প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে ফুল নিয়ে আগ্রহের কোনও কমতি নেই। এই ফুল নিয়ে কত কবিতা, কত না রহস্য। ফুলের রূপেরও নেই কোনও শেষ। হরেক রঙ আর রূপের ফুল ছেয়ে থাকে ডালে ডালে। কখনো সে ফুল হলুদ, কখনও বেগুনি, কখনো নীল কিংবা কখনোবা রক্ত রাঙা লাল। ফুলের মায়ায় ঈশ্বরের উদ্দেশে কবিগুরু লিখেছেন-
ফুলের মতন আপনি ফোটাও গান,
হে আমার নাথ, এই তো তোমার দান।
ওগো সে ফুল দেখিয়া আনন্দে আমি ভাসি,
আমার বলিয়া উপহার দিতে আসি।
তবে ধুলো আর শব্দের এই নগরীতে হরেক রঙের ফুলের দেখা পাওয়া বেশ কঠিন। তাই ফুল দেখতে হলে যেতে হবে পার্ক কিংবা লেকের পাড়ে। কারণ নির্দিষ্ট ওই সব জায়গা ছাড়া নানা বর্ণের ফুলের দেখা সহজে মেলে না।
আর গ্রীষ্মকাল হচ্ছে বিভিন্ন বর্ণ, আকার ও সুগন্ধের ফুল দেখা ও ফুলের রূপ-রসে আকুল হওয়ার আসল সময়। কারণ এ সময় সূর্যের প্রখরতাকে হার মানিয়েও সবুজ পাতার ফাঁক গলে উঁকি দেয় হরেক রঙ ও রূপের ফুল।
এসময় গাছে গাছে কৃষ্ণচূড়ার ফুল দেখে মনে হয় গ্রীষ্মের খরতাপের সঙ্গে ডালে ডালে আগুন লেগেছে। এই কৃষ্ণচূড়ার আরেক নাম ‘গুলমোহর’। সড়কের দু’পাশে বিশাল বিশাল ছাতার মতো নিজেকে মেলে ধরে এই বৃক্ষ। আর তার ডালে ডালে শোভা পায় আগুন লাল কৃষ্ণচূড়ার ফুল। কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্যে মুগ্ধ জাতীয় কবি কাজী নজরুল লিখে রেখে গেছেন-
‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-
আমি ভুবন ভোলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’
ঢাকার বিভিন্ন পার্কে ও সড়কের পাশে দেখা যায় এই গাছ। ঢাকায় কৃষ্ণচূড়ার সবচেয়ে বড় সভা দেখা যায় সংসদ ভবন এলাকায়, এরপর রমনা পার্কে। গ্রীষ্মকালে সড়কের দু’পাশে ছাতার মতো নিজেকে মেলে দিয়ে আগুনের খেলায় মেতে ওঠে কৃষ্ণচূড়া। ভোরের নরম আলো, তপ্ত দুপুর কিংবা সন্ধ্যা নামার আগেও কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন নগরবাসী।
শুধু সংসদ ভবনের ক্রিসেন্ট লেকের পাশে নয় এই ফুলের দেখা মেলে এয়ারপোর্ট রোড, সাতমসজিদ রোড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, হাতিরঝিল, রমনা উদ্যান, মিন্টো রোড এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও। এছাড়া ঢাকার অনেক এলাকার সড়কে চলার পথে আশপাশে তাকালেও দেখা মেলে কৃষ্ণচূড়ার।
রাজধানীর রমনা পার্কে কৃষ্ণচূড়ার পাশাপাশি আরও হরেক রঙয়ের ফুলের দেখা মেলে। এরই একটি রাধাচূড়া। এরা দেখতে কৃষ্ণচূড়ার মতোই। তবে এদের রং হলুদ। রমনা পার্ক ছাড়াও অল্প কিছু এলাকায় দেখতে পাওয়া যায় এই ফুল।
মুসান্ডা: এই ফুলের রং দুটি। একটি সাদা ও একটি গোলাপি।
নাগলিঙ্গম: নাগালিঙ্গম একটি ভিন্ন প্রজাতির ফুল। বাংলাদেশের খুব কম জায়গায় এই ফুল দেখতে পাওয়া যায়। এই গাছে ফুল ধরার পর বেলের মতো গোল গোল ফল ধরে। এগুলো হাতির খুবই প্রিয় খাবার। এজন্য এর অন্য নাম হাতির জোলাপ গাছ।
মাধবীলতা: ফুলটির পাপড়ি অত্যন্ত ছোট। এর রং রক্ত লাল। অনেকে এই ফুল মাটিতে পড়ে থাকতে দেখলে অথবা গাছ থেকে ছিড়ে খোপায় কিংবা কানের পাশে পড়িয়ে রাখে।
এছাড়া বেগুনি রঙয়ের জারুল, হলুদ কসমস এবং কাঁঠালচাঁপা, সোনালু, লতা করবী, সিলভিয়া ও জিনিয়ার মতো ফুলও দেখা যায় এই এলাকায়। শুধু হরেক রঙয়ের এই ফুলগুলো দেখতে প্রতিদিন সকালে ও বিকালে আসে প্রকৃতিপ্রেমীরা।
ছবি: নাসিরুল ইসলাম ও সাজ্জাদ হোসেন।