কেউ টানা চার দিন, কেউবা পাঁচ দিন ধরে অপেক্ষায় ছিলেন কখন হাতে পাবেন সৌদিগামী ফ্লাইটের টিকিট। অবশেষে হাতে টিকিট পেয়ে সবার মুখে হাসি । তবে এই হাসি ক্ষণিকের। কারণ, করোনাভাইরাসের পরীক্ষার বিষয়টি দুশ্চিন্তায় ফেলেছে তাদের। সে কারণে কাঙ্ক্ষিত টিকিট পাওয়ার আনন্দটুকু মুহূর্তে ম্লান হয়ে যায় তাদের।
সৌদি আরবের নিয়ম অনুযায়ী দেশটিতে পৌঁছানোর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকতে হবে যাত্রীদের। বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) কমপক্ষে ১৫ জন প্রবাসী নমুনা দিতে গিয়েও মহাখালীর করোনা সেন্টার থেকে ফিরে এসেছেন। অথচ, শুক্রবার বিকালের মধ্যে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকতে হবে তাদের।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স (সাউদিয়া)-এর রিটার্ন টিকিট নিয়ে যারা ছুটিতে দেশে এসেছিলেন,বৃহস্পতিবার তাদের টিকিট রি-ইস্যু করা হয়েছে। নতুন করে কোনও টিকিট বিক্রি করছে না এই দুই এয়ারলাইন্স। টিকিট রি-ইস্যু করতে কোনও অতিরিক্ত ফি’ও নিচ্ছে না এয়ারলাইন্স দুটি।
কাওরান বাজারে সাউদিয়ার অফিসে টিকিটের জন্য অনেক প্রবাসীকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। টিকিট প্রত্যাশীদের টোকেন নম্বর অনুসারে সিরিয়ালি টিকিট বিতরণ করেছে এয়ারলাইন্সটি। এক থেকে ৫০০ নম্বর টোকেনধারীদের বৃহস্পতিবার টিকিট দেওয়া হয়। ৫০১ থেকে ৮৫০ নম্বর টোকেনধারীদের ২৫ সেপ্টেম্বর, ৮৫১ থেকে ১২০০ নম্বর টোকেনধারীদের ২৬ সেপ্টেম্বর, ১২০১ থেকে ১৫০০ নম্বর টোকেনধারীদের ২৭ সেপ্টেম্বর সৌদি অ্যারাবিয়ার টিকিট দেওয়া হবে।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর টিকিট পেয়ে খুশি প্রবাসীরা। তাদের দাবি— সাউদিয়া আরও বেশি কাউন্টার চালু করলে কম সময়ে অনেক বেশি মানুষ টিকিট পাবেন। একইসঙ্গে ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ালে অনেকেই সঠিক সময়ে কাজে ফিরতে পারবেন।
চার দিন ধরে সাউদিয়ার অফিসের আশেপাশে অবস্থান করছিলেন খোরশেদ আলম। বৃহস্পতিবার দুপুরে তার টিকিট রি-ইস্যু করে দেয় সাউদিয়া। তবে চার দিনের ধকলে ক্লান্ত তিনি। খোরেশেদ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আট মাস আগে ছুটিতে দেশে আসি। করোনার কারণে আটকে গেছি। আবার ভিসার মেয়াদও শেষ হবে ৩০ সেপ্টেম্বর। আজকে টিকিট পাওয়ায় বিপদমুক্ত হলাম।’ রিটার্ন টিকিট বিজনেস ক্লাসের হলেও সিট না থাকায় তাকে ইকোনমিক ক্লাসের টিকিট দেওয়া হলেও আপত্তি করেননি খোরশেদ।
কলা আর রুটি খেয়ে পাঁচ দিন কেটেছে রেজাউল করিমের। তারপরও অপেক্ষা করেছেন টিকিটের জন্য। অবশেষে টিকিট হাতে পেয়ে স্বস্তি এসেছে তার । ২৬ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা ৩০ মিনিটে তার ফ্লাইট। কাওরান বাজার থেকে দ্রুত মহাখালীর দিকে ছুটলেন তিনি।
আরিফুর রহমান ও তার বাবা দুজনেই সৌদি আরবে থাকেন। বাবা ও ছেলে একসঙ্গে রিটার্ন টিকিট রি-ইস্যু করাতে পেরেছেন। দুজনের ফ্লাইট ২৬ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা ৩০ মিনিটে। বিকাল তিনটার দিকে টিকিট পাওয়ার পর ছুটে যান মহাখালীতে করোনার পরীক্ষার জন্য। কিন্তু সেখানে গিয়ে তাদের খুশির জোয়ারে মুহূর্তেই ভাটা নেমে এলো। করোনা পরীক্ষার নমুনা দিতে পারেননি তারা। শুক্রবার সকালে তাদেরকে আবারও নমুনা দেওয়ার জন্য মহাখালীতে যেতে হবে।
আরিফুর রহমান বলেন, ‘সকালে টেস্ট করতে যেতে বলেছে। কিন্তু আমাদের তো বিকালেই বিমানবন্দরে গিয়ে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে, কারণ রাতে ফ্লাইট যাবে। শুক্রবার দুপুরের মধ্যে রিপোর্ট না পেলে আমাদের কী হবে।’
একই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ১৫ জন সৌদি প্রবাসী। দুপুরে টিকিট নিয়ে তারা মহাখালী গিয়ে দেখেন— নমুনা সংগ্রহ বন্ধ। একই পরিস্থিতিতে পড়েছেন এখলাস রানা। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের সকালে যেতে বলেছে। কিন্তু ফ্লাইটের আগে রিপোর্ট না পেলে তো বিপদ।’
এদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তারিখ অনুসারে যাত্রীদের টিকিট রি-ইস্যু করছে। করোনাভাইরাসের কারণে ১৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি আরবের আকাশপথের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ১৬ মার্চ থেকে ক্রমান্বয়ে বাতিল হওয়া ফ্লাইটগুলোর টিকিট রি-ইস্যু করছে বিমান।
তবে দাম্মাম ও মদিনা রুটের যাত্রীদের এখনই টিকিট রি-ইস্যু করছে না বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাব্বির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা রিয়াদ ও জেদ্দায় ফ্লাইটের অনুমতি পেয়েছি। তাই এ রুটের যাত্রীদের টিকিট রি-ইস্যু করা হচ্ছে। দাম্মাম ও মদিনার অনুমোদন পেলে সেই রুট গুলোতেও ফ্লাইট চলবে। নতুন ফ্লাইটের অনুমোদন সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে অন্য যাত্রীদেরও বুকিংয়ের শুরু হবে।’
২৬ সেপ্টেম্বর বিমানের ফ্লাইটে ২৬০ জনকে জেদ্দায় এবং ৪১৯ জনকে ২৭ সেপ্টেম্বর রিয়াদে নিয়ে যাওয়া হবে। বিমান আরও দুটি ফ্লাইটের অনুমোদন পেয়েছে। বিমানের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ১৮-২০ মার্চের জেদ্দা এবং ১৮ ও ১৯ মার্চের রিয়াদগামী বিমানের রিটার্ন টিকিটধারী যাত্রীদের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা-রিয়াদ ও ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকা-জেদ্দা ফ্লাইট পরিচালনা করবে। এ জন্য যাত্রীদর ২৫-২৬ সেপ্টেম্বর যোগাযোগ করতে হবে বিমানের বুকিং কাউন্টারে।
টিকিট হাতে পাওয়ার পর কেউ আনন্দের, আবার পাশাপাশি কষ্টের গল্পও কারও কারও মুখে। শাফায়েত হোসেনসহ আরও তিন জন সৌদি আরবে অবস্থিত নোয়াখালী ট্রাভেল এজেন্সি থেকে রিটার্ন টিকিট কেটে বাংলাদেশে এসেছেন। ১৭ মার্চ সৌদি ফিরে যাওয়ার কথা থাকলেও যেতে পারেননি করোনার কারণে ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায়। ৩-৪ দিনের অপেক্ষার পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সিরিয়াল পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকালে যখন কাউন্টারে গেলেন, জানতে পারলেন এজেন্সি তাদের টিকিট রিফান্ড করে টাকা উঠিয়ে ফেলেছে। শাফায়েত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন কী করবো আমি, বুঝতে পারছি না। টাকাও নাই আমার কাছে। আর টাকা থাকলেও তো হবে না, এয়ারলাইন্সগুলো তো নতুন টিকিট বিক্রি করছে না ‘
ছবি: চৌধুরী আকবর হোসেন