X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবাদের ভিন্নস্বর: ‘রংবাজি’ থেকে মোবাইলফোনে স্লোগান

উদিসা ইসলাম
১৯ এপ্রিল ২০১৬, ০৯:৫৭আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০১৬, ১১:৩৮



প্রতিবাদের ভিন্নস্বর আপনি বাসে করে যাচ্ছেন, কেউ এমনভাবে তাকাচ্ছে যে আপনি অস্বস্তি বোধ করছেন। কিংবা আপনি চায়ের দোকানে বসে আছেন, আপনাকে কেউ হয়রানি করতে চাচ্ছে, অথবা আপনি রেস্তোরাঁয় বসে অপেক্ষা করছেন, কোনও অপিরিচিত চোখ আপনার দিকে অযথাই তাকাচ্ছে- সে ক্ষেত্রে আপনি ওই লোকের সঙ্গে কথা না বলে তার দিকে তুলে ধরুন মোবাইলফোনের গায়ে লেখা স্লোগান-‘এভাবে কি তুমি তোমার মায়ের দিকেও তাকাও?’ দেখবেন কাজ হবে। 

আরও পড়ুন: ফের রাজধানীতে মায়ের হাতে শিশুপুত্র খুন

মোবাইলফোনের গায়ে নানা স্লোগান লিখে নিজেদের প্রতিবাদ জানানোর ক্যাম্পেইন শুরু করেছে অনলাইনে একসঙ্গে হওয়া সংগঠন ‘মেয়ে’। যারা কিনা সংগঠিত অনলাইনে হলেও কাজ করে অফলাইনে, মাঠে। তারা বলছেন, শ্লোগান, প্রতিবাদ শব্দগুলো শুনলে চোখে ভেসে ওঠে এক ঝাঁক মুষ্টিবদ্ধ হাত। প্রযুক্তির কল্যাণে হাতের মুঠোয় মোবাইল চলে এসেছে বলে কি আমাদের প্রতিবাদ স্তিমিত হয়ে যাবে? মোটেও না। প্রতিবাদ হতে পারে মুঠোয় ধরা মোবাইল ফোন দিয়েও।

‘মেয়ে’ দলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে এ প্রজন্ম নিজেদের লড়াইয়ের রাস্তা নির্ধারণ করেছে নিজের মতো করেই। কয়েকজন তরুণ প্রাণ একসঙ্গে হয়ে গড়ে তুলেছে প্রতিবাদের ভিন্ন ভাষা। সম্প্রতি রিকশা পেইন্টের মাধ্যমে নারীকে দেখার চোখ বদলানোর নানা স্লোগান রিকশার গায়ে সেঁটে বেশ সাড়া ফেলেছেন তারা। এখন কাজ শুরু করেছেন হাতের মুঠোয় স্লোগান নিয়ে: মোবাইলফোনে প্রতিবাদের ভাষা লিখে রাস্তার হয়রানি থেকে নিজেদের মুক্ত করবেন সেই স্বপ্ন নিয়ে। 

রিকশাপেইন্টে নারীর প্রতিবাদ এবারে মোবাইলফোনে লেখা প্রতিবাদের ভাষার আইডিয়া এসেছে আফিয়া আবিদা ইষ্টির মাথা থেকে। মেয়ের ফেসবুক পেজে মোবাইলফোনের গায়ে লেখা ছবিগুলো দিয়ে অ্যালবামের পরিচিতি লেখা হয়েছে, যার যার মোবাইলের ব্যাক-কাভারে পছন্দমতো স্লোগান লিখে ফেলুন। কেউ তাকিয়ে থাকলেই মোবাইল উঁচিয়ে ধরবেন মুখের সামনে…রিকশাপেইন্টের মতো এই শ্লোগান হবে আমাদের চলন্ত প্রতিবাদ।

আইডিয়ার বিষয়ে ইষ্টি বলেন, প্রতিদিন পাবলিক বাসে চড়ে অফিসে-ক্লাসে যাচ্ছি। আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হয়েছি পাবলিক বাসেই। ইউটিউবে DIY Backcover Tuitorial দেখে আইডিয়া নিয়ে আমিও ব্যাক কভারে লেখা শুরু করলাম। ইংরেজি কোটেশন লিখতাম। ওরা পড়তো, আমাদের দিকে তাকাতো। কিন্তু এর বেশি কিছু করার সাহস করতো না। সে থেকেই মাথায় বুদ্ধিটা এলো।

আরও পড়ুন:  ‘অনিবন্ধিত সিম চিরতরে বন্ধ করা হবে’

মেয়ে দলটির সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে মেয়ে’র সমন্বয়কারী তৃষিয়া নাশতারান বলেন, 'মেয়ে'র সৃষ্টি আর বেড়ে ওঠা মেয়েদের নিয়ে আলোচনা আর কাজের জন্য। যে মেয়ে কখনও উচ্চস্বরে প্রতিবাদ করেনি, যে মেয়ের হয়তো নিজের শক্তি আর সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণাই নেই, সেই মেয়েটাও যেন নিজের ভাবনা ইচ্ছা আর চেষ্টাটুকু নিয়ে প্রতিবাদের কাতারে সামিল হন, এমন অনেক অনেক মেয়ের সম্মিলিত ভাবনা আর প্রচেষ্টার অনুরণনে যেন প্রথাগত বঞ্চনার দেয়ালে ফাটল ধরে, তার জন্যই 'মেয়ে'।

রিকশাপেইন্টে নারীর প্রতিবাদ গত পয়লা এপ্রিলে যৌন সহিংসতার প্রতিবাদ জানাতে আমরা 'রংবাজি' নামে একটা ইভেন্ট করেছিলাম 'রিকশা রাঙাই প্রাণের কথায়' শ্লোগানে। সেদিন নিমতলী গেটে প্রথমবারের মতো মেয়েরা নিজ হাতে রিকশা রাঙিয়ে তুলেছিল নিজেদের প্রতিবাদী শ্লোগান দিয়ে। অনেকে জানতে চান রিকশাপেইন্ট কেন? কারণ রিকশা আমাদের নাগরিক জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, রিকশাপেইন্টে উঠে আসে সমসাময়িক সমাজচিত্র। যৌন সহিংসতাও আমাদের সমাজের এক রূঢ় বাস্তবতা। আমরা চেয়েছি এই ঘৃণ্য বাস্তবতা উঠে আসুক রিকশাপেইন্টে, ছড়িয়ে পড়ুক শহরময়, নাড়া দিক সাধারণ মানুষের ভাবনায়।

আরও পড়ুন: ঢাবিতে ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করায় কর্মচারীর কারাদণ্ড

মোবাইলের ব্যাক কাভারে স্লোগান লেখার প্রতিবাদ-ক্যাম্পেইন প্রসঙ্গে নাশতারান বলেন, আমাদের দেশে অচেনা কারও দিকে, বিশেষ করে মেয়েদের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকার অভ্যাস নতুন নয়। ওভাবে তাকানো যে অভদ্রতা, কিংবা চোখ দিয়ে কোনও মেয়েকে মাপা যে অসভ্যতা, এই শিক্ষাটা অনেক প্রথাগত শিক্ষিত ব্যক্তির মাঝেও নেই। তাদের জন্য এই মোবাইল শ্লোগান মোক্ষম এক হাতিয়ার। কেউ তাকিয়ে থাকলেই মোবাইলটা কাজের ছুঁতোয় তুলে নিয়ে লেখাটা দেখালে আর কিছু না হোক, আপত্তিটুকু জানানো হবে। আফিয়ার আইডিয়া থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সে রাতেই আমরা  কজন স্লোগান লিখে নিজেদের মোবাইলের ব্যাক কভারে বসিয়ে নিলাম। তারপর ছবিগুলো নিয়ে 'হাতের মুঠোয় স্লোগান' অ্যালবাম বানালাম আমাদের ফেসবুক পেইজে। একই নামে একটা পাবলিক ইভেন্টও হচ্ছে এটা নিয়ে। উদ্দেশ্য আইডিয়াটা ছড়িয়ে দেওয়া। অনলাইন থেকে অফলাইনে।

বর্তমানে উচ্চশিক্ষার্থে প্রবাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন এই উদ্যোগে সমর্থন জানিয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রতিবাদের ভাষার ধরণ ও উত্ত্যক্তকারীকে প্রাথমিক সতর্কীকরণ হিসেবে এটা খুব ভাল কাজ হয়েছে। তাছাড়া এখনতো মোবাইল প্রায় সকলেরই আছে। এর আগে এই মেয়েরাই রিকশাপেইন্ট করে নানা স্লোগানে ভরে দিয়েছে রিকশার গা। এধরণের সচেতনতা ক্যাম্পেইন এর গুরুত্ব বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে নাসরিন বলেন, রিকশা ক্যাম্পেইনও খুবই নজরকাড়া ছিলো। আমি মনে করি, এই ধরণের সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন জনপরিসরে খুব দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার জন্য কার্যকরী। ঢাকা শহরে যেমন রিকশা খুবই সহজলভ্য যান এবং এর পিছনের লেখা সবাই দেখতে পান। `মেয়ে' গ্রুপটি আমি মনে করি খুবই ভালো পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

ইউআই/এমএসএম /আপ –এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ট্রাকের চাকায় পিষ্ট করা হলো ৬ হাজার কেজি আম
ট্রাকের চাকায় পিষ্ট করা হলো ৬ হাজার কেজি আম
সিএনজির রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালু করতে বিআরটিএ অফিস ঘেরাও
সিএনজির রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালু করতে বিআরটিএ অফিস ঘেরাও
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
বৃষ্টি ও বন্যায় কেনিয়ায় নিহত অন্তত ৪৫
বৃষ্টি ও বন্যায় কেনিয়ায় নিহত অন্তত ৪৫
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড