X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্ল্যাট কিনতে অর্থের উৎস প্রদর্শন না করার সুযোগ চাই: লিয়াকত আলী ভূঁইয়া

ওমর ফারুক
২৮ মে ২০১৬, ২১:৩৬আপডেট : ২৮ মে ২০১৬, ২১:৪১


লিয়াকত আলী ভূঁইয়া১১১ সাধারণ ক্রেতা হিসেবে প্রথম ফ্ল্যাট কেনার জন্য অর্থের উৎস প্রদর্শন না করার সুযোগ চেয়েছে বেসরকারি আবাসন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-রিহ্যাব। একইসঙ্গে স্বল্প আয়ের ক্রেতাদের ফ্ল্যাট কিনতে অল্প সুদে বিশ হাজার কোটি টাকার হাউজিং লোন কর্মসূচি চালুর দাবি জানিয়েছে।  এছাড়া আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪-এর ১৯ ধারার সংশোধনও চেয়েছে সংগঠনটি। শবিবার  বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রিহ্যাবের পক্ষে এ অভিমত ব্যক্ত করেন সংগঠনের প্রথম সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া। এ সময় তিনি আসন্ন বাজেটকে ঘিরে আবাসন ব্যবসায়ীদের ভাবনা, চাওয়া, আবাসন ব্যবসার বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেন।

বাংলা ট্রিবিউন : আবাসন ব্যবসার বর্তমান অবস্থা কী?

লিয়াকত আলী ভূইয়া : খুব একটা ভালো নেই। দীর্ঘদিন ধরে মন্দাভাব চলছে। এই মন্দাভাব থেকে বেরিয়ে আসার গতিটা খুবই কম। আপনারা জানেন, ব্যবসায়ীরা এ খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। অধিকাংশ ডেভেলপার উচ্চ সুদে ব্যাংক ঋণ নিয়েছেন। ব্যবসায় মন্দাভাব থাকায় ওই ঋণ তারা পরিশোধ করতে পারছেন না। হাজার হাজার রেডি ফ্ল্যাট অবিক্রিত পড়ে আছে। এতে শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ আটকে আছে।
অন্যদিকে, আয়করের উচ্চহারের কারণে ক্রেতারা আগ্রহ হারাচ্ছেন। এ অবস্থায় সরকার যদি সুযোগ না দেয়, তাহলে আবাসন খাতের মন্দাভাব দূর হবে না। আগামী বাজেটে সরকার আবাসন খাতের জন্য কী সুবিধা দেয়, আমরা সেদিকে চেয়ে আছি।

বাংলা ট্রিবিউন: আসন্ন বাজেটে আপনারা কী চান?

লিয়াকত আলী ভূইয়া : আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে, বর্তমানে বিভিন্ন দেশে সেকেন্ড হোম গ্রহণের সুযোগ থাকায় দেশের অর্থ বিদেশ চলে যাচ্ছে। অপ্রদর্শিত অর্থ দেশে বিনিয়োগের সুযোগ করে দিলে ভবিষ্যতে ওইসব বিনিয়োগকারী ট্যাক্স নেটের আওতায় চলে আসবে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। এই বিনিয়োগের জন্য আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ধারা ১৯ বিবিবিবিবি-তে ইনডেমনিটি রাখা প্রয়োজন। বলা যায় আয়কর অধ্যাদেশের ধারা ১৯ বিবিবিবিবিতে ইনডেমনিটি না থাকায় সরকারের রাজস্ব বাড়ছে না।
আয়কর অধ্যাদেশের ৫৩পি ধারায় জমির মালিকের জন্য নির্ধারিত ১৫ শতাংশ উৎসে কর কমিয়ে ৪ শতাংশ করা প্রয়োজন। এর ফলে অ্যাপার্টমেন্টের দাম ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার কাছাকাছি চলে আসবে। আর আবাসন ব্যবসার মন্দাভাব কাটিয়ে উঠতে সরকার থেকে নীতিগত সহায়তা পাওয়া যাবে।

বর্তমানে ব্যয় অত্যধিক হওয়ায় ক্রেতারা তাদের প্লট বা ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। ফলে সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা মনে করি, অবিলম্বে রেজিস্ট্রেশন ব্যয় কমানো দরকার। বর্তমানে বাংলাদেশে রেজিস্ট্রেশন সংশ্লিষ্ট ফি ১৪ শতাংশ। সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের এই ফি অনেক বেশি। সার্কের অন্য দেশগুলোয় রেজিস্ট্রেশন ব্যয় ৪-৭ শতাংশের বেশি নয়।

রিহ্যাব থেকে আমরা ফ্ল্যাট ও প্লটের রেজিস্ট্রেশন সংশ্লিষ্ট ফি ও কর কমিয়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণ দাবি করছি। এর মধ্যে থাকবে গেইন ট্যাক্স ২ শতাংশ, স্ট্যাম্প ফি ১.৫ শতাংশ, রেজিস্ট্রেশন ফি ১ শতাংশ, স্থানীয় সরকার কর ১ শতাংশ এবং মূল্য সংযোজন কর ১.৫ শতাংশ। এ ছাড়া প্রতি বর্গমিটারের জন্য আয়করের হার কমিয়ে আনা এবং নতুন করে মূল্য সংযোজন কর যেন আরোপ করা না হয়।

বাংলা ট্রিবিউন: এক সময় স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ‘হাউজিং লোন’ নামের এক কর্মসূচি চালু ছিল। এখন ওই কর্মসূচির খবর কী?

লিয়াকত আলী ভূইয়া: সীমিত আয়ের মানুষের জন্য হাউজিং লোন চালু ছিল ২০০৭-০৮ এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে। তখন ওই ঋণের সুদ ছিল ৯ শতাংশ। বর্তমানে এই ঋণ প্রদান কার্যক্রম বন্ধ আছে।

বাংলা ট্রিবিউন: তাহলে কি কম সুদে হাউজিং লোনের প্রয়োজন নেই?

লিয়াকত আলী ভূইয়া : অবশ্যই প্রয়োজন আছে। কারণ এর সঙ্গে শুধু ক্রেতা নয়, আবাসন ব্যবসায়ীদের স্বার্থও জড়িত। আমরা মনে করি, আবাসন শিল্প রক্ষায় অবিলম্বে হাউজিং লোন নামে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকার একটা বিশেষ তহবিল গঠন করা প্রয়োজন। এই তহবিল থেকে ক্রেতাদের চাহিদা মত ঢাকা শহরের আশপাশে বা মিউনিসিপ্যাল এলাকার পাশে দেড় হাজার বর্গফুট বা তার চাইতে ছোট ফ্ল্যাট কিনতে ন্যূনতম ৫ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে হবে। সরকার চাইলে ফ্ল্যাটের আয়তনের ওপর ভিত্তি করে ঋণ ও সুদের হার নির্ধারণ করে দিতে পারে। এই ঋণ সরবরাহ কাজে ডিবিএইচ, আইডিএলসি ও ন্যাশনাল হাউজিংয়ের মত বেসরকারি অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।

বাংলা ট্রিবিউন : আবাসন শিল্পে সেকেন্ডারি মার্কেট বলে একটা কথা শোনা যায়, যেখানে একটি ফ্ল্যাট একাধিকবার বিক্রির সুযোগ থাকে। এই মার্কেটের খবর কী?

লিয়াকত আলী ভূইয়া: আমাদের দেশে আবাসন শিল্পের জন্য সেকেন্ডারি মার্কেটের ব্যবস্থা নেই। তবে আমরা এই মার্কেটের পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানাচ্ছি। রেজিস্ট্রেশন ফি, স্ট্যাম্প ডিউটি, গেইন ট্যাক্স ইত্যাদি বিদ্যমান ব্যয় কমিয়ে ৩.৫ শতাংশে দ্বিতীয় বার ফ্ল্যাট ও প্লট কেনাবেচার ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। যেসব ফ্ল্যাট প্রথম বিক্রির পর পাঁচ বছরের মধ্যে আবার বিক্রি হবে, শুধু সেসব ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে ৩.৫ শতাংশ ট্যাক্সে বিক্রির জন্য সেকেন্ডারি মাকের্ট চালু করা দরকার। সেকেন্ডারি মার্কেট ব্যবস্থার প্রচলন হলে একদিকে যেমন আবাসন শিল্পে গতি বাড়বে, অন্যদিকে সরকারেরও রাজস্ব আয় বাড়বে।

এ ছাড়াও আবাসন শিল্প রক্ষায় শহর এলাকায় পাঁচ বছরের জন্য ট্যাক্স হলিডে এবং শহরের বাইরে দশ বছরের জন্য ট্যাক্স হলিডে প্রচলন, সরকারি ঘোষণার মাধ্যমে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রবাহ নিশ্চিত করা যেতে পারে।

আরও পড়তে পারেন: এবারের বাজেট দেশের উন্নয়নে নিশ্চত ভূমিকা রাখবে: এনবিআর চেয়ারম্যান

 /ওএফ/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
আলাপচারিতায় ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ও মানস ঘোষমুজিবনগরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও সংবাদ সংগ্রহ
করারোপ নীতি শিক্ষা সম্প্রসারণকে বাধাগ্রস্ত করবে: সলিমুল্লাহ খান
বাংলা ট্রিবিউনকে ওয়াসিকা আয়শা খান‘নারীরা যে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়ে চলেছেন, এর নেপথ্যে শেখ হাসিনা’
সর্বশেষ খবর
গাজা ও ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
গাজা ও ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
অনেক নার্ভাস ছিলেন সাইফউদ্দিন
অনেক নার্ভাস ছিলেন সাইফউদ্দিন
বকশিবাজার মোড়ে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
বকশিবাজার মোড়ে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
১২ বছর পর মুম্বাইয়ের মাঠে কলকাতার জয়
১২ বছর পর মুম্বাইয়ের মাঠে কলকাতার জয়
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা