X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০
নতুন সেল করার কথা ভাবছে র‌্যাব

ইন্টারনেটকেন্দ্রিক অপরাধ শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি

আমানুর রহমান রনি
১৯ এপ্রিল ২০১৬, ১২:১৬আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০১৬, ১২:৩৩

সাইবার-ক্রাইম বেড়েই চলছে

তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সঙ্গে সঙ্গে দেশে সাইবার ক্রাইম ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাসের মতো। ইন্টারনেট সেবা গ্রহীতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাইবার অপরাধ বেড়েই চলছে। শহরের চেয়ে এখন গ্রামে এই অপরাধ প্রবণতা বেশি।কারণ হঠাৎ করে হাতে কম দামে আধুনিক প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট পেয়ে বেশিরভাগ মানুষ এর অপ-ব্যবহার করছেন বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি। অনেকে বুঝে আবার কেউ না বুঝে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন ধরণের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছেন।অপরাধীর সংখ্যাও দিনেদিনে বেড়ে চলেছে। যা চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনাও চ্যালেঞ্জ। তাই গুরুতর অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ও নজরদারির জন্য আলাদা একটি ইউনিট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

আরও পড়ুন: ‘অনিবন্ধিত সিম চিরতরে বন্ধ করা হবে’

সাম্প্রতিক দেশের বিভিন্নাঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বেশকিছু নির্যাতনের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মোবাইলফোনে ধারণ করা এসব ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল হয়ে যায়।গত সপ্তাহে নোয়াখালীর হাতিয়ায় পুলিশের কথিত সোর্স শাহজাহান নামে এক ব্যক্তি ওই এলাকার শাহানারা বেগম নামে এক নারীকে চাঁদার দাবিতে জনসম্মুখে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে।গ্রামগঞ্জে প্রতিটি মানুষের হাতে মোবাইল আর ইন্টারনেটের কারণে এখন চিত্র ধারণ এবং তা ছড়িয়ে দেওয়া মামুলি ব্যাপার হয়ে গেছে। তাই সাইবার অপরাধ বেড়েই চলছে। আঞ্চলিক থানাগুলোতে এসব অপরাধীদের চিহ্নিত করার মতো প্রযুক্তি নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে, তাই তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে ।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধের এক কর্মকর্তা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন বহুধরণের অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। অপরাধীর সংখ্যাও অসংখ্য। এদের সবার পেছনে ছুটতে হলে বাকি কাজ বন্ধ করে কেবল দৌঁড়াতেই হবে। কিন্তু তা সম্ভব না। ইন্টারনেটে এমন কোনও অপরাধ নেই যা হচ্ছে না। দুইভাবে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। প্রথমত, দলগতভাবে এবং দ্বিতীয়ত ব্যক্তিগত পর্যায়ে। দলগতভাবে একটি গোষ্ঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এস্কর্ট, ম্যাসেজ পার্লার, পর্ণোগ্রাফির বিজ্ঞাপন দেয়। যা সবশ্রেণির মানুষের কাছে মুহূর্তেই পৌঁছে যাচ্ছে,  যা বিব্রতকর। এমনকি তারা মাদকের ব্যবসাও করে। তাদের একটি পেজ বা সাইট বন্ধ করলে, নতুন করে আর একটি শুরু করে। এভাবে কতগুলো বন্ধ করা যাবে? অপরদিকে ব্যক্তিগত পর্যায়েও অপরাধ চলছে। কেউবা ছবি বিকৃত করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন, কেউ হুমকি দিচ্ছেন, কেউ অপরাধ করে তা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এসব অপরাধ এখন আর শহরকেন্দ্রিক নেই। গ্রামগঞ্জে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে যাওয়ায় সেখান থেকেই এসব অপরাধ এখন বেশি সংঘটিত হচ্ছে। কারণ নতুন প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের প্রভাব এটি।

আরও পড়ুন- প্রতিবাদের ভিন্নস্বর: ‘রংবাজি’ থেকে মোবাইলফোনে স্লোগান

 

ডিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত বিকৃত খবর অনেকের কাছে সত্য বলে গৃহিত। ফেসবুকে কোনও কিছু দেখলেই তাকে তারা সত্য মনে করে ধরে নেয়। তা নিয়ে  গল্পও চলে অনেকক্ষণ। আসলে ওই বিষয়বস্তু বানানো এবং অপপ্রচার। সাধারণ মানুষের মধ্যে প্যানিক ছড়ানোর জন্য এসব করা হচ্ছে। যেকোনও হত্যাকাণ্ডের পরও এই অপপ্রচার চালাতে দেখা যায়।’

দুটি গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, হাল আমলে সাইবার অপরাধের মোক্ষম অস্ত্র হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। আছে ইউটিউব, টুইটার এবং ব্লগও। এসব প্রযুক্তির মাধ্যমে হুমকি, চাঁদাবাজি, জালিয়াতি, মুক্তিপণ, মোবাইল ব্যাংকিং, প্রতারণা যেমন উপহার পাওয়ার কথা বলে টাকা হাতানো, ভয়-ভীতি দেখিয়ে সুবিধা আদায়, জিনের বাদশা পরিচয়ে ধর্মের দোহাই দিয়ে টাকা আদায় ও বিপদে পড়ার কথা বলে আর্থিক সহায়তা চেয়ে ই-মেইল করা, অশালীন কথাবার্তা, সাধারণ ছবি, অন্তরঙ্গ মুহূর্ত ও নগ্ন ছবি-ভিডিও করে ব্লাকমেইল করা, এসব আপত্তিকর ছবিসহ বিশেষ ফোনালাপ প্রচার, পর্নোগ্রাফি তৈরি করে সিডি-ডিভিডির মাধ্যমে বাজারজাত ও ইন্টারনেটে ছড়ানো, বিভিন্ন সংস্থা-ব্যক্তির ওয়েবসাইট হ্যাকিং, ভাইরাস বা সংক্রামক ছড়ানো, ধর্মীয় উসকানি, রাষ্ট্র বিরোধী-মৌলবাদী জঙ্গি প্রচারণা, রাজনৈতিক ও সামাজিক স্ক্যান্ডাল প্রচার ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশসহ নানাভাবে সাইবার ক্রাইমের বিষ ছড়িয়ে পড়েছে। আবার ভুয়া বা অন্যের নামে ফেসবুক ও ই-মেইল আইডি (একাউন্ট) খুলে অপরাধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে অপরাধীরা।

আরও পড়ুন: অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীরাই শক্তিশালী, ঢামেকের চারপাশে তারা ঘিরে থাকে

একটি উদাহরণ টেনে ডিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে, কাবা শরীফের গিলাব পরিবর্তন এসব ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছিল। যা মুহূর্তেই দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রামগঞ্জে ইন্টারনেট থাকায় চাঁদের ভেতরে সাঈদীর বানানো ছবি তারাও দেখেছে, যা তাদের কাছে সত্য বলে মনে হয়েছে। সম্প্রতি কুমিল্লার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় তনু হত্যা ঘটনার ছবিও বিকৃত করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সবকিছু আমাদের নজরদারিতে আছে, তবে সংখ্যা বেশি হওয়ায় সবাইকে আইনের আওতায় এক সময় আনা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তা নিয়ে কাজ চলছে।’ 

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘আমরা যেকোনও অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। রাজধানীতে সাইবার অপরাধ করে কেউ পার পায়নি, পাবেও না।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনের সঠিক প্রয়োগ ও বিচার না হওয়া, আইনের সীমাবদ্ধতা, আইন ও অপরাধ সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং আধুনিক প্রযুক্তি না থাকার কারণে সাইবার অপরাধ বাড়ছে । তারা আইনের যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির আধুনিকায়ন, প্রশিক্ষিত দক্ষ জনবল ও সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সূত্রে জানা গেছে, আইসিটি আইন সংশোধন হওয়ার পরে ২০১৩ সালে ২৫টি, ২০১৪ সালে ৬৫টি, ২০১৫ সালে ৬৫টি এবং এবছর গত ছয়মাসে ২৩টি মামলার আলামত পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে। এর মধ্যে আইসিটি আইনে দায়ের হওয়া মামলাই বেশি। এ সময়ে এসব মামলার মধ্যে আইসিটি আইনে ৬২টি ও পর্নোগ্রাফি আইনে ৩১টি মামলা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪২টি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। তদন্তে অভিযোগগুলো প্রমাণিত হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এধরণের অপরাধ বেড়ে চলায় র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ গত পহেলা বৈশাখে জানিয়েছেন, র‌্যাব সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে একটি আলাদা ইউনিট গঠন করবে। যারা শুধু সাইবার অপরাধ নিয়েই কাজ করবে।

/এআরআর/ এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
সর্বাধিক পঠিত
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি