X
মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫
২২ বৈশাখ ১৪৩২

‘প্রাপ্তবয়স্ক ছাত্রদের রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৫ অক্টোবর ২০১৯, ২২:৩৫আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০১৯, ২৩:৪৮

‘শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ: প্রতিবন্ধকতা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক বৈঠকিতে আলোচকরা ‘রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার অধিকার সব নাগরিকের আছে। এটাই রাজনীতি। আমরা যারা দলে সংগঠিত হই না, শিক্ষক সমিতিতে আছি, আমাদেরও কিন্তু বক্তব্য দেওয়ার অধিকার আছে। সেটাও কিন্তু অনেক সময় দেশ ও জাতির ভাগ্য পরিবর্তনে সহায়ক হয়। একই কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র যাদের ১৮ বছর বয়স অতিক্রম করেছে, তাদের রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।’

শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের আয়োজনে ‘শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ:  প্রতিবন্ধকতা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক বৈঠকিতে এসব কথা বলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। মুন্নী সাহার সঞ্চালনায় মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বিকালে শুরু হয় বাংলা ট্রিবিউনের সাপ্তাহিক এই আয়োজন।

সলিমুল্লাহ খান এ প্রসঙ্গে সলিমুল্লাহ খান আরও বলেন, ‘ছাত্রদের রাজনীতির আলোচনায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। তারা যাতে হিংসাত্মক কাজে অগ্রসর না হয় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। একজনের দোষ আরেকজনের ঘাড়ে না চাপিয়ে, মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে না ফেলে বরং আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের কথা বলা উচিত। তার মধ্যে একটা বিষয়, ছাত্র সংসদ্গুলোর নির্বাচন হতে হবে।’

ছাত্র রাজনীতির সুস্থ চর্চা না থাকাটাই মূল সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন,  ‘আমার প্রশ্ন হলো– এখন কি রাজনীতি আছে? ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে এটা শুনলে “আইরনিক্যাল” মনে হয়। এই ঘটনা ঘটছে তো ছাত্র রাজনীতি নেই বলেই। আমরা বলি, বিশ্ববিদ্যালয়ে সব রাজনৈতিক দলের সহাবস্থান করতে হবে। সেটা মুখের কথায় আছে, কাজের খাতায় নেই। যা হচ্ছে এটা রাজনীতিহীনতার জন্য হচ্ছে। তাই ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার কথা শুনলে মনে হয়, এর চেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল কথা আর হয় না। কারণ, ছাত্ররা রাজনীতি না করলে করবে কে? এখানে মুখ্য হচ্ছে অপরাধ, অপরাধী শিক্ষক হতে পারে ছাত্রও হতে পারে।’  

সাদেকা হালিম বৈঠকিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ডিন সাদেকা হালিম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে র‌্যাগিং করা হচ্ছে। যাকে আমরা বলছি, “পলিটিক্যাল র‍্যাগিং”। এই পলিটিক্যাল র‍্যাগিং করা হচ্ছে একটা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য।’

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যারা জড়িত হয়ে পড়ছেন, সেখানে যে আমরা সাধারণীকরণ করে কথা বলবো সেটাও ঠিক না। কারণ আজকে বলা হচ্ছে ছাত্র রাজনীতি, শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করে দিতে হবে। কিন্তু ছাত্র রাজনীতিতে জড়িতদের একটি অংশ মনে করছে, সহিংসতা- সন্ত্রাস দিয়ে একটি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে একটি ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করতে পারবো। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না, কোনও মূল ধারার রাজনৈতিক দল “পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করতে” শেখাচ্ছে। মেধাবীদের যে আমরা খুনি বানাচ্ছি সেখানে একটা রাজনৈতিক প্রভাব আছে। এ অবস্থায় একটি সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে আমাদের বাচ্চারা বড় হচ্ছে।’

এস এম শামীম রেজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এস এম শামীম রেজা বলেন, ‘একরৈখিকভাবে নয়, বিশ্ববিদ্যালয়কে সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে দেখতে হবে। ছাত্রদের নিয়ে আলোচনা শুরু হবে যখন তারা ঢাকা শহরে এসে কোনও দাবিতে বসবে। আবার এক লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে যে টিকছে তাকে মেধাবী বলা হচ্ছে না। মেধাবী হওয়ার জন্য বিশেষ বিশেষ কিছু শর্ত লাগছে। তখন আমরা তকমা দিই। এই বিশেষ তকমাগুলো যখন যোগ হয় তখন তারা আবার বিশেষ নিরাপত্তা দাবি করে।’

শিক্ষাঙ্গনে সৃষ্ট বৈষম্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘একটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ক্যাটাগরি করা হয়েছে। এজন্য বিশেষ বিশেষ জায়গা বেষ্টনী দিয়ে আটকানো আছে। সেখানে মিটিং হয় না, মিছিল হয় না। সেখানে ল্যাবগুলো সংরক্ষিত। অন্যদিকে, সারাদিনের জন্য এমন কিছু জায়গা ফেলে রাখা হয় যেখানে মাইক বাজবে, ঢোল পেটাবে। ছাত্রাবাসগুলোও একই রকম। কোনও কোনও জায়গায় বিশেষ প্রটেকশন দেওয়া হয়। কারণ সে অতি মেধাবী, আবার কোনও কোনও জায়গায় প্রোটেকশন পায় না, কারণ মেধার ক্যাটাগরির মধ্যে সে পড়ে না। অন্য ধরনের বৈষম্যের মধ্যে ফেলা হয়।’

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকে আমাদের ব্যক্তিগত ইতিহাস বলতে চাই। আমরা সবাই আক্রান্ত হয়েছি, অস্বস্তির মধ্যে পড়েছি। চার বছরের কোর্স সাত বছরে করেছি। বিরক্তির চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। দিনশেষে প্রশ্ন– আমি কেনো ওখানে একটি নিরাপদ পরিবেশ পাইনি? আমরা যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জেনারেলাইজড করি তখন আমাদের স্মরণ থাকে না যে এর মধ্যে অনেকগুলো স্তর আছে। সেই স্তরে যারা থাকেন, তাদের ঘাটতির জন্য, গাফিলতির জন্য দায়ভার নিতে হয় অন্যদের।’

সাজিদ অমিত ইউল্যাবের গবেষণা কেন্দ্র সেন্টার ফর এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড সোসাইটি’র (সিইএস) পরিচালক সাজিদ অমিত বলেন, ‘ছাত্রদের মধ্যে এখন অনেক প্রতিযোগিতা দেখি। আমরা এখানে শিক্ষাবান্ধব পরিবেশের কথা বলছি। আমাদের এটিও ভাবা উচিত– আমরা গ্র্যাজুয়েট তৈরি করছি, কিন্তু মানুষ তথা দেশের প্রকৃত নাগরিক তৈরি করছি না।’

শিক্ষাঙ্গনে প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাবের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘লিডারশিপের চর্চা বিভিন্ন ক্লাবের মাধ্যমে হয়, খেলাধুলার মাধ্যমে হয়। আমি বাইরের দেশগুলোতে দেখেছি, এক্ষেত্রে অনেক সিস্টেমিক উৎসাহ দেওয়া হয়। যেমন– স্পোর্টস স্কলারশিপ, মিউজিক স্কলারশিপ থাকে। আমি দেখি যে, ১০ বছর আগে মানুষ যতটা সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় সম্পৃক্ত হতো, সেটি এখন প্রযুক্তির দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। ঐক্যবদ্ধ করার বদলে প্রযুক্তি আমাদের আমাদের বিভক্ত করে দিচ্ছে।’    

দেলোয়ার হোসেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা তো ছাত্র রাজনীতির দুটি ধারা পেয়েছি। এর একটি যেমন ইতিবাচক, পাশাপাশি নেতিবাচক ধারাও পেয়েছি সেই ’৭৫ পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত। এই ধারাকে আমরা বন্ধ করতে পারিনি। যখন সামরিক সরকার ছিল, তখনও কিন্তু ছাত্রদের আরও একধাপ এগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে নেতিবাচক ধারার দিকে। গণতান্ত্রিক শক্তিকে অবনমিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। সেই চেষ্টা যে শেষ হয়ে গেছে সেটা আমরা বলি না।’ 

আবরার হত্যাক্ণ্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সারাদেশে সর্বস্তরের মানুষের কাছে এখন আলোচিত বিষয় আবরার হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডের দায় আমরা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।  কিছুদিন পর পর গণমাধ্যম কিংবা সাধারণ মানুষের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হয়।’

মুন্নী সাহা

 

/এসও/এমএএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চেম্বার থেকে নারী চিকিৎসককে টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় এনে মারধর
চেম্বার থেকে নারী চিকিৎসককে টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় এনে মারধর
কলেজের অধ্যক্ষকে মারধর করে পুলিশে দিলেন এনসিপির নেতাকর্মীরা
কলেজের অধ্যক্ষকে মারধর করে পুলিশে দিলেন এনসিপির নেতাকর্মীরা
আরেকটি গ্রিন কটেজ থেকে রক্ষা পেলাম: ফায়ার সার্ভিস
বেইলি রোডের সিরাজ টাওয়ারে আগুনআরেকটি গ্রিন কটেজ থেকে রক্ষা পেলাম: ফায়ার সার্ভিস
আগে সরকার ব্যয়ের মহোৎসব করেছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
আগে সরকার ব্যয়ের মহোৎসব করেছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
সর্বাধিক পঠিত
ঝকঝকে ত্বক পেতে যেভাবে ব্যবহার করবেন চিয়া সিড
ঝকঝকে ত্বক পেতে যেভাবে ব্যবহার করবেন চিয়া সিড
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের জানাজা পড়ালেন ছেলে, প্রিয় আইনাঙ্গন থেকে শেষ বিদায়
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের জানাজা পড়ালেন ছেলে, প্রিয় আইনাঙ্গন থেকে শেষ বিদায়
স্বর্ণালঙ্কার তৈরির মেশিনেই মিললো স্বর্ণ
স্বর্ণালঙ্কার তৈরির মেশিনেই মিললো স্বর্ণ
এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের চাপে আওয়ামীপন্থি ৬ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল
এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের চাপে আওয়ামীপন্থি ৬ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল
স্বাস্থ্য ক্যাডার পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস করার সুপারিশ
স্বাস্থ্য ক্যাডার পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস করার সুপারিশ