অনেক বেশি আছে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন পর্যায়ে যতদিন থাকবে ততদিন সবার ঝুঁকি থাকবে। দরকার হচ্ছে বাসায় থাকা, কিন্তু সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না কোনোভাবেই। আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টিনের বিকল্প এখনও কিছু তৈরি হয়নি−এটা সবার মনে রাখা উচিত। কারণ, করোনাভাইরাস আপনা-আপনি চলে যাবে না, এর জন্য সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে।’

করোনাকে তরুণরা কোনোভাবেই আমলে নিচ্ছে না মন্তব্য করে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শুরুর দিকে করোনা নিয়ে সবার মতো তরুণদের ভীতি কাজ করলেও এখন আর সেটা নেই।

তারা এখন আর স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না, হাতিরঝিলে আড্ডায় বড় অংশটাই তরুণরা। তারা নিজেরা আক্রান্ত হচ্ছে একইসঙ্গে পরিবারকে সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলছে।

তরুণদের ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা বেশি, তারা কোনোকিছুকেই পাত্তা দেয় না মন্তব্য করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক অ্যধাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, খুব কম তরুণের মুখে সঠিকভাবে মাস্ক দেখতে পাই। সন্ধ্যার পর রাস্তায় চায়ের দোকানে ভিড় লেগে যায়। অথচ তারা যেমন নিজেরা ঝুঁকিতে পড়ছে, তেমনি তাদের মাধ্যমে পরিবারের অন্যরাও ঝুঁকিতে পড়ছে।

এদিকে ঢাকা মেডিক্যাল  কলেজ হাসপাতালের গত ১৩ সেপ্টেম্বরের হিসাব অনুযায়ী সকাল আটটা থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল আটটা পর্যন্ত মোট রোগী ভর্তি হয় ৭৫ জন। এর মধ্যে ৩০ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ছিলেন ১৮ জন। ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৩৯ জন, এর মধ্যে ৩০ থেকে ৪৫ বছর বয়সী রয়েছেন ছয় জন।

/এফএএন/আপ-এনএস/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে কোনও অগ্রগতি হয়নি: ট্রাম্প
পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে কোনও অগ্রগতি হয়নি: ট্রাম্প
আ.লীগ নেতার বাড়িতে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ সদস্য আটক
আ.লীগ নেতার বাড়িতে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ সদস্য আটক
হিজরি সনের সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক গভীর যে কারণে
হিজরি সনের সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক গভীর যে কারণে
চকরিয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, নিহত ২
চকরিয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, নিহত ২
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল