X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

হাসপাতালের ওপর চাপ কমাতে কমিউনিটি পর্যায়ে কাজ করছে ব্র্যাক

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২১:৪২আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২১:৪৪

হাসপাতালের ওপর চাপ কমাতে কমিউনিটি পর্যায়ে কাজ করছে ব্র্যাক রহিমা আক্তার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। করোনার কারণে ৪ মাস আগে কাজ হারিয়েছেন। রাজধানীর মিরপুরের সাংবাদিক কলোনির পাশে মুরাপাড়া ক্যাম্পে থাকেন তিনি। কয়েকদিন আগে হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার মধ্যে দেখা যায় করোনার উপসর্গ। ব্র্যাকের কমিউনিটি সাপোর্ট টিমের (সিএসটি) সদস্যরা তার কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করেন। পাশাপাশি নিত্যপণ্যের জন্য যাতে বাড়ির বাইরে না যাওয়া লাগে, সেজন্য তারও ব্যবস্থা করে ব্র্যাক।       

এভাবেই রাজধানীর উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ৫৪টি ওয়ার্ডে কাজ করছে ব্র্যাক। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নেতৃত্বে ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের সহায়তায় কমিউনিটি সাপোর্ট টিম তৈরি করেছে ব্র্যাকের স্বাস্থ্য , পুষ্টি ও জনসংখ্যা বিভাগ। এতে সহায়তা দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, জনসংখ্যা তহবিল, শিশু তহবিল, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম, সেচ্ছাসেবী সংস্থা (প্ল্যাটফর্ম, হিমু, ইয়ুথ বাংলা), এটুআই ও সিএমইডি।

ব্র্যাক জানায়, সিএসটি’র কার্যক্রম পরীক্ষামূলকভাবে গত এপ্রিলে ঢাকায় ও খুলনায় ২ সপ্তাহের জন্য শুরু করা হয়। তহবিল পাওয়ার পর জুনের শেষে যখন করোনার সংক্রমণ সর্বাধিক পর্যায়ে ছিল, তখন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রথম ধাপের কাজ শুরু হয়। এই সেবা চালুর জন্য ৬৫৯ জন সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রায় সব এলাকাতেই ২৯৭ জন সিএসটি কর্মীদের দায়িত্ব বণ্টন করা হয়। যার ফলে ৬২ হাজার ৪৩ জন সম্ভাব্য করোনা রোগীর স্ক্রিনিং করা হয়। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৪২২ জন সন্দেহজনক করোনা রোগী হিসেবে চিহ্নিত হয়। এর মধ্যে ১ সেপ্টেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত ৬ হাজার ৭২৩ জন সন্দেহজন করোনা রোগী চিহ্নিত করা হয় এবং ৫ হাজার ৩৭৭ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়।

ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. ইমরান আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘ন্যাশনাল হটলাইনের মাধ্যমে যে কলগুলা আসে, তাদের মধ্যে আমাদের এই কমিউনিটি পর্যায়ে যে মানুষগুলো আছেন, তাদের কাছে আমরা যাবো এবং অন্যান্য যে সেবাগুলো আছে, সেগুলোর সঙ্গে আমরা তাদের সংযোগ স্থাপন করবো। হাসপাতাল সংক্রান্ত সেবা হতে পারে, যদি মৃদু কিংবা কম উপসর্গযুক্ত রোগী হয়, তাহলে বাড়িতেই একটি ব্যবস্থাপনা কীভাবে করা যায়, তাদের জানানো যে কীভাবে কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে, আইসোলেশন কীভাবে নিশ্চিত করতে হবে, তার জায়গাগুলো কীভাবে জীবাণুমুক্ত করে রাখা লাগবে, দূরত্ব নিশ্চিত কীভাবে করবে— এগুলোই তাদের জানানো। এজন্য আমরা চিন্তা করলাম এই সুনির্দিষ্ট জায়গায় আমরা যদি পৌঁছানোর উপায় সাজাতে পারি, তাহলে অনেকগুলো মানুষকে আমরা সহযোগিতা করতে পারবো।’

হাসপাতালের ওপর চাপ কমাতে কমিউনিটি পর্যায়ে কাজ করছে ব্র্যাক তিনি আরও বলেন, ‘শুরু দিকে হটলাইনে কল সংখ্যা কিন্তু অনেক কম ছিল। পড়ে বেড়ে গেছে অনেক। আমাদের মতো দেশের রিসোর্স কিন্তু অনেক কম।  আমাদের সংক্রমণের ধারা দেখলে বোঝা যায় যে, ৮০ শতাংশ মানুষেরই মৃদু উপসর্গ, অনেক ক্ষেত্রে উপসর্গ থাকে না। আমরা যদি এই কেসগুলোকে চিহ্নিত করে মৃদু উপসর্গযুক্ত আক্রান্তদের যদি বাড়ির মধ্যেই রাখতে পারি, কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে পারি, তাদেরকে যদি নিশ্চিত করা যায়  টেলিমেডিসিন সেবা, খাবারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস দিচ্ছি, তারা যেন বাসা থেকে বের না হন। তাহলে সংক্রমণের হার কমাতে পারবো।’

ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক মোরশেদা চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শুরুতেই বলেছে যে, সবাই মিলে কাজ করতে হবে। আমরা শুরু থেকেই স্বাস্থ্য অধিদফতর, আইইডিসিআর’র সঙ্গে আলোচনা করছি, কীভাবে কাজ করা যায় তা নিয়ে। মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মী যারা আছেন, তাদের দিয়ে কীভাবে কমিউনিটিতে সচেতনতা গড়ে তোলা যায়, আবার যাতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমরা যে কনসেপ্ট ডিজাইন করেছি তাতে হেলথ ওয়ার্কাররা কমিউনিটি পরিদর্শন করবেন, বাড়ি পরিদর্শন করবেন, মানুষের উপসর্গ দেখবেন। স্বাস্থ্যকর্মীরাই দেখবেন যে, সে ব্যক্তির করোনা হতে পারে কিনা। যদি মনে করে যে, করোনা হয়েছে তাহলে তাকে আইসোলেশনের জন্য বলবেন এবং পরিবারের সবাইকে কোয়ারেন্টিন করতে বলবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সবাইকে তো টেস্ট করতে পাঠানো আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সম্ভব না। হাসপাতালে পাঠানোও সম্ভব না। সবাইকে যদি হাসপাতালে পাঠাই তাহলে কিন্তু হাসপাতাল ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। এমনিতেই আমরা প্রথম দিকে দেখেছিলাম, হাসপাতালে এত রোগী যেত, যে তারা চিকিৎসা পেতো না। সবাই হাসপাতালমুখী হওয়ায় কিন্তু বড় বড় দেশগুলোতে হাসপাতাল ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। আমরা চেয়েছিলাম যে, এটা আমাদের দেশে না হোক। শুধু যাদের দরকার তারা হাসপাতালে যাক। করোনার চিকিৎসা বাড়িতে সম্ভব— এটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে। শুধু লক্ষ্য রাখতে হবে, আক্রান্ত ব্যক্তি ঝুঁকিপূর্ণ কিনা। খারাপের দিকে গেলে তখনই হাসপাতালে দিতে হবে। সেজন্য আমরা এই কাজ হাতে নিলাম। এর মাধ্যমে দুইটা কাজ হবে, এক.  ট্রান্সমিশন রেট কমবে। দুই. হাসপাতালের ওপর চাপ কমাবে।’

           

/এসও/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
তীব্র গরমে ক্রেতা সংকট, বন্ধ ফুটপাতের বেশিরভাগ দোকান
তীব্র গরমে ক্রেতা সংকট, বন্ধ ফুটপাতের বেশিরভাগ দোকান
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ: সালমান এফ রহমান
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ: সালমান এফ রহমান
‘কলা চুরি’ নিয়ে বিতর্কের জেরে স্কুলছাত্রকে হত্যা: ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড
‘কলা চুরি’ নিয়ে বিতর্কের জেরে স্কুলছাত্রকে হত্যা: ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড
সর্বাধিক পঠিত
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম
সিএনজির রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালু করতে বিআরটিএ অফিস ঘেরাও
সিএনজির রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালু করতে বিআরটিএ অফিস ঘেরাও
চাকরি স্থায়ীর দাবিতে বিটিসিএল কর্মচারীদের ‘লাগাতার অবস্থান’
চাকরি স্থায়ীর দাবিতে বিটিসিএল কর্মচারীদের ‘লাগাতার অবস্থান’