X
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
৩০ বৈশাখ ১৪৩২

হলুদে সিসা: সব কোম্পানিকে পরীক্ষা করে বাজারজাতের নির্দেশনা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০২ অক্টোবর ২০১৯, ২০:৪৭আপডেট : ০২ অক্টোবর ২০১৯, ২১:২৬

হলুদের মধ্যে সিসা পাওয়ায় সব মহলের উদ্দেশ্যে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের গণবিজ্ঞপ্তি

কাঁচা হলুদ বা হলুদের গুঁড়ায় সিসার ব্যবহার না করতে সতর্কতামূলক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। বুধবার (১০ অক্টোবর) এই গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এতে বলা হয়, হলুদে বিদ্যমান সিসা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সম্প্রতি গবেষণায় বাংলাদেশের গর্ভবতী নারীদের রক্তে উচ্চমাত্রায় সিসার (লেড) উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হলুদ (শুকনা বা গুড়া) প্রক্রিয়াজাতকরণে কোনও ধরনের রঙ বা উজ্জ্বলকারক ব্যবহার বা সংযোজন বা মিশ্রণে বিরত থাকার জন্য উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দিয়েছে সংস্থাটি। এর পাশাপাশি হলুদ উৎপাদনকারী সব কোম্পানিকে পরীক্ষা করে বাজারজাতের নির্দেশনা দিয়েছে সংস্থাটি। একইসঙ্গে ভোক্তাদের নিজ উদ্যোগে কম উজ্জ্বল কাঁচা হলুদ গুড়া বা বেটে ব্যবহার করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।

যে কোনও ধরনের খাদ্যে ভেজাল, দূষণ ও খাদ্য সংযোজন দ্রব্যের (ফুড অ্যাডিটিভস) নিরাপদ মাত্রা অতিক্রম করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের। সম্প্রতি আইসিডিডিআর,বি ও যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এক যৌথ গবেষণায় বাংলাদেশের গর্ভবতী নারীদের রক্তে উচ্চমাত্রায় সিসার (লেড) উপস্থিতি পায়। এ সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রবন্ধ এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এ গবেষণার পরবর্তী ধাপে রক্তে সিসার উৎস অনুসন্ধানে খাবার হলুদে সিসার মিশ্রণ (দূষণ) প্রমাণিত হয়।

গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, খাবার জন্য ব্যবহৃত শুকনো বা গুঁড়া হলুদে প্রাপ্ত সিসার উৎস হচ্ছে অবৈধভাবে ব্যবহৃত রঙ বা উজ্জ্বলকারক লেড ক্রোমেট (PbCro4) যা স্থানভেদে ‘পিউরি’, ‘পিপড়ি’, ‘বাসন্তি রং’, ‘কাঁঠালি’ বা ‘সরষে ফুল রঙ’ নামে পরিচিত। হলুদে বিদ্যমান সিসা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ অনুযায়ী সব মশলা উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীদের হলুদ (শুকনা বা গুড়া) প্রক্রিয়াজাতকরণে কোনও ধরনের রঙ বা উজ্জ্বলকারক ব্যবহার বা সংযোজন বা মিশ্রণে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।

হলুদে সিসা পাওয়ায় গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ

মানব শরীরে সিসার ক্ষতিকারক দিক তুলে ধরে গণবিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, লেড ক্রোমেট বা উজ্জ্বলকারকে বিদ্যমান সিসা একটি বিষ যা স্নায়ু ও মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি করে ও অকাল মৃত্যু ঘটায়। সিসার দূষণ বৃদ্ধি বিকাশে অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করে, এমনকি জন্মের পূর্বে সিসার সংস্পর্শ পরবর্তীতে শিশুর বুদ্ধিমত্তা হ্রাস করে। রক্তে সিসার কোনও সহনীয় মাত্রা নেই, যদিও রক্তে সিসার প্রচলিত (ইউএসএ) মাত্রা হলো ৫ মাইক্রোগ্রাম/ডেসি.লি।

সিসার কারণে যেসব রোগ হয় তার মধ্যে আছে:

* পরিপাকতন্ত্রের জটিলতা (কোষ্ঠকাঠিন্য, বমিভাব, ক্ষুধামন্দা, অরুচি), হৃদ-রক্তনালীর রোগ (রক্তশূন্যতা, উচ্চ রক্তচাপ) ইত্যাদি বৃদ্ধি করে।

* দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে।

* শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত করে ও প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিভ্রম, মাথাব্যথা, বিষন্নতা ও মনো-স্নায়ুবিক বৈকল্য সৃষ্টি করে।

* হরমোনজনিত রোগ বাড়ায়।

গণবিজ্ঞপ্তিতে হলুদের উৎপাদনকারী, সরবরাহকারী, পরিবেশনকারী, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা এবং গ্রাহককে এ ধরনের দূষণযুক্ত পণ্য (হলুদ) উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, মজুত, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয় এবং ব্যবহার না করার জন্য সতর্ক করেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে সব উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে তাদের উৎপাদিত পণ্যে (হলুদ) সিসার অনুপস্থিতি নিশ্চিত করে বাজারজাত করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে সংস্থাটি।

প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত আস্ত হলুদ স্ব-উদ্যোগে গুড়া/পেস্ট করে খাদ্যে ব্যবহার করা অধিক নিরাপদ বিবেচনায় তা সর্বসাধারণকে অনুসরণ করার জন্য উৎসাহিত করা হলো।

এই গণবিজ্ঞপ্তি প্রচারের পরে কোনও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত হলুদে (শুকনো বা গুড়া) ক্ষতিকর রাসায়নিক লেডক্রোমেটের (সিসা) উপস্থিতি প্রমাণিত হলে দায়ী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

গণবিজ্ঞপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মাহবুব কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মানুষের রক্তে সিসার সংমিশ্রণ হলুদ থেকে যে হচ্ছে এটা বোঝা গেছে। আমরা পরীক্ষায় দেখেছি রক্তের মধ্যে যে সিসা পেয়েছি সেটা হুবহু পেয়েছি আমরা হলুদের মধ্যে। তার মানে লেড ক্রোমেট হলুদের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে।  হলুদে লেড ক্রোমেট ব্যবহার করা হয় এর উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য।

তিনি আরও বলেন , আমাদের দেশে শিল্প খাতের জন্য বছরে প্রায় ৬০০ মেট্রিক টন লেড ক্রোমেট আমদানি হয়। এই পরিমাণ লেড ক্রোমেট দেশে কোন শিল্পে ব্যবহৃত হয় এটা কারও জানা নেই। এই রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ না করা পর্যন্ত এই মিশ্রণকারীদের ধরা বা বন্ধ করা সম্ভব হবে না। আমাদের আগে সোর্স বন্ধ করতে হবে। আমদানি পর্যায়ে এ বিষয়ে কড়াকড়ি কিভাবে আরোপ করা যায় আমরা সেটা নিয়েও ভাবছি। পৃথিবীর প্রায় সব দেশই লেড ক্রোমেটের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে। আমরাও সেদিকে যাবো। এরপর যদি কারও প্রোডাক্টে সিসার উপস্থিতি পাওয়া যায় তাহলে খাদ্যে দূষণের অপরাধে সর্বনিম্ন ৩ লাখ টাকা জরিমানাসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

/এসও/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জুলাইয়ে বাংলাদেশে গণহত্যা হয়েছে, জেনোসাইড হয়নি: চিফ প্রসিকিউটর
জুলাইয়ে বাংলাদেশে গণহত্যা হয়েছে, জেনোসাইড হয়নি: চিফ প্রসিকিউটর
জাতীয় সংগীতের অবমাননা ও একাত্তরকে উপেক্ষাকারীদের রাজনীতি বুমেরাং হবে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
জাতীয় সংগীতের অবমাননা ও একাত্তরকে উপেক্ষাকারীদের রাজনীতি বুমেরাং হবে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
বৃহৎ বিনিয়োগের আশায় ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু, পৌঁছালেন সৌদি আরব
বৃহৎ বিনিয়োগের আশায় ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু, পৌঁছালেন সৌদি আরব
চিকিৎসাসেবার পরিবেশ নিরাপদ রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
চিকিৎসাসেবার পরিবেশ নিরাপদ রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
সর্বাধিক পঠিত
পররাষ্ট্র সচিবের অফিসার্স ক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত
পররাষ্ট্র সচিবের অফিসার্স ক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত
আ.লীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতার আত্মসমর্পণ
আ.লীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতার আত্মসমর্পণ
রংপুরের হাসপাতাল নেপাল ও ভুটানের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে: প্রধান উপদেষ্টা
রংপুরের হাসপাতাল নেপাল ও ভুটানের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে: প্রধান উপদেষ্টা
স্বর্ণের দাম আবার কমলো
স্বর্ণের দাম আবার কমলো
সুস্থ তটিনী, তবে শুটিংয়ে ফেরার মতো নয়
সুস্থ তটিনী, তবে শুটিংয়ে ফেরার মতো নয়