X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

চিকুনগুনিয়া প্রাণঘাতী কোনও রোগ নয়

জাকিয়া আহমেদ
০৮ জুন ২০১৭, ১৫:৪৬আপডেট : ০৮ জুন ২০১৭, ১৫:৪৯

 

চিকুনগুনিয়া দিনে দিনে চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় জনমনে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। তবে সরকার বলছে, চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এটি কোনও প্রাণঘাতী রোগ নয়। এই প্রসঙ্গে  গণসচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেছেন, ‘চিকনগুনিয়া ও ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাবের কোনও আশঙ্কা নেই। সরকার এক্ষেত্রে বরাবরের মতোই প্রস্তুত।’

চিকুনগুনিয়া রোগ বিস্তার রোধে করণীয় সংক্রান্ত এক সভায়  স্বাস্থমন্ত্রী  বলেন, ‘চিকুনগুনিয়া প্রাণঘাতী কোনও রোগ নয়। এ নিয়ে অহেতুক ভীত বা আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকতে হবে। একইসঙ্গে বাড়িঘর ও আশপাশে যেন কোনোভাবেই পানি না জমে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সাধারণত জমে থাকা পানির মধ্যেই চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা জন্ম নেয়।’   

এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব,  নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)  থেকে বলা হচ্ছে—‘জ্বর হলেই যে চিকুনগুনিয়া হচ্ছে, তাও ঠিক নয়।  ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে সম্ভাব্য চিকুনগুনিয়ার রোগী হিসেবে ভর্তি রয়েছেন ৩৩ জন। এর মধ্যে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ১২ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ৫ জন, ইবনেসিনা হাসপাতালে ৩ জন, স্কয়ার হাসপাতালে একজন, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দুই জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক জন, সালাউদ্দিন হাসপাতালে আট জন, মুগদা সরকারি হাসপাতালে এক জন।

চিকিৎসকরা বলছেন, ‘চিকুনগুনিয়ার বাহক এডিস মশা। এই রোগে আক্রান্ত কাউকে কামড়ানোর পর কোনও মশা অন্য কাউকে কামড়ালে ওই ব্যক্তিও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হবেন। এ কারণেই এই রোগে আক্রান্ত রোগীকে যেন মশা কামড়াতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। আর চিকুনগুনিয়া জ্বরের কোনও টিকা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। চিকিৎসকরা বলছেন, চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। আর অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। আর অস্থিসন্ধির ব্যথার জন্য ঠাণ্ডা পানির চাপ ও হালকা ব্যায়াম উপকারী।

চিকুনগুনিয়ার উপসর্গের মধ্যে রয়েছে প্রচণ্ড জ্বর, কখনও কখনও সেটা ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি কিংবা তারও বেশি হতে পারে। পাশাপাশি সর্দি, হাত ও পায়ের গিঁটে ব্যথা বা ফোসকা পড়ার মতো লক্ষণগুলোও দেখা যায়।

আইইডিসিআর থেকে জানা যায়, সম্প্রতি পৃথিবীব্যাপীই এডিস মশাবাহিত রোগ বেড়ে গিয়েছে। প্রায় এক বিলিয়ন মানুষ এসব রোগে আক্রান্ত। গত ৫০ বছরে মশাবাহিত রোগে ৩০ গুণ রোগী বেড়েছে। তবে জ্বর হলে পরীক্ষা করতে হবে কারণ সেটি চিকুনগুনিয়া না হয়ে ডেঙ্গুও হতে পারে। আর চিকুনগুনিয়ার প্রতিরোধে সারাদেশে অধিদফতর থেকে এক মাস আগে থেকে এ বিষয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ৩ হাজার ৭০০ জন চিকিৎসক  তৈরি করা হয়েছে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,  ‘ডেঙ্গু হলে মাংসপেশীতে আর চিকুনগুনিয়া হলে জয়েন্টে (গিঁট) ব্যথা হবে। চিকুনগুনিয়াতে হাত-পায়ের মাথায় ও মুখমণ্ডলে র‌্যাশ হয় কিন্তু ডেঙ্গু হলে পুরো শরীরে র‌্যাশ হয়। ডেঙ্গু রক্তের প্লাটিলেট কমিয়ে দেয় যেটি চিকুনগুনিয়াতে হয় না।’

চিকনগুনিয়া নিয়ে আতঙ্ক না ছড়িয়ে গণসচেতনতা বাড়ানোকে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ‘চিকুনগুনিয়ায় মৃত্যুর রেকর্ড নেই, তবে ভোগান্তির শিকার হন রোগীরা। চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু নিয়ে পরিবারের সদস্যদেরই সচেতন হতে হবে। এই রোগ নিজেই সেরে যায়। তাই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার নেই।’

আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক মেহেরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে এপ্রিল ও মে মাসে ১৩৯টি চিকুনগুনিয়ার স্যাম্পল এসেছে। তার মধ্যে ৮৬টি পজিটিভ। ’ তিনি আরও বলেন, ‘ঘরের কোথাও যেন পানি না জমে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে, তাহলেই এসব রোগ থেকে দূরে থাকতে পারব।’

জানা যায়, ২০০৫ সালে ভারতে চিকুনগুনিয়া ভয়াবহ রূপ নিলে আইইডিসিআর  বাংলাদেশে জরিপ চালায়। তখন এ রোগে আক্রান্ত কোনও বাংলাদেশি পাওয়া যায়নি। পরে ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া গিয়েছিল।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা বলেন, ‘মশার কামড় থেকে সুরক্ষাই চিকুনগুনিয়া থেকে বাঁচার সবচেয়ে ভালো উপায়। মশারি টানিয়ে ঘুমানো, জানালায় নেট ব্যবহার করা, প্রয়োজন ছাড়া দরজা-জানালা খোলা না রাখা, শরীরে মশা প্রতিরোধক ক্রিম ব্যবহার করা—এগুলোর মাধ্যমেই এই রোগ প্রতিরোধ সম্ভব।’

ডা. সানিয়া তহমিনা বলেন, ‘ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া রোধে মশার জন্মস্থান, আবাসস্থল ও এর আশেপাশে মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে হবে।’

/এমএনএইচ/

আরও পড়ুন: 

বনানীতে ধর্ষণ মামলায় ৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

 

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কামরাঙ্গীরচর থেকে কাউকে উচ্ছেদ করা হবে না: মেয়র তাপস
কামরাঙ্গীরচর থেকে কাউকে উচ্ছেদ করা হবে না: মেয়র তাপস
সৌদি আরবের সড়কে আহত প্রবাসীর হাসপাতালে মৃত্যু
সৌদি আরবের সড়কে আহত প্রবাসীর হাসপাতালে মৃত্যু
সরিষাবাড়ীতে চেয়ারম্যান পদে রফিকুল ইসলামের প্রার্থিতা বাতিল
সরিষাবাড়ীতে চেয়ারম্যান পদে রফিকুল ইসলামের প্রার্থিতা বাতিল
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
রুশ বোমারু বিমান ভূপাতিতের দাবি ইউক্রেনের
রুশ বোমারু বিমান ভূপাতিতের দাবি ইউক্রেনের
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী