X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধান বিচারপতির চিঠি: পক্ষে-বিপক্ষে যা বললেন আইনজীবীরা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৯ অক্টোবর ২০১৭, ২৩:২৬আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০১৭, ২৩:৩০

সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করতে চেয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।এই অনুসন্ধান বন্ধ করতে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া চিঠি কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে জারি করা রুলের ওপর শুনানি শুরু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি শরু হয়।

শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া চিঠির বিপক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অন্যদিকে বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের পক্ষে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন তার মতামত পেশ করেন।

এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৪ অক্টোবর রবিবার বেলা দুটায় সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন,আর দুদকের পক্ষে অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান এবং সুপ্রিম কোর্টের চিঠি আদালতের নজরে আনা আইনজীবী অ্যাডভোকেট বদিউজ্জামান।

এছাড়া, অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া তিন আইনজীবী- সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট প্রবীর নিয়োগী ও সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘একজন বিচারক সাংবিধানিক পদে ছিলেন বলে তিনি দায়মুক্তি পেতে পারেন না। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ১৯৭৫ সালে যেমন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়, ঠিক তেমনি সুপ্রিম কোর্টের এ চিঠি।’

তিনি বলেন, ‘ফুল কোর্টের সিদ্ধান্ত ছাড়া প্রধান বিচারপতি এভাবে চিঠি দিতে পারেন না। এ চিঠি দেওয়ার এখতিয়ার তার নেই। এ চিঠির মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।’ অসৎ উদ্দেশ্যে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

এ সময় আদালত তার কাছে জানতে চান, সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনিক কোনও আদেশের বিচার করার এখতিয়ার হাইকোর্টের আছে কিনা? জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘ক্ষমতা বহির্ভূত কোনও আদেশ দেওয়া হলে, তা দেখার এখতিয়ার হাইকোর্টের রয়েছে।কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।উপযুক্ত সময় ও পরিবেশেই আদালত এ বিষয়ে রুল জারি করেছেন। যদিও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সব তথ্যই দুদককে সরবরাহ করেছে। তারপরও এবিষয়ে একটি আদেশ থাকা প্রয়োজন।’
এরপর শুনানিতে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন,‘সুপ্রিম কোর্টের চিঠিতে বলা হয়েছে যে, তদন্ত করা সমীচীন হবে না। কিন্তু দুদককে অনুসন্ধান বা তদন্ত বন্ধ করতে বলা হয়নি। আর এ চিঠির পর দুদক থেমেও থাকেনি। তারা তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টও সব তথ্য দিয়েছে। তাই ওই চিঠির আর কার্যকারিতা নেই।’
তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্যই এ চিঠি দিয়েছেন। কোনও ব্যক্তিকে রক্ষার জন্য নয়। কারণ, বিচার বিভাগ খুবই স্পর্শকাতর জায়গা।’

তিনি বলেন, ‘দুদক চার থেকে পাঁচ বছর ধরে তাকে হয়রানি করেছে। সম্পদের তথ্য চেয়েছে।বিচারপতি জয়নুল আবেদীন কয়েকদফা সম্পদের তথ্য দিয়েছেন।এরপর গত ৭ বছর দুদক চুপচাপ ছিল। এখন এসে আবার তথ্য চেয়েছে। এর উদ্দেশ্য কী?’ 

এ সময় আদালত তাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, আদালত কাউকে দায়মুক্তি দিতে পারে কিনা? জবাবে মইনুল হোসেন বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের ওই চিঠিতে তো বিচারপতি জয়নুল আবেদীনকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়নি।’

শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘যেকোনও একটি রায় হলেই তার সমালোচনা-আলোচনা হচ্ছে।পক্ষে-বিপক্ষে হলো কিনা,তা দেখা হচ্ছে। রায় পক্ষে গেলে ঐতিহাসিক, আর বিপক্ষে গেলে ফরমায়েশি হয়ে যাচ্ছে। রায়ের বিরুদ্ধে মানববন্ধন- ধর্মঘট করা হচ্ছে।’

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘গত ২৮ মার্চ অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুনাভ চক্রবর্তী দুদককে চিঠি দেন। তাতে বলা হয়, নির্দেশিত হয়ে জানানো যাচ্ছে... (চিঠিটি পড়ে শোনান)। এ চিঠি প্রাপ্তির পর অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান ব্যক্তিগতভাবে অরুনাভ চক্রবর্তীর সঙ্গে দেখা করেন। এবিষয়ে হাফিজুর রহমানের লেখা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, অরুনাভ চক্রবর্তী তাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন যে, প্রধান বিচারপতির নির্দেশে তিনি ওই চিঠি দেন।’

আদালত বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট সব তথ্য দিয়েছে। এরপর কি আর এ ধরনের চিঠির গুরুত্ব আছে?’

জবাবে খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘এখন প্রশ্ন হলো, সুপ্রিম কোর্ট দুদককে এ ধরনের চিঠি দিতে পারে কিনা?’

তিনি বলেন, ‘দুদক আইনের ১৯(৩) ধারা অনুযায়ী দুদকের কাজে বাধার সৃষ্টি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এজন্য তিন বছর সাজা হতে পারে।’

আদালত বলেন, ‘আপনি লিখিতভাবে বলেছেন যে, দুদকের কাজে বাধা দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এক্ষেত্রেও সেটা প্রযোজ্য?’

খুরশীদ আলম খান জবাবে বলেন, ‘আইনে আছে। তবে দুদক এখনও এ ধারা প্রয়োগ করেনি। এক্ষেত্রেও অতদূর যেতে চাচ্ছি না। তবে সুপ্রিম কোর্টের এ চিঠির ব্যাপারে আদালতের সিদ্ধান্ত না পাওয়া গেলে ভবিষ্যতে অন্যরাও সুযোগ নেবে।’

এ পর্যায়ে আদালত শুনানি মূলতবি করে ২২ অক্টোবর পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন দেন।

গত ৯ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট বদিউজ্জামান তফাদার সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের দেওয়া ২৮ মার্চের চিঠির বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন।

এরপর আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। রুলে ওই চিঠি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, দুদক চেয়ারম্যান, আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী ও বিচারপতি জয়নুল আবেদীনকে দশ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

আরও পড়ুন: ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো নিয়ে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের হাতাহাতি (ভিডিও)

/এজেডখান/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বৃষ্টির অপেক্ষায় নার্সারি ও গাছপ্রেমীরা
বৃষ্টির অপেক্ষায় নার্সারি ও গাছপ্রেমীরা
নিজ্জর হত্যার অভিযোগে কানাডায় তিন ভারতীয় গ্রেফতার
নিজ্জর হত্যার অভিযোগে কানাডায় তিন ভারতীয় গ্রেফতার
পিকআপের পেছনে ট্রাকের ধাক্কা, উল্টে গিয়ে ২ শ্রমিক নিহত
পিকআপের পেছনে ট্রাকের ধাক্কা, উল্টে গিয়ে ২ শ্রমিক নিহত
নবযুগ প্রকাশনীর কর্ণধার অশোক রায় নন্দী মারা গেছেন
নবযুগ প্রকাশনীর কর্ণধার অশোক রায় নন্দী মারা গেছেন
সর্বাধিক পঠিত
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ সাত দফা দাবি সরকারি কর্মচারীদের
নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ সাত দফা দাবি সরকারি কর্মচারীদের
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে