X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

যোগ্যতা থাকলেও মাদ্রাসায় গ্রন্থাগারিক হওয়ার সুযোগ নেই!

এস এম আববাস
২৬ জুলাই ২০২০, ১৮:৫৫আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২০, ০৮:৫১

মাদ্রাসার লাইব্রেরি, ছবি- সংগৃহীত মাদ্রাসার সনদে সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক ও সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগের সুযোগ রয়েছে। তবে সাধারণ শিক্ষার সর্বোচ্চ পড়াশোনা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ডিগ্রি থাকলেও মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সুযোগ নেই। এটিকে বৈষম্য হিসেবে দেখছেন লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স সনদধারীরা।

ডিপ্লোমাসহ কামিল বা ফাজিল পাস সনদধারীদের সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক ও সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে ২০২০ সালের জুলাই থেকে নিয়োগ দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে ২০১৮ সালের নতুন নীতিমালায়। নীতিমালা অনুযায়ী, সাধারণ শিক্ষায় অনার্স-মাস্টার্স পাস এবং গ্রন্থাগার বিজ্ঞানের সনদে নিয়োগের জন্য আবেদনের সুযোগ রাখা হয়নি।

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাদ্রাসা-১) মো. আমিনুল হক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আবেদনের ফাইল উপমন্ত্রীর কাছে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী কমিটিতে বিষয়টি উঠবে। বিশেষজ্ঞ কমিটি চাইলে সংশোধন করা হবে। ’

সবার জন্য সুযোগ উন্মুক্ত রাখা হয়নি কেন জানতে চাইলে মো. আমিনুল হক বলেন, ‘আগের বিশেষজ্ঞরা হয়তো মনে করেছেন, অনেক আরবি বই থাকবে, আরবিতে লেখা বইও রয়েছে। এটা উন্মুক্ত রাখলে যারা আরবি জানেন না বা অন্য ধর্মের প্রার্থীরা সুযোগ পেয়ে যাবেন। তাদের জন্য কাজ করা কঠিন হবে। সে কারণে হয়তো ওই সময় এটি করেছেন। সংশোধন করা যাবে না তা তো নয়।’
২০১৮ সালের নীতিমালা প্রণয়ন বিশেষজ্ঞ কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আলিয়া মাদ্রাসায় অনেক কিতাব আরবিতে লেখা। আবার পবিত্র কোরআন শরিফও রয়েছে। অন্য ধর্মের প্রার্থীরাও নিয়োগের সুযোগ পেলে তারা হয় তো বইগুলোকে সম্মানের সঙ্গে নাও দেখতে পারেন। তাই ধর্মীয় অনুভূতির কারণে এটি করা হয়েছিল।’

সনদধারীদের দাবি, এই বৈষম্য দূর করে যোগ্যতাসম্পন্ন সবার জন্য নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ তৈরি করতে হবে। কারণ, ২০১০ সালের (সংশোধন ২০১৩) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী চাকরির সুযোগ থাকায় অনেকেই ডিপ্লোমা করেছেন। কিন্তু ২০১৮ সালের নীতিমালায় এই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে, ফলে তাদের জন্য আর আবেদনের সুযোগ রইলো না। তাদের দাবি, নতুন নীতিমালা সংশোধন করতে হবে এবং সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে হবে।

২০১৮ সালের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় গ্রন্থাগারিক নিয়োগ যোগ্যতায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড/ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়/ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মাদ্রাসা থেকে কামিল ও গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা থাকতে হবে। অথবা স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি বিষয়ে স্নাতকসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ও গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা থাকতে হবে।

সহকারী গ্রন্থাগারিক/ক্যাটালগার পদের নিয়োগ যোগ্যতায় বলা হয়েছে— বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড/ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়/ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মাদ্রাসা থেকে ফাজিল ও গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা থাকতে হবে। অথবা স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি ও গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা থাকতে হবে।

মাদ্রাসার এই নীতিমালায় শারীরিক শিক্ষক, গণিত, বিজ্ঞান ও কৃষিসহ অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রেও সুযোগ রাখা হয়েছে নিয়োগ যোগ্যতায়। সনদধারীরা এর কারণ হিসেবে বলেছেন, মাদ্রাসা থেকে গণিত, কৃষি ও বিজ্ঞানসহ এ ধরনের বিষয়ের কোনও শিক্ষার্থী নেই, তাই উন্মুক্ত রাখতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ।

পক্ষান্তরে ২০১৮ সালের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় সাধারণ শিক্ষায় সনদধারীদের পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষার সনদধারীদের সমমান হিসেবে নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। নীতিমালায় গ্রন্থাগারিক পদের নিয়োগ যোগ্যতায় বলা হয়েছে—স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞানে অনার্সসহ দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতকোত্তর ডিগ্রি/সমমান অথবা স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতকোত্তর ডিগ্রি/সমমান গ্রহণযোগ্য হবে।

সহকারী গ্রন্থাগারিকের নিয়োগ যোগ্যতায় বলা হয়েছে— স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান বিষয়সহ স্নাতক ডিগ্রি/সমমান।

নীতিমালা সংশোধনের দাবি উত্থাপন করে সম্প্রতি মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছেন লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স সনদধারীরা। ‘সমমান বঞ্চিত জাতীয় লাইব্রেরিয়ান অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স শিক্ষার্থী জাতীয় ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে শুক্রবার (২৪ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচিতে শিগগিরই বৈষম্য নিরসনের দাবি জানানো হয়।

সংগঠনের সভাপতি জি এম আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মাদ্রাসার সনদ আর গ্রন্থাগার বিজ্ঞানের ডিপ্লোমা সনদ দিয়ে সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক ও সহকারী গ্রন্থাগারিক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ থাকলে কেন সাধারণ শিক্ষায় সর্বোচ্চ ডিগ্রি ও গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে ডিগ্রি থাকার পরও নিয়োগ দেওয়া হবে না? এই বৈষম্য থাকতে পারে না। ২০১০ সালের নীতিমালা অনুযায়ী সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইনফরমেশন সায়েন্স ও লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট সনদে চাকরির সুযোগ ছিল। তা জেনেই ভর্তি হয়েছিলাম এবং ডিগ্রি নিয়েছি। ২০১৮ সালে নতুন নীতিমালা করে মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমাদের নিয়োগের সুযোগ বঞ্চিত করা হয়েছে। ’

সংগঠনের মুখ্য সমন্বয়ক আওয়াল ফরাজী বলেন, ‘২০১৮ সালের নতুন নীতিমালা অনুযায়ী গ্রন্থাগারিক ও সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে ২০২০ সালের জুলাই থেকে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন শুধু মাদ্রাসা শিক্ষায় সনদধারীরা। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে হবে। সংশ্লিষ্ট ডিগ্রিসহ সর্বোচ্চ ডিগ্রি থাকার পরও এই পদে আবেদন করতে পারছি না।’

/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
ছাঁটাই ও পলিশ বন্ধ হলে কম দামে চাল কিনতে পারবে মানুষ: খাদ্যমন্ত্রী
ছাঁটাই ও পলিশ বন্ধ হলে কম দামে চাল কিনতে পারবে মানুষ: খাদ্যমন্ত্রী
উচ্চশিক্ষা খাতকে ডিজিটালাইজেশনে আনার পরামর্শ ইউজিসির
উচ্চশিক্ষা খাতকে ডিজিটালাইজেশনে আনার পরামর্শ ইউজিসির
বিটুমিন গলে যাওয়া মহাসড়ক পরিদর্শনে দুদক
বিটুমিন গলে যাওয়া মহাসড়ক পরিদর্শনে দুদক
সর্বাধিক পঠিত
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
সজলের মুগ্ধতা অপির চোখে, জন্মদিনে
সজলের মুগ্ধতা অপির চোখে, জন্মদিনে