X
মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫
২৩ বৈশাখ ১৪৩২

বিষণ্নতার চেয়েও ভয়াবহ মানসিক ব্যাধি ওসিডি!

উদিসা ইসলাম
১০ অক্টোবর ২০১৭, ১৬:৫৭আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০১৭, ২১:৩০

ওসিডি

কিশোর বয়স থেকেই সুমী (ছদ্মনাম) ব্যক্তিগত কিছু বিষয়ে বেশি সচেতন। পরিচ্ছন্নতা, নিজের ঘর, নিজের পরিবেশ নিয়ে খুঁতখুঁতে। অপ্রয়োজনে বারবার একই জায়গা গুছিয়ে রাখা কিংবা অন্য কারোর চেয়ে সে পরিচ্ছন্ন— এসব মনে করতো সে। একসময় মানুষজনের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। বাড়তে থাকে একাকীত্ব থেকে বিষণ্নতা (ডিপ্রেশন)। এই বিষণ্নতা তাকে একটা সময় করে ফেলে মারাত্মক সন্দেহপ্রবণ। সুমীর যখন মাঝবয়স, চিকিৎসকরা তখন তার সমস্যাটিকে চিহ্নিত করেন অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি) হিসেবে। কী হয় তাহলে ওসিডি হলে? এটি এমন এক ধরনের বাতিকগ্রস্ততা যার ফলে মানুষের মনে কোনও একটি বিষয়ে নিজের মতো করে বদ্ধমূল ধারণার জন্ম হয় যেখান থেকে তিনি বের হতে পারেন না। 

মনো চিকিৎসকরা বলছেন, যেকোনও বিষয়ে মনের মাঝে বারবার আসা চিন্তাকেই ‘অবসেশন’ বলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি মনের অজান্তে হয়ে থাকে। অবসেশন বা এধরনের চিন্তার বিষয় যেকোনও কিছু হতে পারে। চিন্তাগুলি যে সবসময় স্বাভাবিক হবে, তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই। মনো চিকিৎসক ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টরা আরও বলছেন, ডিপ্রেশনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত হওয়ায় এই রোগে আক্রান্ত মানুষদের জোর না করে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো থেরাপি, ওষুধ যেমন জরুরি তেমনই পারিবারিক সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে দেওয়াও প্রয়োজন।

অন্য অনেক মানসিক রোগের মতো ওসিডিরও সঠিক কোনও কারণ এখনও আবিষ্কার হয়নি। কেউ বলেন, মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় ফাংশন কম হওয়ার কারণে বা কিছু কিছু নিউরোকেমিক্যালের তারতম্যের কারণে এ ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে। যেহেতু আপাত দৃষ্টিতে অন্য কোনও অসুবিধা দেখা যায় না, তাই সহজে এটিকে কেউ রোগ হিসেবে মানতে চান না।

এ বিষয়ে সাইকিয়াট্রিক কনসালট্যান্ট সুরজিৎ রায় চৌধুরী বাংলা ট্র্রিবিউনকে বলেন, উদ্বিগ্নতা বা বিষণ্নতা থেকে এ পরিস্থিতি হয়ে থাকতে পারে। তবে বয়স হওয়ার পর ধরা পড়ছে এমনটা কম হয়, এটি আগেই লক্ষ্য করা যায়। ওসিডি সিনড্রম শিশুকাল থেকে মধ্যবয়সীদের বেশি দেখা যায়।

তিনি বলেন, ওসিডি নিয়ে বাংলাদেশে কমিউনিটি ভিত্তিক স্যামপ্লিং হয়নি। তাই সমাজে এমন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কত বা কোন বয়স থেকে এই রোগের শুরু তা জানা যায়নি। তবে পশ্চিমা গবেষণা বলছে, মধ্যবয়সে সবচেয়ে বেশি ডিপ্রেশন হয়ে থাকে। আমাদের বেশিরভাগ স্যাম্পলিং হাসপাতালভিত্তিক। যারা স্বাভাবিক তারা এধরনের রোগীদের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করবেন প্রশ্নে পরামর্শ হিসেবে তিনি বলেন, মনের জোর বাড়ালে তোমার এই চিন্তা চলে যাবে— এমনটা রোগীদের কখনোই বলা যবে না। তার মনের জোরের ওপর কিছু করার নেই। এ রোগে আক্রান্ত হলে অবশ্যই সাইকোথেরাপি নিতে হবে। পাশাপাশি একই ধরনের উদ্বেগ দেখা দিলে সেখান থেকে তিনি কিভাবে বের হবেন, সেই পদ্ধতিগুলো শেখানো হয়।

ওসিডি’র চিকিৎসা প্রসঙ্গে সুরজিৎ রায় বলেন, ওসিডির ক্ষেত্রে সাইকোথেরাপি, ফার্মাকোথেরাপি বা এই দুইয়ের কম্বিনেশনের কথা বলা হয়। তবে গবেষণা বলছে, দুই পদ্ধতির সমন্বিত চিকিৎসা পদ্ধতি যাদের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ফল ভালো এসেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারাহ দিবা মনে করেন, এটি ডিপ্রেশনের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি রোগ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাংলাদেশে ডিপ্রেশনের পরিমাণ বেশি বলেই আমাদের দেশে ইনজুরিতে যত মানুষ মারা যায়, আত্মহত্যার ঘটনা তারচেয়েও বেশি। আমরা জাতিগতভাবে ডিপ্রেশনে ডুবে যাচ্ছি এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে মোটেই আমরা সতর্ক না। তিনি আরও বলেন, ওসিডি সিনড্রমের কারণে জাতীয় পর্যায়ে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। ওসিডি সিনড্রমে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা কিভাবে আচরণ করবেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে কারণে তার চাপ তৈরি হচ্ছে পরিবারের সদস্যরা চেষ্টা করবেন সেটা কমাতে। সিনড্রম যখন চোখে পড়ে তখন অন্যান্য সমস্যাগুলো না কমাতে পারলে সিনড্রম কমানো যাবে না। সে কারণে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিন্তার পরিবর্তন করলে রোগী ভালো থাকবে ভাবা হয় কিন্তু সেটা করতে রোগীকে জোর দেওয়া যাবে না। এই সমস্যা নিয়ে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই।

মনোচিকিৎসক মেখলা সরকার ওসিডি নিয়ে গবেষণা জরুরি উল্লেখ করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওসিডির শিকার ব্যক্তি যেন আশপাশের মানুষের জন্য চাপের কারণ না হয়ে ওঠেন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা, তার চারপাশটা সহনশীল না হলে তিনি এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে পারবেন না। যেকোনও ধরনের ডিসঅর্ডারের যথাযথ চিকিৎসা জরুরি। এইক্ষেত্রে যেহেতু তিনি চিন্তাশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হন, তাই তাকে অনেক বেশি পরিচর্যার মধ্যে রাখতে হয়।’
আরও পড়ুন-
বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস আজ
খুমেক হাসপাতালে মানসিক ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা: ৫ কোটি লোকের জন্য ২২০ জন চিকিৎসক

/ইউআই/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান গ্রেফতার
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান গ্রেফতার
খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ না করায় রাজশাহী বিভাগে ৬১টি চালকলের লাইসেন্স বাতিল
খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ না করায় রাজশাহী বিভাগে ৬১টি চালকলের লাইসেন্স বাতিল
কক্সবাজারে নতুন আসা এক লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গার নিবন্ধন, ক্যাম্পে জায়গা নেই
কক্সবাজারে নতুন আসা এক লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গার নিবন্ধন, ক্যাম্পে জায়গা নেই
টিভিতে আজকের খেলা (৬ মে, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৬ মে, ২০২৫)
সর্বাধিক পঠিত
ঝকঝকে ত্বক পেতে যেভাবে ব্যবহার করবেন চিয়া সিড
ঝকঝকে ত্বক পেতে যেভাবে ব্যবহার করবেন চিয়া সিড
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের জানাজা পড়ালেন ছেলে, প্রিয় আইনাঙ্গন থেকে শেষ বিদায়
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের জানাজা পড়ালেন ছেলে, প্রিয় আইনাঙ্গন থেকে শেষ বিদায়
স্বর্ণালঙ্কার তৈরির মেশিনেই মিললো স্বর্ণ
স্বর্ণালঙ্কার তৈরির মেশিনেই মিললো স্বর্ণ
এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের চাপে আওয়ামীপন্থি ৬ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল
এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের চাপে আওয়ামীপন্থি ৬ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল
চেম্বার থেকে নারী চিকিৎসককে টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় এনে মারধর
চেম্বার থেকে নারী চিকিৎসককে টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় এনে মারধর