X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

ডাকসুর ১১ কোটি টাকা কোথায়

রশিদ আল রুহানী
০৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ২১:৩০আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৮:৪৬

প্রতি বছর ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ডাকসুর নামে নেওয়া টাকার রশিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন হয় না দীর্ঘ ২৭ বছর। তবুও প্রতি বছর এই সংগঠনের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয় ফি। একইসঙ্গে রাখা হয় আলাদা বরাদ্দ। এভাবে গত ২৭ বছরে বিশ্ববিদ্যালয় কোষাগারে ১১ কোটি টাকা অর্থ জমা হয়েছে বলে দাবি ঢাবি শিক্ষার্থীদের। অথচ আদায় করা এ টাকার কোনও হিসাব নেই প্রশাসনের কাছে। ডাকসু সচলে আন্দোলনকারী ও সাধারণ শিক্ষার্থী আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

ডাকসুর সবশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯০ সালের ৬ জুন। ১৯৯১ সালের ১৮ জুন আবারও এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও রাজনৈতিক কারণে তা হয়নি। এরপর দীর্ঘ ২৭ বছরেও সংগঠনটির নির্বাচন চোখে দেখেননি শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানায়, বর্তমানে ঢাবিতে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী আছে। এখানে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয় প্রায় সাড়ে ৭ হাজার শিক্ষার্থী। প্রতি বছর ভর্তির সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ডাকসু ও হল ছাত্র সংসদের নামে ৬০ টাকা করে মোট ১২০ টাকা নেওয়া হয়। এছাড়া দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, মাস্টার্স ও এমফিলসহ অন্যান্য কোর্সে ভর্তি হওয়ার সময়ও আদায় করা হয় একই পরিমাণ অর্থ।

১৯৯১ সাল পর্যন্ত ওই দুই খাতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নেওয়া হতো ৪০ টাকা করে। ১৯৯২ সালে এই অর্থের পরিমাণ বাড়িয়ে করা হয় ৬০ টাকা। তবে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত বর্তমান সময়ের চেয়ে শিক্ষার্থী কম ছিল।

ডাকসুর নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মন্তব্য— এই হিসাব অনুযায়ী এ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭ কোটি টাকা।

ডাকসুর অস্তিত্ব না থাকলেও প্রতি বছর সরকারের বাজেট থেকে ডাকসু ও হল ছাত্র সংসদের জন্য কমবেশি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। ঢাবি শিক্ষার্থীদের মতে, বরাদ্দ অনুযায়ী অন্তত ৪ কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোষাগারে থাকার কথা।

বাজেট বইয়ের তথ্যানুযায়ী, সবশেষ ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ডাকসুর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। একই অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১৮টি আবাসিক হলে ছাত্র সংসদের জন্য ২৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। আর ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা।

ডাকসু ভবনের বহির্ভাগ (ছবি-আদিত্য রিমন) কিন্তু কোষাগারে ডাকসু বাবদ কোনও টাকা জমা নেই উল্লেখ করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দীন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৬০+৬০ টাকা ১২০ নয়, বরং মাত্র ৫+৫ মাত্র ১০ টাকা করে নেওয়া হয়। এতে ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য আসে মাত্র ২ লাখ টাকা। এর চেয়ে অনেক বেশি টাকা আমরা ছাত্রদের উন্নয়নে খরচ করি।’

কিন্তু ‘উন্নয়নে’র নির্দিষ্ট খরচের খাত চাইলে জানতে চাইলে ঢাবি কোষাধ্যক্ষ পরে কথা বলবেন বলে মোবাইল ফোনের লাইন কেটে দেন। ঢাবিতে কর্মরত কয়েকজন সংবাদকর্মীর অভিযোগ, কোষাধ্যক্ষর কাছে অর্থ অধিকার আইনে ডাকসুর টাকার তথ্য চাইলেও তিনি তা দেননি।

ক্যাম্পাসে কর্মরত সংবাদকর্মী আশিক আব্দুল্লাহ অপু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কয়েকমাস আগে তথ্য অধিকার আইনের আবেদনপত্রে টাকার হিসাব চেয়ে চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু কোষাধ্যক্ষ আমাকে ডেকে নিয়ে বলেন— বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডাকসুর টাকা নিয়মিত ছাত্রদের কল্যাণেই খরচ করেন। হলের বরাদ্দের টাকা হলেই পাঠানো হয়। লিখিত কোনও হিসাব তিনি দিতে চাননি।’

কিন্তু এই বরাদ্দের এক টাকাও আবাসিক হলে দেওয়া হয় না বলে জানিয়েছেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান। তার ভাষ্য, ‘আমি এই দায়িত্বে আছি চার বছর হলো। এই চার বছরে একবারও ডাকসুর জন্য বরাদ্দের টাকা পাইনি।’

নিয়ম অনুযায়ী ডাকসুর নির্বাচিত ভিপি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর ছাড়া ছাত্র সংসদ তহবিলের টাকা তোলা যায় না। নির্বাচন না হওয়ায় ভিপি নেই। তাই শিক্ষার্থীদের দাবি— যেহেতু টাকা খরচ হয় না সেহেতু গত ২৭ বছরে অন্তত ১১ কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলে থাকার কথা।

এদিকে ডাকসু ও হল সংসদ কার্যকর না থাকার পরও চাঁদা আদায়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতারা। অবিলম্বে ছাত্র সংসদ কার্যকর করার দাবি উঠেছে তাদের পক্ষ থেকে। দীর্ঘদিন ধরে ডাকসু সচল করার আন্দোলনে বেশ কয়েকবার রাস্তায় নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।

অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে কয়েকদিন আগে থেকে আমরণ অনশনে বসেছেন ওয়ালিদ আশরাফ নামের এক শিক্ষার্থী। গত ২৫ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তনে (ভিসি চত্বর) একাই অনশনে নেমে পড়েন ঢাবি’র সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সান্ধ্যকালীন স্নাতকোত্তর কোর্সের এই ছাত্র। ১০ দিন ধরে তিনি অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।

ডাকসুর নির্বাচন দেওয়ার দাবি প্রসঙ্গে ওয়ালিদ আশরাফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডাকসু আমাদের অধিকার। ডাকসু নির্বাচন কোনও দাবি হতে পারে না, এটা স্বাভাবিক নিয়মেই হওয়ার কথা। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখতে ডাকসু নির্বাচন দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নৈতিক দায়িত্ব।’

ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম ছাত্র সংগঠনগুলো এ দাবিকে সমর্থন দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষকও এ দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন।

ঢাবি শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি তুহিন কান্তি দাস এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বলেন, ‘আগামী ১৩ ডিসেম্বর উন্মুক্ত আলোচনার আয়োজন করবো আমরা। ওইদিন ডাকসুর সাবেক সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদকদেরও থাকার কথা রয়েছে। এর উদ্দেশ্য ডাকসুর আন্দোলনকে আরও জোরদার করা।’

এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সামিনা লুৎফা নিত্রা বললেন, ‘এই আন্দোলন ওয়ালিদ আশরাফের একার নয়, এটি আমাদের সবার হওয়া উচিত।’

 

 

/আরএআর/জেএইচ/আপ-/এসএসএ/
সম্পর্কিত
সেন্ট জোসেফ স্কুলে তিন দিনব্যাপী লিট ফেস্টিভ্যাল শুরু
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
সর্বশেষ খবর
ছেলের মৃত্যুর ৪ দিনের মাথায় চলে গেলেন বাবা, গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া
ছেলের মৃত্যুর ৪ দিনের মাথায় চলে গেলেন বাবা, গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া
গাজা ও ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
গাজা ও ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
অনেক নার্ভাস ছিলেন সাইফউদ্দিন
অনেক নার্ভাস ছিলেন সাইফউদ্দিন
বকশিবাজার মোড়ে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
বকশিবাজার মোড়ে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা