X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

তনু হত্যাকাণ্ড: দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত

তাসলিমা আক্তার
০৩ জুলাই ২০১৬, ১৫:৪৬আপডেট : ০৩ জুলাই ২০১৬, ১৫:৪৮

তাসলিমা আক্তারসোহাগী জাহান তনুর নামটি আমরা কেউ নিশ্চয়ই ভুলে যাইনি! তিন মাস আগে কুমিল্লার সেনানিবাসে ধর্ষণের পর হত্যা করে তার লাশ ফেলে রাখা হয়েছিল। এই ঘটনায় সারাদেশ কেঁদেছে। প্রতিবাদের ঝড় বয়ে গেছে। হত্যা জড়িতদের বিচারের দাবি উঠেছে। প্রথমবার ময়না তদন্তের রিপোর্টে ধর্ষণের কোনও উল্লেখ ছিল না। অসত্য সেই রিপোর্টিটি মেনে নেওয়া না হলে আবার কবর থেকে তোলা হয় তনুর লাশ। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। রিপোর্টে বলা হয়, যৌন সংসর্গের আলামত পাওয়া গেছে। কিন্তু ‘যৌন সংসর্গ’ ‘ধর্ষণ’ নাকি ‘স্বেচ্ছা যৌনমিলন’ তা বোঝা যায়নি।
দ্বিতীয় রিপোর্ট যদি আমরা মেনে নিই, তাহলে ধরে নিতে হয়, তনু মেয়েটি স্বেচ্ছায় যৌনমিলনের পর সেনানিবাসের মতো সুরক্ষিত রাস্তায় দাঁড়িয়ে বলেছে, ‘এসো আমাকে কেউ হত্যা করে এইখানে ফেলে রেখে যাও।’
মেয়েটির লাশের ময়নাতদন্তে দুটি ভাগ রয়েছে, একটি হত্যা এবং অন্যটি ধর্ষণ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে- তনু যে ধর্ষিত হয়েছে এই ব্যাপারটিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে প্রথম থেকে। তনু ধর্ষিত হোক কিংবা না হোক, তাকে যে হত্যা করা হয়েছে তাতো সত্য। নাকি বন থেকে ভালুক এসে তনু মেয়েটিকে একলা রাস্তায় পেয়ে মেরে ফেলে রেখে গেছে? যদি তাই হয়, তবে সেই ভালুকেরই বিচার হোক। আজকাল দেশে ভালুকের উৎপাত বড্ড বেড়েছে।
ঘটনা যখন একটি নারীকে নিয়ে ঘটে তখন জনমত দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একপক্ষ মেয়েটিকে সঙ্গত দেয়, ঘটনার বিচার দাবি করে। আর অন্যপক্ষ মেয়েটির চলন বলন ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে টানা হ্যাঁচড়া করে। আমরা সবাই প্রত্যক্ষ করেছি তনু হিজাব করতো। তথাকথিত খারাপ পোশাক তনু পরতো না। কিন্তু তারপরও কথা এসেছে। কথা এসেছে, তনু ছিল নাট্যকর্মী, তনু গানও গাইতো। এখন প্রশ্ন হলো, মেয়ে হয়ে কেন এসব করতে হবে? মেয়েদের নাটক করা কিংবা গান করা তাদের আত্মহননেরই শামিল। দু’ভাগে বিভক্ত জনমতের যেই অংশে তনু হত্যাকে বৈধ মনে করা হয়েছে, তারা বলেছে, যেহেতু তনু নাটক করতো তাকে ধর্ষণ করা যেতেই পারে। পুলিশ বাহিনী যখন বারবার ভিকটিমের বাবা মাকে জেরা করেছে তখনও তাদেরকে নাজেহাল করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মেয়েকে দিয়ে নাটক করিয়েছেন কেন। রাত বিরেতে ঘর থেকে বের হতে দিয়েছেন কেন? মূল ঘটনা থেকে সরে গিয়ে ঘটনাকে প্রবাহিত করানো হয়েছে ভিন্ন ধারায়। তনুর বাবা মা ঘটনা কারা ঘটাতে পারে সে কথাও উল্লেখ করেন। কিন্তু তারপরেও প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। উলটো কোনও না কোনওভাবে তনুকেই দোষী সাব্যস্ত করার কাজে ব্যস্ত থেকেছে সবাই।

তনু হত্যাকাণ্ডের পর গত হয়েছে তিনটি মাস। এর মধ্যে কোনও একজন দোষী ব্যক্তিকে গ্রেফতার করাতো দূরের কথা, এমনকি কাউকে চিহ্নিতও করা যায়নি। কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবেই করা হয়নি। অথচ কবে যেন নিউজে দেখলাম এক এমপি সাহেবের শখের বাগানের ফুল খেয়ে ফেলার অপরাধে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে পাঁচটি ছাগলকে।

দ্বিতীয় ময়না তদন্তের রিপোর্টে সোহাগীর মৃত্যুর কারণও যথাযথভাবে লিখা হয়নি। বলা হয়েছে, দশদিন পর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে তাই সঠিকভাবে মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। ক্রমেই মূল ঘটনা থেকে দূরে সরে আসার প্রচেষ্টা চলছে। প্রথম তদন্তে বলা হয়েছে, ধর্ষণ করা হয়নি। দ্বিতীয়বার বলা হয়েছে, যৌনকার্য ঘটেছে কিন্তু সেটা ধর্ষণ নাকি স্বেচ্ছা যৌন মিলন তা বোঝা সম্ভব হয়নি।

অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলে সেটা কাঁধের ওপর জেঁকে বসে। মা-মেয়েকে প্রকাশ্যে ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটে চলেছে অহরহ। মহামারি আকারে দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। খুন ধর্ষণ নিত্য ব্যাপার। আমরা জনসাধারণ বিচার চেয়ে যাচ্ছি, প্রতিবাদ করছি। কিন্তু সময় ফুরিয়ে এসেছে। বানের জলের মতো ফুঁসে উঠছে জনরোষ। এখন শুধু সব অন্যায়কে ভাসিয়ে দেওয়ার প্রতীক্ষা।

লেখক: গল্পকার, কলামিস্ট

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
র‌্যাবের নতুন মুখপাত্র কমান্ডার আরাফাত
র‌্যাবের নতুন মুখপাত্র কমান্ডার আরাফাত
২০৪১ পর্যন্ত কর অব্যাহতি আদায় করতে চাই: মোস্তাফা রফিকুল ইসলাম
বেসিস নির্বাচন২০৪১ পর্যন্ত কর অব্যাহতি আদায় করতে চাই: মোস্তাফা রফিকুল ইসলাম
মিয়ানমার থেকে দেশে ফিরছেন দেড় শতাধিক বাংলাদেশি
মিয়ানমার থেকে দেশে ফিরছেন দেড় শতাধিক বাংলাদেশি
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেললাইনে ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেললাইনে ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা