X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৮ বৈশাখ ১৪৩১

অনলাইনে নেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হদিস

হিটলার এ. হালিম
১৪ ডিসেম্বর ২০২০, ১৩:০০আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২০, ১৩:২২

ছবিটি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর জন্মদিনে (২৭ নভেম্বর) সার্চ জায়ান্ট গুগল ডুডল প্রকাশ করে। সেখানে গুগলের লোগোর মাঝখানে শহীদ মুনীর চৌধুরীকে দেখা যায় খোলা বই হাতে, তার গায়ে শাল জড়ানো, চোখে মোটা কালো ফ্রেমের চশমা। ডুডল প্রকাশ উপলক্ষে গুগলের লোগোও বিশেষভাবে তৈরি করা হয়। ছবির ওপরে ক্লিক করলে মুনীর চৌধুরীর ছবিসহ তার বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। তবে মুক্তিযুদ্ধে দেশের শহীদ বুদ্ধিজীবীকে নিয়ে প্রযুক্তি দুনিয়ায় বা ডিজিটাল ফরম্যাটে এমন উপস্থাপনা খুবই কম। ইন্টারনেট ঘেঁটে উইকিপিডিয়ায় হাতে গোনা কয়েকজন ও বাংলাপিডিয়ায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ছবি, জীবনীসহ সংক্ষিপ্ত কিছু তথ্য পাওয়া গেলেও অন্যান্য মাধ্যমে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। ভার্চুয়াল বাংলাদেশ ডট কম নামের একটি সাইটে যেটুকু তথ্য পাওয়া গেলো, তাও সেই উইকিপিডিয়া থেকে ধার করা।

উইকিপিডিয়া বলছে, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে প্রকাশিত বুদ্ধিজীবী দিবসের সংকলন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও আন্তর্জাতিক নিউজ ম্যাগাজিন ‘নিউজ উইক’-এর সাংবাদিক নিকোলাস টমালিনের লেখা থেকে জানা যায়, বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা এক হাজার ৭০ জন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে পৃথকভাবে ওয়েবসাইট তৈরি, ডিজিটাল আর্কাইভ নির্মাণ, অ্যাপস তৈরি করা যেতে পারে। এই প্রজন্ম বা আগামী প্রজন্ম সেসব জানতে পারবে। বই পড়ে, বিশেষ দিবসের খবরের কাগজ ও গণমাধ্যমের বিশেষ আয়োজন দেখেই যতটুকু জানা ও বোঝা যায়। এই বাইরে ডিজিটাল ফরম্যাটে তাদের ‍উপস্থাপন করা হলে দীর্ঘমেয়াদে তা সংরক্ষিত থাকবে। সবার কাছে পৌঁছানো যাবে আরও সহজে।

দেশের তথ্যপ্রযুক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রেনিউর ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা আরিফ নিজামী বলেন, ‘চ্যাটবট বা ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট তৈরি করা যেতে পারে। যে অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্যবহারকারীদের সঙ্গে কথা বলবে শহীদ বুদিজীবীদের নিয়ে, ইতিহাস নিয়ে। হতে পারে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে ওয়েবসাইট। ওই ওয়েবসাইটেই থাকবে চ্যাটবট বা ভিন্ন মাধ্যমেও থাকতে পারে। প্রশ্নকারী চ্যাটবটের কাছে প্রশ্ন করলে সে চটপট উত্তর দেবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিউআর (কুইক রেসপন্স) কোডভিত্তিক পোস্টার করা যেতে পারে। কোড স্ক্যান করলে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সব তথ্য পাওয়া যাবে। সবাই উৎসাহিত হবে দেখতে। ওয়েব সিরিজ তৈরি করা যেতে পারে। হতে পারে কুইজ প্রতিযোগিতা। কিংবা অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর) ভিত্তিক বইও তৈরি করা যেতে পারে। বই হবে টেক্সট ও ছবিভিত্তিক। সেই ছবির ওপরে মোবাইল ফোন বা অন্যকোনও ডিভাইস ধরলে ওই ছবি জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠবে ব্যবহারকারীর স্মার্ট ডিভাইসের পর্দায়।’ তিনি জানান, দেশের সূর্য সন্তানদের জন্য সরকার পৃথক কোনও অ্যাপও তৈরি করতে পারে। সেই অ্যাপে থাকবে সব ধরনের তথ্য।

দেশীয় অ্যাপস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এমসিসি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী এসএম আশ্রাফ আবীর জানালেন, ইউটিউবে তারা ‘বাংলার বীর’ নামে সম্প্রতি একটি চ্যানেল খুলেছেন। ওই চ্যানেলে ’৭১ -এর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ডকুমেন্টারি তৈরি করে প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন। ফরম্যাটটি হলো— মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে শোনা যাবে তাঁদের বীরত্বগাঁথা।’ আশ্রাফ আবীর বললেন, ‘১৯৭১ সালের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আমরা এই প্ল্যাটফর্মে উপস্থাপন করতে চাই। যেহেতু ফরম্যাটটি ভিন্ন, তাই হয়তো অন্য ধরনের পরিকল্পনা করে যথাযোগ্য মর্যাদায় তাঁদের জীবন ও কর্মকে তুলে ধরা হবে। সামাজিক মাধ্যম বা ভিডিও পোর্টালে তুলে ধরলে তা বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়, কোনও বাউন্ডারি না থাকায় দেশ-বিদেশ সব জায়গা থেকে তা অ্যাকসেস করা সম্ভব।’

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ৯টি সিরিজে ১৫২টি ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে। প্রতিটি ডাকটিকিটে শহীদ বুদ্ধজীবীর প্রতিকৃতি ও নাম (বাংলা ও ইংরেজিতে) শোভা পাচ্ছে। প্রতিটি ডাকটিকিটের দাম ২ টাকা। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ডাকটিকিটগুলো একে একে প্রকাশিত হয় বলে জানা গেছে। ১৯৯১ সালে ডাকটিকিট প্রকাশিত হয় ৩০ জন বুদ্ধিজীবীর ওপর। পরে ১৯৯৩ সালে ১০ জন, ১৯৯৪ সালে ১৬ জন, ১৯৯৫ সালে ১৬ জন, ১৯৯৬ সালে ১৬ জন, ১৯৯৭ সালে ১৬ জন, ১৯৯৮ সালে ১৬ জন, ১৯৯৯ সালে ১৬ জন এবং নবম স্লটে ২০০০ সালে ১৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয় ১৬ জনের ওপর ডাকটিকিট। এই সিরিজগুলো শহীদ বুদ্ধিজীবী সিরিজ নামে সুপরিচিত।

এই ডাকটিকিটগুলোও ম্যানুয়াল ফরম্যাটে রয়েছে। ঠাঁই পেয়েছে বইয়ে কী প্রদর্শনীর দেয়ালে। কিন্তু এগুলোও ডিজিটাল ফরম্যাটে সংরক্ষণ করে সবার কাছে পৌঁছানো সম্ভব। এ বিষয়ে বিখ্যাত ডাকটিকিট সংগ্রাহক বাংলাদেশ ফিলাটেলিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. শরিফুল আলম বলেন, ‘দেশের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলো কারও কারও কাছে সংরক্ষিত আছে। প্রদর্শনীতে দেখানোও হয়। কিন্তু এগুলো ডিজিটাল ফরম্যাটে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে এর জন্য ওয়েবসাইট নির্মাণ, অ্যাপস তৈরি বা আরও যেসব মাধ্যম আছে সেসবেও তুলে ধরা যেতে পারে। কিন্তু কাজটা করবে কে?’, প্রশ্ন করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, ‘কেউ একজনকে উদ্যোগ নিতে হবে। হতে পারে মন্ত্রিপরিষদ, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সন্তানরা, এমনকি ডাক বিভাগও উদ্যোগ নিতে পারে। উদ্যোগ নেওয়া হলে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে প্রকাশিত ডাকটিকিট, জীবনী, ছবি ইত্যাদি ডিজিটাল ফরম্যাটে সংরক্ষণ করা সম্ভব।’ ওয়েবসাইট, অ্যাপস বা অন্যকোনও ফরম্যাটে ডাকটিকিট সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হলে তিনি যথাসম্ভব সহযোগিতা করবেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ডাকটিকিট দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। ডিজিটাল মাধ্যমে অনন্তকাল তা সংরক্ষিত থাকবে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম তা দেখতে ও জানতে পারবে।’ 

/এএইচ/এপিএইচ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
বঙ্গবন্ধু শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন: এমপি কাজী নাবিল
বঙ্গবন্ধু শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন: এমপি কাজী নাবিল
ত্যাগের মহিমায় স্বামী বিবেকানন্দ মানবসেবা করে গেছেন: মেয়র তাপস
ত্যাগের মহিমায় স্বামী বিবেকানন্দ মানবসেবা করে গেছেন: মেয়র তাপস
জাকের পার্টির ‘বিশ্ব ইসলামি সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত
জাকের পার্টির ‘বিশ্ব ইসলামি সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
‘মানুষের কত ফ্রেন্ড, কাউকে পাশে পাইলে আমার এমন মৃত্যু হইতো না’
‘মানুষের কত ফ্রেন্ড, কাউকে পাশে পাইলে আমার এমন মৃত্যু হইতো না’
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা