X
মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
৩ আষাঢ় ১৪৩২

শিশুর ভিডিও গেমে আসক্তির দায় অভিভাবকের

উদিসা ইসলাম
২৬ অক্টোবর ২০১৯, ১২:২৬আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০১৯, ১৬:৩৩

শিশুর ভিডিও গেমে আসক্তির দায় অভিভাবকের ভিডিও গেম, প্লে-স্টেশন, স্মার্টফোন বা ট্যাবের স্ক্রিনে শিশুর ডুবে থাকার পুরো দায় অভিভাবকের। গবেষণা বলছে, শিশুরা ভিডিও গেমে কী খেলছে তার ওপর নির্ভর করে তার আচরণ। নিজেদের জীবনযাপন বাধামুক্ত রাখতে এবং সহজে শিশুকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডিভাইস ধরিয়ে এক জায়গায় বসিয়ে রাখেন অভিভাবকরা। ফলে শিশুর আশেপাশের জগৎ বা প্রতিদিন যে নতুন বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার কথা তা হচ্ছে না। গবেষকরা বলছেন, অভিভাবকরা যদি তাদের সন্তানদের ভিডিও গেম খেলার মাত্রা এবং স্ক্রিনে কী দেখবে তার ধরনের ওপর নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তাহলে প্রভাবটি কমতে পারে। আর শিশুদের গড়ে তোলার পদ্ধতি নিয়ে যারা কাজ করেন তারা বলছেন- যেহেতু নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না সেহেতু ভিডিও গেমের সঙ্গে পরিচিত না করানোই একমাত্র উপায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বিশ্বে যারা ভিডিও গেম খেলে তার দুই থেকে তিন শতাংশ ‘গেমিং ডিজঅর্ডারে’ ভোগে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সে কারণে ভিডিও গেম আসক্তিকে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার তালিকাভুক্ত করেছে।
ভায়োলেন্ট ভিডিও গেমস ইফেক্টস অন চিলড্রেন অ্যান্ড এডোলসেন্ট: খিওরি রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক পলিসি শিরোনামে গবেষণায় গবেষকরা একটি স্কুলের তৃতীয় থেকে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পর্যালোচনা করে দেখতে চেয়েছেন- শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকে যারা প্রতিনিয়ত সহিংসতামূলক ভিডিও গেম খেলে, তারা শিক্ষাবর্ষের শেষে গিয়ে উগ্র হয়ে যাচ্ছে কিনা। গবেষকরা জানতে পারেন, গেম খেলার পরিমাণ এবং গেমের ধরনের ওপর বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভরশীল। স্কুলের পারফরমেন্স খারাপ হওয়ার পেছনে ভিডিও গেম খেলার পরিমাণ অনেকাংশে দায়ী। সহিংসতামূলক ভিডিও গেম খেলার মধ্য দিয়ে ‘পৃথিবীটা একটা নির্মম জায়গা’ এ রকম একটা ধারণার জন্ম নেয়। কথাবার্তা ও শারীরিক অঙ্গভঙ্গির মধ্যে এক ধরনের উগ্রতা কাজ করে, সমাজগত আচরণ তাদের মধ্যে লোপ পায়। যদি অভিভাবকরা সন্তানদের ভিডিও গেম খেলার পরিমাণ এবং স্ক্রিনে কী দেখবে- তার ধরনের ওপর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তাহলে প্রভাবটি কমতে পারে।

ভিডিও গেমে আসক্ত শিশুরা
শৈশব নামের উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা ফারহানা মান্নান মনে করেন, যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভিভাবকরা গেমের ধরন ও সময় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছেন সেহেতু ভিডিও গেম যেন শিশুর হাতে না পড়ে সেটাই যথাযথ পদ্ধতি। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভিডিও গেমের রঙ, শব্দ, স্ক্রিন দ্রুত বদলে যাচ্ছে যা শিশুদের ভেতর উত্তেজনা তেরি করে এবং তারা এর প্রতি ভীষণ আগ্রহী হয়ে ওঠে। বেশি বেশি ব্যবহার করতে চায় এবং ধীরে ধীরে খেলার সময়টা বাড়তে থাকে। অনেক বাবা-মা সন্তানকে বড় করার প্রক্রিয়ায় ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেতে অজান্তেই এই আসক্তিতে সন্তানকে অভ্যস্ত করে ফেলে। অনেক গবেষণায় দেখানো হয়, এর মধ্য দিয়ে ইতিবাচক কিছু শিখে থাকে কিন্তু সেগুলো এতোই ন্যূনতম যে ক্ষতির পরিমাণটা বেশি নজরে আসে। শিশু গেমে কখন আসক্তি হয়েছে জানা যাবে প্রশ্নে এই গবেষক বলেন, ‘শিশুর সামনে যখন প্রাকৃতিক সামাজিক অনেক অপশন থাকার পরেও সে কেবল খেলতে চায় তখন বুঝতে হবে সে আসক্ত। নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারলে সে যদি অস্থির হয়ে ওঠে এবং মন খারাপ করে তখন সে আসক্ত।’
শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করেন গওহার নঈম ওয়ারা। তিনি বলেন, সন্তানকে শান্ত রাখতে মুঠোফোনসহ নানা যন্ত্রপাতি তাদের হাতে তুলে দেন ব্যস্ত মা–বাবারা। তারা নিজেরাও মুঠোফোনে ব্যস্ত থাকেন। নানা অজুহাতে সন্তানকে চোখে চোখে রাখার আকাঙ্খা থেকেও তেমনটা করেন। অনেক সময় সন্তানকে টেলিভিশন ছেড়ে ভিডিও দেখিয়ে খাওয়ান অভিভাবকরা। সেটি না করে তাকে সময় দিতে হবে এবং সেই সময়টা যেন সে উপভোগ করে সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকতে হবে অভিভাবকদের।
সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের চাইল্ড রাইটস গভর্ন্যান্স ও চাইল্ড প্রোটেকশন সেক্টরের পরিচালক আবদুল্লা আল মামুন বলেন, প্রথমেই এটা স্বীকার করে নিতে হবে যে, শিশুদের ভিডিও গেম আসক্তির জন্য পরিবারের বড়রা দায়ী। বড়রা যখন শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত খেলার জায়গা ও নিজেদের সময় দিতে পারে না কিংবা শিশুদের সঙ্গে খেলার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকে না, তারা শিশুদের হাতে মোবাইল, কম্পিউটারের মাধ্যমে গেমস তুলে দেয়। অনেক অভিভাবক এ ধরনের গেমসকে শিশুদের ব্যস্ত রাখার উপায় হিসেবে ব্যবহার করেন। এর ফলে শিশুর যথাযথ বিকাশ ব্যাহত হয়। শিশু মানুষের সঙ্গে মিশতে শেখে না, সামাজিক দক্ষতা গড়ে ওঠে না, ফলে বাইরের পৃথিবী থেকে এই শিশুরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে। অন্য দিকে, কী ধরনের ভিডিও গেম খেলছে তার ওপর নির্ভর করে তার ভেতরে হিংস্রতা, অশ্লীলতা, অসামাজিকতা কিংবা স্বার্থপরতার বিকাশ ঘটতে পারে।
তিনি বলেন, শিশুর শারীরিক খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে। পর্যাপ্ত সময় দিয়ে তাদের সঙ্গে আস্থাশীল সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। কী গেম খেলছে এবং কতক্ষণ খেলছে সে বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন থাকা জরুরি।

আরও পড়ুন: কয়েন দিয়ে খেলা গেমিং বক্স এখন লাখ টাকা দামের ল্যাপটপ

 

/ইউআই/ওআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পৃথক দুর্ঘটনায় দিনাজপুরের সড়কে ঝরলো ৩ জনের প্রাণ
পৃথক দুর্ঘটনায় দিনাজপুরের সড়কে ঝরলো ৩ জনের প্রাণ
টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছে বাংলাদেশ
টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছে বাংলাদেশ
সাংবাদিক মানিক চন্দ্র সাহা হত্যা: ৯ বছর পর কারাগারে ‘ডিসকো সাত্তার’
সাংবাদিক মানিক চন্দ্র সাহা হত্যা: ৯ বছর পর কারাগারে ‘ডিসকো সাত্তার’
নির্ধারিত দামের অর্ধেকে চামড়া বিক্রি, লোকসানে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা
রাজশাহীতে সিন্ডিকেটের কৌশলে চামড়ার দরপতননির্ধারিত দামের অর্ধেকে চামড়া বিক্রি, লোকসানে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা
সর্বাধিক পঠিত
নগরভবনে সভা করছেন ইশরাক, নামের সঙ্গে ‘মাননীয় মেয়র’
নগরভবনে সভা করছেন ইশরাক, নামের সঙ্গে ‘মাননীয় মেয়র’
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা থেকে সরে দাঁড়ালো ভারত?
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা থেকে সরে দাঁড়ালো ভারত?
ক্রিকেটার সাকিবসহ ১৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
ক্রিকেটার সাকিবসহ ১৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
ইরানের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ‘অবমূল্যায়ন’ করেছে ইসরায়েল
ইরানের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ‘অবমূল্যায়ন’ করেছে ইসরায়েল
শপথের সুযোগ নেই, পরিপক্ব আচরণ প্রত্যাশা করি: আসিফ মাহমুদ
শপথের সুযোগ নেই, পরিপক্ব আচরণ প্রত্যাশা করি: আসিফ মাহমুদ