X
বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
১৯ আষাঢ় ১৪৩২

উইঘুর মুসলিম হত্যা ও নির্যাতন বন্ধের দাবি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের

ঢাবি প্রতিনিধি
২৯ আগস্ট ২০২০, ০৭:২৯আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০২০, ০৭:৪৫

রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ ২৮ আগস্ট চীনের উইঘুর মুসলিম গণহত্যা দিবস উপলক্ষে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও সচিত্র প্রদর্শনী কর্মসূচি পালন করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। উইঘুর মুসলিম হত্যা ও নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়ে শুক্রবার (২৮ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি সংলগ্ন রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ সব সময় মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। বিশ্বের সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা প্রত্যেকটি মানুষের নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি। সমগ্র পৃথিবী একটি পরিবার। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় প্রত্যেকটি দেশের নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু সম্প্রতি চীন সরকারের সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডে আমরা মারাত্নকভাবে উদ্বিগ্ন। চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে বসবাসরত প্রায় এক কোটি ২৬ লাখ মুসলমানদের ওপর অমানবিকভাবে নির্যাতন ও নিপীড়ন চালানো হচ্ছে, যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। মুসলিমদের সংখ্যা কমানোর জন্য মুসলিম নারীদের জোর পূর্বক গর্ভপাত করানো, জোরপূর্বক জন্মনিয়ন্ত্রণ ওষুধ খাওয়ানো, পবিত্র কুরআন নিষিদ্ধ করা, ধর্মান্তরিত করা, নারীদের ধর্ষণ, বন্দি শিবিরে আটকে রেখে নির্যাতন করা ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে চীন সরকার প্রতিনিয়ত সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ বিষয়ে জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর কোনও জোরালো উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিমদের মসজিদ ভেঙে পাবলিক টয়লেট বানানো হয়েছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া কখনোই উচিত নয়। চীন সরকার সংখ্যালঘু মুসলিমদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতায় প্রতিনিয়ত নগ্ন হস্তক্ষেপ করছে যা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ২৮ আগস্টকে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের মুসলিমরা উইঘুর গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। উইঘুর মুসলিমরা চীনা জনসংখ্যার ১ দশমিক ৫ শতাংশ।’

মানববন্ধনে ফ্রিডম ওয়াচের তথ্যের বরাতে বলা হয়, ‘চীন পৃথিবীর অন্যতম ধর্মীয় নিপীড়ক দেশ। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকায় এসব নিপীড়নের গোঙানির শব্দ বিশ্ববাসী খুব একটা জানতে পারে না। কালেভদ্রে কিছু জানা যায়। চীনের দাবি বিচ্ছিন্নতাবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মীয় চরমপন্থার মোকাবিলা করার জন্যই তারা নাকি নানান পলিসি নিতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু দাড়ি রাখা, রমজান মাসে রোজা রাখা কীভাবে ধর্মীয় চরমপন্থা, তা বিশ্ববাসীকে তারা বোঝাতে পারে না। আসলে ধর্মীয় অনুষ্ঠান তাদের মতে চরমপন্থা। আর এই চরমপন্থা দমনের নামে নির্বিচারে গ্রেফতার, জেল-জরিমানা চলছে।’

মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘উইঘুর মুসলমানদের ওপর নিপীড়নের বিরুদ্ধে সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবীরা কথা বলতে পারেন না, কারণ সরকারের চাপে তাদের বোবা হয়ে থাকতে হয়। প্রায় ২০ লাখের মতো উইঘুর মুসলিমকে পশ্চিমাঞ্চলীয় শিনজিয়াং অঞ্চলে কয়েকটি শিবিরে বন্দি করে রাখা হয়েছে। এসব ক্যাম্পে তাদের “নতুন করে শিক্ষা” দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে শিনজিয়াং প্রদেশে বসবাসকারী লোকজনের ওপর চীন সরকারের নিপীড়নমূলক নজরদারির তথ্যপ্রমাণ ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। গত কয়েক দশকে সংখ্যাগুরু চীনা হান জাতির বহু মানুষ শিনজিয়াং অঞ্চলে গেছেন সেখানে বসবাস করতে। উইঘুর সম্প্রদায়ের লোকজন মনে করছেন, এর ফলে তাদের সংস্কৃতি ও জীবনযাপন হুমকির মুখে পড়েছে। যেসব লোকজনের ২৬টি তথাকথিত “স্পর্শকাতর দেশে” আত্মীয়স্বজন আছেন তাদের এসব ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, কাজাখস্তান ও তুরস্কসহ আরও কিছু দেশ। এছাড়াও যারা মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বিদেশের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তাদের টার্গেট করেছে কর্তৃপক্ষ। এসব ক্যাম্পে যাদের রাখা হয়েছে তাদের চীনা ম্যান্ডারিন ভাষা শেখানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অনুগত থাকতে।  উইঘুরদের ধর্মীয় বিশ্বাসের সমালোচনা করতে অথবা সেই ধর্ম পরিত্যাগ করতে বলা হচ্ছে। বন্দী শিবিরে মুসলিমদের ঘুমাতে দেওয়া হচ্ছে না। কয়েক ঘণ্টা ধরে ঝুলিয়ে রেখে পেটানো হচ্ছে। কাঠ ও রবারের লাঠি, তারের চাবুক দিয়ে পেটানো হয়। শরীরে সুঁই ফুটানো হয়। প্লাইয়ার দিয়ে তুলে নেওয়া হয় নখ।’

তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান মিশেল ব্যাশেলেট শিনজিয়াংয়ের পরিস্থিতি দেখতে পর্যবেক্ষকদের সেখানে যাওয়ার অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু চীন সরকার কোনও অনুমতি দিচ্ছে না যা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। চীন কর্তৃক উইঘুর মুসলিম নির্যাতনের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। অবিলম্বে চীনের সংখ্যালঘু উইঘুরদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় খুব শিগগিরই বাংলাদেশে অবস্থিত চীন দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।’

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এ সময় কয়েকটি দাবি পেশ করে৷ সেগুলো হলো: ১. চীন সরকার কর্তৃক জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিম হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে, ২. চীনের সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে, ৩. আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে চীনের উইঘুর মুসলিম গণহত্যার বিচার করতে হবে।

মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের সঞ্চালনায় এই কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আরও বক্তব্য রাখেন– মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি কামরুজ্জামান রাজু, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট এজেডইউ প্রিন্স, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্য, চকবাজার থানা শাখার সভাপতি আশরাফ উদ্দিন স্বাধীন, যাত্রাবাড়ী থানা শাখার সভাপতি শেখ মাসুদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

 

/এসআইআর/এমএএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দ্বিগুণ করার লোভ দেখিয়ে গৃহবধূর নগদ অর্থ ও স্বর্ণ আত্মসাৎকারী গ্রেফতার
দ্বিগুণ করার লোভ দেখিয়ে গৃহবধূর নগদ অর্থ ও স্বর্ণ আত্মসাৎকারী গ্রেফতার
গ্রিসে ভয়াবহ দাবানল, নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে দমকলবাহিনী
গ্রিসে ভয়াবহ দাবানল, নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে দমকলবাহিনী
পোশাক থেকে ঘামের হলদেটে দাগ দূর করার টিপস জেনে নিন
পোশাক থেকে ঘামের হলদেটে দাগ দূর করার টিপস জেনে নিন
ইইউবির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন
ইইউবির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন
সর্বাধিক পঠিত
নবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার
সংযুক্ত কর্মচারী প‌রিষ‌দের জরু‌রি সভানবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার
বরখাস্ত হলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাবাসসুম ঊর্মি
বরখাস্ত হলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাবাসসুম ঊর্মি
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
কার দোষে শ্রমবাজার বন্ধ হয় জানালেন আসিফ নজরুল
কার দোষে শ্রমবাজার বন্ধ হয় জানালেন আসিফ নজরুল
অনুদান কমিটি থেকে অভিনেত্রীর অব্যাহতি!
অনুদান কমিটি থেকে অভিনেত্রীর অব্যাহতি!