‘আপনার বড় ভাই তামজিদ হোসেন র্যাব হেফাজতে রয়েছে। তার বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র আইনে মামলা দেওয়া হবে। এমনকি ক্রসফায়ারে দেওয়া হতে পারে। বড় ভাইকে বাঁচাতে হলে দুই কোটি টাকা রেডি করুন। তাকে বাঁচাতে হলে টাকা সংগ্রহ করে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। থানা পুলিশ কিংবা গোয়েন্দা পুলিশে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেন না।’ মোবাইল ফোনে এমনই সব হুমকি পান বলে জানান রাইয়ানা হোসেন। পরে বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) হাতিরঝিল থানায় অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন তিনি। তার পরিপ্রেক্ষিতেই চার র্যাব সদস্যকে গ্রেফতার করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, ‘বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) সকাল আনুমানিক ৯টায় বড় ভাই তামজিদ হোসেন আমাদের মীরবাগের বাসা থেকে উত্তরা যাওয়ার কথা বলে বের হন। বেলা আনুমানিক ১২টার দিকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি নিজেকে র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে আমাকে (বাদী) ফোন করেন। বড় ভাই (তামজিদ) র্যাব হেফাজতে আছে। এ বিষয়ে থানা পুলিশ বা ডিবিকে না জানানোর কথা বলেন ওই ব্যক্তি। পুলিশ বা ডিবিকে এ বিষয়ে জানালে আমার বড় ভাইকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকিও দেন তিনি। এই কথা বলেই র্যাবের কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী সেই ব্যক্তি ফোনের লাইন কেটে দেন। পরবর্তী সময়ে আমি অনেকবার তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু সেই ব্যক্তি বারবার আমার কল কেটে দেন। পরে দুপুর দেড়টার দিকে র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী সেই ব্যক্তি আবারও কল দেন। মোবাইল ফোনে আমাকে জানান, আমার বড় ভাইকে র্যাব অফিসে সিনিয়র অফিসাররা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তার নামে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা হবে। আমার বড় ভাইকে র্যাবের কোন অফিসে, কোন সিনিয়র অফিসার জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তা জানতে চাইলে সেই ব্যক্তি জানান, এই মুহূর্তে আপনার ভাই র্যাবের কোন অফিসে আছেন তা বলা যাবে না।’
এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেন, ‘এর কিছুক্ষণ পর ওই ব্যক্তি ফোনে আমার ভাইকে তার সহযোগীদের দ্বারা মারধর করার শব্দ শোনান এবং আমার ভাইকে মোবাইলে ফোন দিলে তিনি কাঁদতে কাঁদতে জানান, তাকে চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে মারধর করা হয়েছে। আমার ভাই কাঁদতে কাঁদতে বাঁচার আকুতি জানান। সেই নম্বরটি থেকে আরও অজ্ঞাত দু-তিন জন ফোন করে টাকা জোগাড় করতে পেরেছি কিনা জানতে চান। তাদের বলি, আমরা গরিব মানুষ। এত টাকা কোথায় পাবো? একপর্যায়ে র্যাবের কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী সেই ব্যক্তি ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। আমাদের কাছে কোনও টাকা নেই জানালে তিনি আমাকে নগদ ১২ লাখ টাকা নিয়ে যমুনা ফিউচার পার্ক মার্কেটে যেতে বলেন। এ সময় তিনি আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, থানা পুলিশ বা ডিবি পুলিশকে জানালে আমার ভাইকে প্রাণে মেরে ফেলবেন। পরে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সেই ব্যক্তি আমাকে ফোন করে আমার বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। আমার ভাই তখন তাকে খুব মারধর করছে বলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাদের দাবি করা টাকা দিয়ে দিতে বলেন। আমরা তখন তার অবস্থান জানতে চাইলে তিনি জানান, হাত, পা ও চোখ বাঁধা। তিনি কোথায় আছেন বলতে পারবেন না।’
আরও খবর: পুলিশের হাতে র্যাবের ৪ সদস্য গ্রেফতার