X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীরাই শক্তিশালী, ঢামেকের চারপাশে তারা ঘিরে থাকে

জাকিয়া আহমেদ
১৮ এপ্রিল ২০১৬, ২২:২০আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০১৬, ২৩:৪৫

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাশে অ্যাম্বুলেন্সের সারি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। প্রতিদিনই অ্যাম্বুলেন্সের দরকার হয় অসংখ্য রোগীর। অথচ দেশের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালটিতে রয়েছে মাত্র চারটি অ্যাম্বুলেন্স। তাও আবার একটি নষ্ট চার মাস ধরে, বাকি তিনটি বেশির ভাগ সময় ব্যবহার করেন হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মকর্তারা। আর এতেই পোয়াবারো অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীরা। দরিদ্র রোগীদের জিম্মি করে দিনের পর দিন ব্যবসা করে যাচ্ছেন তারা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন চিত্র।
‘এই ক’টা অ্যাম্বুলেন্স দিয়া অফিসার টানবে নাকি রোগী টানবে?’ বললেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী। তিনি বলেন, রোগী পরিবহনে ঢাকা মেডিক্যালের অন্তত ১০টি অ্যাম্বুলেন্স দরকার অথচ আছে মাত্র তিনটি। আর এই সুযোগে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চলবে না কেন?
সরকারি এই হাসপাতালে ব্যক্তি মালিকানাধীন অ্যাম্বুলেন্স বাণিজ্যের কথা এখন ওপেন সিক্রেট। কিন্তু কেউ স্বীকার করতে রাজি নয়। অথচ হাসপাতালটির পূর্ব পাশের প্রশাসনিক ভবন থেকে জরুরি বিভাগের সামনের পুরো রাস্তাজুড়ে দাঁড়িয়ে থাকে ৮০ থেকে ৯০টা বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স। আর এ ব্যবসায় খোদ হাসপাতালটির ওয়ার্ডবয়সহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত আছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালেরই সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনেই বেশ বড় করে সাইনবোর্ডে লেখা ‘সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস (শুধু সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য)। ভাড়া: প্রতি কিলোমিটার ১০ টাকা, সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা।’ তবে এই সাইনবোর্ড শুধুই কাগজে-কলমে রয়েছে বলেই জানান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সংশ্লিষ্টরা। এদিকে গত রবিবার সারাদিন হাসপাতালে অবস্থান করেও কোনও রোগীকে সরকারি এই অ্যাম্বুলেন্স পেতে দেখা যায়নি। বরং দেখা গেছে, সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে বেশি ভাড়ায় বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করতে।

রাজধানীর বাড্ডা থেকে স্ট্রোকের রোগী মা’কে নিয়ে ঢাকা মেডিক্যালে এসেছেন হামিম। কিছু জটিলতার কারণে এখানে না থেকে বারডেম হাসপাতালে যেতে হবে বলে হন্যে হয়ে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স খুঁজছিলেন হামিম। প্রায় তিন ঘণ্টা ঘোরার পর একটি অ্যাম্বুলেন্সও না পেয়ে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতাল ছাড়েন তিনি। অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে বসেই এ প্রতিবেদককে বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল থেকে বারডেমের দূরত্ব খুবই কম, হয়তো নির্ধারিত ভাড়ায় বা তার চেয়ে একটু বেশিই দিতে হতো। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে এখন দিতে হবে সাড়ে ছয়’শ টাকা। এভাবে অসহায় মানুষদের জিম্মি করে এত টাকা আদায় খুবই দুঃখজনক।

জানা গেছে, যে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স এখানে চালু রয়েছে তার কোনওটিতেই নেই আধুনিক যন্ত্রপাতি, আইসিইউ সুবিধা বা কার্ডিয়াক মনিটর।

গত রবিবার দুপুর আড়াইটায় এ প্রতিবেদকের সামনেই ঢামেকের এক অ্যাম্বুলেন্স চালকের কাছে ফোন আসে। চালক ফোন ধরেই বলেন, ‘জ্বি স্যার বসে আছি, জ্বি স্যার আসছি।’ কাকে আনতে যাচ্ছেন জানতে চাইলে চালক বলেন, ‘আফা, দুইটা পোলাপান নিয়া ডাল-ভাত খাইয়া বাইচা আছি, আমার চাকরিটা খাইয়েন না, ড্রাইভিং সিটে বসে তিনি আরও বলেন, ‘আপনার ড্রাইভার কি আপনার কথার বাইরে যাবে, তাইলে কি আপনি তারে চাকরিতে রাখবেন? আমরা হুকুমের গোলাম আফা, কিচ্ছু করার নাই আর আমার নামটাও লেইখেন না প্লিজ।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, বার্ন ইউনিটের রেকর্ডকিপার শেখ মো. ওমর ফারুকের রয়েছে দুটি অ্যাম্বুলেন্স। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী শ্রমিকনেতা সুমন আলী, দিনার, জামাল সর্দারসহ মেডিক্যালের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরই রয়েছে নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার নোয়াখালীর ইউসুফ আলীর রয়েছে নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স, বহির্বিভাগের সুইপার সর্দার সামুদ্দিন ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী আব্দুস সাত্তারের রয়েছে একটি করে অ্যাম্বুলেন্স। অর্থাৎ হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা কর্মচারীদের অনেকেই হাসপাতালের এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত।

তবে এই বড় সরকারি হাসপাতালে (ঢামেক) আরও অনেক অ্যাম্বুলেন্স দরকার বলে স্বীকার করলেন মেডিক্যালের অ্যাম্বুলেন্স যানবাহন শাখার প্রধান গাড়িচালক মো. নাসিরুদ্দিন নান্নু। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, একটা অ্যাম্বুলেন্স যদি মিরপুর বা উত্তরাতে যায় তাহলে পুরাদিন শেষ। আর ওরা যখন ভেতর থেকে ট্রলিতে করে রোগী নিয়ে আসেন তখন তো তাদের থামাতে পারি না, এতে রোগীর স্বজনরাই উত্তেজিত হয়ে যায়। তাদের কাছে তখন চিকিৎসা জরুরি, অ্যাম্বুলেন্স সরকারি নাকি বেসরকারি এটা জরুরি না। আর যারা এখানে ব্যবসা করতে এসেছেন তাদের শক্তিটাও আমাদের চেয়ে বেশি, হাসপাতালের চারপাশে তারা ঘিরে থাকে। বিশেষ করে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের শ্রমিকনেতা সুমন আলীর প্রভাব অনেক বেশি। রাতের বেলায় জরুরি বিভাগ তার দখলে থাকে।

এদিকে হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স স্বল্পতার কথা স্বীকার করলেন সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. খাজা আব্দুল গফুর। তিনি বলেন, আমাদের আরও কিছু অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন রয়েছে এটা সত্যি। এত বড় হাসপাতালে মাত্র তিনটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে চলে না। এজন্য আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি, আশা করছি সমাধান হয়ে যাবে।

এখানে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমরা বার বার সিটি করপোরেশন এবং প্রশাসনকে বলেছি। হাসপাতালের চারিদিকের রাস্তাই সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত হলেও ঢাকা মেডিক্যালের অ্যাটাচমেন্ট যে দিকটায় সেখানে যেন কোনও বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স না থাকে সেজন্য হাসপাতালের আনসারদের নির্দেশনা দেওয়া আছে এবং তারা পদক্ষেপও নেন। কিন্তু উল্টো দিকের যে রাস্তাটা রয়েছে সেটির পুরোটাই সিটি করপোরেশনের। আবার অ্যাম্বুলেন্স চালকেরাও বলেন, তারা নাকি সিটি করপোরেশনের রাস্তায় আছে। আমরা আমাদের মতো করে চেষ্টা করি, তারপরও সবার সহযোগিতা চাই যেন রাস্তাটা পরিষ্কার থাকে। কিন্তু হাসপাতালের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী এই অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে বিষয়টি আমরা অবশ্যই দেখবো। শ্রমিকনেতা সুমন আলীর গাড়ির বিষয়ে বলা হলে তিনি বলেন, আমরা এটা শুনেছি কিন্তু সুমনকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে- তার কোনও গাড়ি নেই। এখন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না পেলে তো আমরা অ্যাকশন নিতে পারি না।

এদিকে, সুমন আলী এবং বার্ন ইউনিটের রেকর্ডকিপার দুজনই অস্বীকার করেছেন যে, তাদের কোনও অ্যাম্বুলেন্স নেই।

/এএইচ/

 

আরও খবর পড়ুন-

শেখ হাসিনা জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র চিহ্নিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র: প্রধানমন্ত্রী

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
সর্বাধিক পঠিত
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ