X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

ড্যাপ এলাকার ৭৬ শতাংশ ভবন কাঁচা!

শাহেদ শফিক
২৩ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:৫৪আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:৪০

রাজধানী ঢাকা

রাজধানী ঢাকায় রাজউকের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ২১ লাখের বেশি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ৭৬ শতাংশের ওপরে কাঁচা বা আধাপাকা ভবন রয়েছে। প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ঘরবাড়ি রয়েছে এক হাজার ৪০৫টি। সমগ্র রাজউক এলাকায় মোট স্থাপনার ৮৪ শতাংশ এক তলা উচ্চতাবিশিষ্ট। এক থেকে তিন তলা উচ্চতাবিশিষ্ট স্থাপনা মোট স্থাপনার ৯৩ শতাংশ। ঘরবাড়ির ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় এক হাজার ৪০৫টি। রাজউকের সংশোধিত ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) প্রস্তুতকৃত ভৌত জরিপ ডাটাবেজ বিশ্লেষণে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় আরও দেখা গেছে, ড্যাপ এলাকায় রাস্তা রয়েছে ১৩ হাজার ৮৯৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১০ শতাংশ রাস্তার প্রস্থ ২০ ফুট বা তার ওপরে। আর বাকি ৯০ শতাংশ রাস্তার প্রস্থ ২০ ফুটের কম। মোট রাস্তার ৩৬ দশমিক ২৩ শতাশ রাস্তার প্রস্থ ৮ ফুট বা তার ওপরে।

এতে আরও দেখা যায়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন (উত্তর ও দক্ষিণ) এলাকার ৫৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ স্থাপনাই কাঁচা বা আধাপাকা। আর ৬০ দশমিক ৪১ শতাংশ স্থাপনা একতলা বিশিষ্ট। ডিএনসিসি এলাকার গ্রস আবাসিক ডেনসিটি প্রতি একরে ২৮৪ জন। প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করছে ৭০ হাজার ১৪৮ জন। অপরদিকে নেট আবাসিক ডেনসিটি প্রতি একরে ৩৯৩ জন। যা প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৯৭ হাজার ৭১ জন।

একইভাবে ঢাকা দক্ষিণ এলাকার গ্রস আবাসিক ডেনসিটি প্রতি একরে ৩৫১ জন। প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করছে ৮৬ হাজার ৬৯৭ জন। অপরদিকে নেট আবাসিক ডেনসিটি প্রতি একরে ৫০০ জন। যা প্রতি বর্গ কিলোমিটারে এক লাখ ২৩ হাজার ৫০০ জন।

ঢাকা শহরের ধারণক্ষমতা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতি একরে ১৫০ জন হিসেবে, ৯০ ভাগ ওয়ার্ড ধারণক্ষমতা অতিক্রম করেছে। প্রতি একর ২০০ জন হিসেবে, ৮১ ভাগ ওয়ার্ড ধারণক্ষমতা অতিক্রম করেছে। প্রতি একরে ৪০০ জন হিসাবে, ৬৩ ভাগ ওয়ার্ড ধারণক্ষমতা অতিক্রম করেছে।

ঢাকা শহরের সবচেয়ে বেশি জনঘনবসতিপূর্ণ এলাকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, লালবাগ এলাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ১ লাখ ৬৮ হাজার ১৫১ জন মানুষ বাস করে। চকবাজারে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ১ লাখ ৩০ হাজার ১২২ জন মানুষ বাস করে এবং কোতোয়ালিতে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ১ লাখ ১ হাজার ৬৯৩ জন মানুষ বাস করে।

সংশোধিত ড্যাপে আরও দেখা গেছে, ড্যাপ এলাকায় এখনো ১৩টি নদী ও ২১৯টি খাল বিদ্যমান রয়েছে। ভূমি ব্যবহার ও বিশেষ ব্যবস্থাপনা এলাকার মধ্যে প্রস্তাবিত ভূমি ব্যবহার এলাকা ১৩টি,  প্রস্তাবিত নগর এলাকা ৬১ শতাংশ  প্রস্তাবিত ভারি শিল্প এলাকা ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ, প্রস্তাবিত কৃষি এলাকা ২৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর বিশেষ ব্যবস্থাপনা এলাকার মধ্যে রয়েছে ৭টি এলাকা। বন্যা ও প্লাবনভূমি ব্যবস্থাপনা এলাকার মধ্যে সাধারণ প্লাবন ভূমি এলাকা, সাধারণ জলস্রোত এলাকা ও মুখ্য জনস্রোত এলাকা।

ড্যাপের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় প্রস্তাবিত সড়কপথ দুই হাজার ৭৪৯ কিলোমিটার, প্রস্তাবিত জলপথ প্রথম পর্যায়ে ৫৬৭ কিলোমিটার এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৭৬০ কিলোমিটার এবং প্রস্তাবিত অযান্ত্রিক যান চলাচলের পথ এক হাজার ২৩৩ কিলোমিটার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ড্যাপে নাগরিক সুবিধাগুলোর মধ্যে ৬২৭টি বিদ্যালয় ও ১২৩টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া আঞ্চলিক পার্ক ৫টি, জলকেন্দ্রিক পার্ক ৪৯টি, ইকো পার্ক ৫টি এবং অন্যান্য ৮টি পার্কের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ১১টি কম্পোস্ট প্ল্যান্টের (১১০ একর) প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া নগর জীবন রেখায় ৬ লাখ ৪৪ হাজার গাছের প্রস্তাব করা হয়েছে। 

ড্যাপ সূত্র জানিয়েছে, ২০১৬ থেকে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত রাজধানীর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) খসড়া প্রস্তাব তৈরি করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তির আপত্তির মুখে তা সংশোধনের জন্য নতুন করে মতামত ও প্রস্তাব চাওয়া হয়েছিল। এর জন্য নির্ধারিত সময়ের অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে প্রায় চার হাজার মতামত দিয়েছে। এসব মতামত বিবেচনায় নিয়ে সংশোধিত ড্যাপ প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রাখা হয়েছে। আগামী বছরের শুরুর দিকে ড্যাপ চূড়ান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন এর সঙ্গে যুক্ত রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কর্মকর্তারা।

ড্যাপ সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীর ৯৯ শতাংশের বেশি ভবন আটতলার নিচে। আর আবাসিক ভবনের মধ্যে ৯৯.৯৯ শতাংশ ভবন আট তলার নিচে। বংশাল এলাকার তিন হাজার ২৭টি ভবনের মধ্যে ১১ তলা ভবন রয়েছে মাত্র দুটি। ১০ তলা ভবন রয়েছে একটি, ৯ তলা ভবন রয়েছে চারটি আর আট তলা ভবন রয়েছে ১৭টি। ওই এলাকায় এক থেকে ছয়তলা ভবনই বেশি। বংশাল এলাকায় ৬৬৪টি ভবন এক তলা। অন্যান্য এলাকার চিত্রও প্রায় এক।

এছাড়া বর্তমান নিয়মে বহুতল ভবনে পার্কিংয়ের জন্য জায়গা রাখা বাধ্যতামূলক রয়েছে। কিন্তু বেশিসংখ্যক মানুষের আবাসন নিশ্চিত করতে সেই বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে ভবনের মালিক পার্কিংয়ের জায়গা রাখতে চাইলে কোনও বিধি-নিষেধ থাকবে না। এতে কমিউনিটি পার্কিংয়ের বিষয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে।

জানতে চাইলে ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দীর্ঘ গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ করে সংশোধিত ড্যাপে অনেক নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। হাইড্রোলজিক্যাল সার্ভের ওপর নির্ভর করে ড্যাপ প্রণয়ন করা হচ্ছে। এতে কী ধরনের এলাকা কীভাবে ব্যবহার হবে, তার প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতি না করে উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এলাকাভিত্তিক ভবনের উচ্চতা নির্ধারণ শিথিল করার বিষয়টিও থাকবে। এছাড়া বন্যাপ্রবাহ অঞ্চলের জমির মালিকদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আগামী বছরের শুরুর দিকে ড্যাপ চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘সংশোধিত ড্যাপে আমাদের চিন্তাভাবনার অনেক প্রতিফলন হয়েছে। এর পরেও একে আরও ভেবে দেখা উচিত। সব শ্রেণি পেশার মানুষের মতামত নিয়ে সময় ক্ষেপণ আর না করে দ্রুত চূড়ান্ত করা উচিত।

/এফএএন/এমএমজে/
সম্পর্কিত
ঈদের পরও চলছে রঙচটা বাস, আবার সময় দিলো বিআরটিএ
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
মুঠোফোন কানে, ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু
সর্বশেষ খবর
তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া ৮ যুবকের লাশের অপেক্ষায় স্বজনরা
তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া ৮ যুবকের লাশের অপেক্ষায় স্বজনরা
‘বাংলাদেশ ও ভারত একই লক্ষ্যে এগোচ্ছে’
‘বাংলাদেশ ও ভারত একই লক্ষ্যে এগোচ্ছে’
এবার ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে সরব কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
এবার ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে সরব কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
প্রত্যেক বস্তা থেকে সরানো হয় চাল, ডিলারের বিরুদ্ধে থানায় মামলা
প্রত্যেক বস্তা থেকে সরানো হয় চাল, ডিলারের বিরুদ্ধে থানায় মামলা
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি