X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারি হাসপাতালের বেডশিট যে কারণে অপরিচ্ছন্ন

তাসকিনা ইয়াসমিন
২১ জানুয়ারি ২০১৯, ২৩:২৬আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০১৯, ২৩:২৬





 শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্যানসার ওয়ার্ডটি ব্যতিক্রম। রোগীদের প্রত্যাশা এধরনের পরিচ্ছন্ন বিছানা

দেশের বেশিরভাগ সরকারি হাসপাতালে বিছানার চাদর অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা দেখা যায়। বিভিন্ন সময় হাসপাতালের ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে সরেজমিনে দেখা গেছে, বিছানার চাদরে লেগে আছে কালচে দাগ, কোথাও রক্তের দাগ। আবার কোনোটা কুঁচকানো, কোনোটা ছেঁড়া। এমনও দেখা গেছে, রোগী হাসপাতালে ভর্তির পর যতদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন, ততদিনে বেডশিট আর বদলানো হয়নি। সরকারি হাসপাতালে এ অবস্থার জন্য বাজেটের ঘাটতি, হাসপাতালের সক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী এবং  দেখভালের সঙ্গে জড়িতদের অবহেলাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। 


স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি আছেন তহুরুন বেগম (৭০)। পায়ের হাড় ভেঙে যাওয়ায় এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। তার বেডের কাছে গিয়ে দেখা যায়— বিছানার চাদরটি ভীষণ ময়লা, কতদিন ধরে ধোয়া হয়নি বলা মুশকিল। একই হাসপাতালেই ভর্তি আছেন আমেনা বেগম (৩০)। তার বেডেরও একই অবস্থা। বেডশিট নোংরা হয়ে আছে। আমেনার পাশের বেডের আনোয়ারা বেগম পেটে পাথর নিয়ে  ভর্তি হয়েছেন। তার বিছানার চাদরও অপরিষ্কার। এই চিত্র শুধু  মিটফোর্ড হাসপাতালেই— দেশের বেশিরভাগ সরকারি হাসপাতালে বেডশিটের অবস্থা খুব করুণ।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল,এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-এর কোনও কোনও ওয়ার্ডে গিয়ে নোংরা বেডশিট দেখা গেছে।ঢাকার বাইরের হাসপাতালের অবস্থা আরও করুণ। রোগীর জীবন যেখানে জীবাণুর সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে, সেখানে বেডশিটের এই অবস্থা কেন? কেনই বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এগুলো পরিচ্ছন্ন রাখতে পারছেন না, বা রাখছেন না। এ প্রসঙ্গে চিকিৎসকরা বলছেন— চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে অসঙ্গতি আছে। সাধারণত প্রতিটি বেডের বিপরীতে দুটি করে বেডশিট বরাদ্দ  থাকে। কিন্তু যতগুলো বেড তার চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি থাকে, যে কারণে সবকিছু ঠিকমতো সমন্বয় করা যায় না। আবার এগুলো পরিষ্কার ও  ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যারা জড়িত,তাদেরও দায়িত্বে অবহেলা রয়েছে।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ব্রায়ান বঙ্কিম হালদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই বেডশিটগুলো মার্কিন কাপড়ের তৈরি। এই কাপড়ের রঙই হচ্ছে একটু ডার্টি। আর এগুলো আমরা টেন্ডারের মাধ্যমে কিনে থাকি। টেন্ডারের মাধ্যমে কিনতে গেলে সবসময় কম মূল্যেরটাই আমাদের নিতে হয়। ফলে  ভালো কোয়ালিটি পাওয়া যায় না।’ ‘ তিনি বলেন, ‘ আপনিও বুঝবেন, যখন হাজার হাজার রোগীকে এগুলো দিতে হয়, তখন আমরা কোয়ালিটি মেইনটেইন করতে পারি না। এটা তো আপনার বাসা-বাড়ি না যে, চারটা-পাঁচটা বিছানা দিলেই হয়ে গেলো। এটা আমরা যখন প্রকিওর করি, তখন আমরা সেরকম ফেন্সি জিনিস কিনি না। একটা ডিউরেবল জিনিস কিনতে হয়।’ 
মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘এগুলো আমাদের কাছে পর্যাপ্ত থাকে। আমরা প্রতিবছর দুই-এক হাজার করে কিনি। এগুলো যারা ব্যবহার করছেন, সিস্টাররা সাধারণত ওয়ার্ড মেইনটেইন করেন— এটা তাদেরও দেখার বিষয়। তারাও অনেক সময় ঠিকমতো দেখেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘চাদরগুলো ধোয়ার জন্য আমরা টেন্ডার দিই। এটা তো বাসাবাড়ি না যে, সার্ফ এক্সেল দিয়ে ধুয়ে দিলাম। যারা টেন্ডার নেয়, তারা সোডা দিয়ে ধুয়ে থাকে। এগুলো যদি একবার সোডা দিয়ে সেদ্ধ করে ধোয়া হয়, নতুন চাদর হলেও দেখা যাবে যে, এটা কালো হয়ে গেছে। বিভিন্ন কারণে আসলে বেডশিটগুলো এমন থাকে। আমাদের বেডশিটের কোনও শর্টেজ নেই। আমরা প্রচুর কিনি এবং স্টকেও আছে।’

ব্রায়ান বঙ্কিম হালদার বলেন,  ‘আমাদের হাসপাতালে নিজস্ব ওয়াশিং প্ল্যান্ট নেই। কোনও একটা কারণ নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না যে বেডশিট কেন নোংরা! বিছানাপত্র-চাদর, চেয়ার-টেবিল এগুলো ডাক্তারি বিদ্যা দিয়ে বলা যাবে না যে, গুণগত মান ধরে রাখাটা অন্তরায়।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হেলথ রাইটস মুভমেন্টসের  প্রেসিডেন্ট ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাজেট এবং রোগীর ভারসাম্য না থাকাই এটার বড় কারণ। এছাড়া, এগুলো পরিষ্কার করারও একটা ব্যাপার আছে। চিকিৎসকের জন্য রোগীর সেবা দেওয়া এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা দুটো এক বিষয় না। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার জন্য যে কাজ করার কথা, সেটা না করলে এই সমস্যাগুলো থাকবেই। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার জন্য যে কাজগুলো করা দরকার— সেগুলো ঠিকমতো না করলে শুধু অপরিচ্ছন্ন বেডশিট কেন, বাল্ব কয়টা আছে, ফ্যান কয়টা আছে, খাট ভাঙার ব্যাপার আছে— এই ধরনের বহুবিধ ব্যাপার আছে। এগুলো সবই মিস ম্যানেজমেন্টের কারণেই হয়।’ 
তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন বাজেট আছে। ওষুধের টাকা দিয়ে তো অন্য কিছু করা হবে না। একইভাবে প্রত্যেক হাসপাতালের বেড-এর বিপরীতে কিছু বেডশিট দেওয়া হয়। যখন বেশি রোগী চলে আসে, তখন আর ঠিকমতো কাজ করা যায় না। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে প্রত্যেক হাসপাতালের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য-সামগ্রী সংগ্রহ করতে হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরকারের একটি সমঝোতা হওয়া দরকার যে, ভালোভাবে চালাতে পারলেই তোমরা এই বাজেটের বরাদ্দ পাবে ।’

ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, ‘তবে এ খাতে অবশ্যই বাজেট বাড়াতে হবে এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটাতে হবে।’

 

 

 

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
১০ বাংলাদেশিকে সীমান্ত এলাকা থেকে মিয়ানমারে অপহরণ
১০ বাংলাদেশিকে সীমান্ত এলাকা থেকে মিয়ানমারে অপহরণ
তিন মামলায় মিল্টনের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
তিন মামলায় মিল্টনের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
ভারতের ভোটে বিজেপির পক্ষে কি ‘৪০০ পেরোনো’ আদৌ সম্ভব?  
ভারতের ভোটে বিজেপির পক্ষে কি ‘৪০০ পেরোনো’ আদৌ সম্ভব?  
বিশ্বকাপ দল নিয়ে লুকোচুরি কেন?
বিশ্বকাপ দল নিয়ে লুকোচুরি কেন?
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে