X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় শ্রমজীবী শিশু বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা

উদিসা ইসলাম
১১ জুন ২০২১, ২৩:৫০আপডেট : ১২ জুন ২০২১, ০০:০৪

নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকেই শ্রমজীবী শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে ফেরাতে নেওয়া হয় আন্তর্জাতিক নানা উদ্যোগ। একই সময় থেকে শুরু হয় তর্ক—আগে শিশুকে শ্রম থেকে সরানো, নাকি আগে শিশুদের পুনর্বাসনের কাজ করতে হবে। তর্ক শেষ না হতেই করোনা পরিস্থিতির ভিন্ন এক বাস্তবতায় নতুন নতুন শিশু ফিরতে বাধ্য হতে হচ্ছে শ্রমবাজারে।

গবেষণা বলছে, একদিকে স্কুল বন্ধ, আরেক দিকে পরিবারের আয় কমে যাওয়ায় অনেক শিশুর জন্য শ্রমে যুক্ত হওয়া এবং বাণিজ্যিকভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে পরিবারের প্রতিটি সদস্য মিলে টিকে থাকার লড়াইয়ে শ্রমজীবী শিশুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা করছেন সম্পৃক্তরা।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও ইউনিসেফ ২০২০ সালের নতুন এক প্রতিবেদনে বলেছে, কোভিড-১৯ সংকটের ফলশ্রুতিতে আরও লাখ লাখ শিশুকে শিশু শ্রমে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, যা গত ২০ বছরের অগ্রগতির পর প্রথম শিশু শ্রম বাড়িয়ে দিতে পারে। ‘কোভিড-১৯ ও শিশু শ্রম: সংকটের সময়, পদক্ষেপের সময়’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত শ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ৯ কোটি ৪০ লাখ কমেছে, কিন্তু এই অর্জন এখন ঝুঁকির মুখে।

বাংলাদেশে এখন ২০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। করোনার কারণে আরও ২০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নামতে পারে। সম্প্রতি পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক যৌথ গবেষণায় দেখা যায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে তৈরি হওয়া পরিস্থিতির প্রভাবে শহরের নিম্ন আয়ের মানুষের আয় কমেছে ৮২ শতাংশ। আর গ্রামাঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষের আয় ৭৯ শতাংশ কমেছে। এতে শিশুর স্কুলে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এডুকেশন ওয়াচের ‘অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন ২০২১’-এ ঝরে পড়ার ব্যাপারে উদ্বেগজনক মতামত পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিকের ৩৮ শতাংশ শিক্ষক মনে করেন, বিদ্যালয় খুলে দেওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যেতে পারে। ২০ শতাংশ মনে করেন, ঝরে পড়ার হার বাড়বে এবং ৮.৭ শতাংশ মনে করেন, শিক্ষার্থীরা শিশু শ্রমে নিযুক্ত হতে পারে।

শিশু শ্রম নির্মূলের ব্যাপারে সরকারের এখন পর্যন্ত যতখানি সফলতা এসেছে, তা আবারও হুমকির মধ্যে রয়েছে বলে বাংলাদেশের শিশু বিষয়ক গবেষকরা শঙ্কার কথা জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, বাংলাদেশ সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৮.৭ অর্জনের জন্য ২০২৫ সালের মধ্যে দেশ থেকে সব ধরনের শিশু শ্রম নির্মূল করার ব্যাপারে কাজ করে আসছিল। সেই লক্ষ্য অর্জনের দিকে যখন দেশ এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ সেই অগ্রগতি ব্যাহত করেছে। 

ঢাকা আহছানিয়া মিশনের অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞ আজমি আক্তার বলেন, ‘কোভিড পরিস্থিতিতে শ্রমজীবী  শিশুদের নিয়ে আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে—শিশুটি কোন পরিস্থিতিতে শ্রমে যুক্ত হলো সেগুলো জানতে হবে। তারা কেমন ধরনের সমাধান  চায়, সেটা তাদের কাছ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অর্থাৎ কীভাবে কাজ করলে তাদের জীবনমান উন্নয়ন সম্ভব। শিশুদের শিক্ষা দিতে হবে সেই ধারণা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে। কাজে যেহেতু তাদের যেতেই হচ্ছে, সেক্ষেত্রে কাজের জায়গাটা শিশুবান্ধব কীভাবে করা যায়, তা নিয়েও কাজ করার আছে।’

২০১৩ সালের শেষ দিকে শিশু শ্রমিকদের নিয়ে জরিপের উল্লেখ করে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের সাবেক সভাপতি ইমরানুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তখনকার হিসাবে দেশে ৩৫ লাখের মতো শিশু শ্রমিক ছিল। কোভিড আসার পরে নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশুটির স্কুল বন্ধ। এবং সংসার চালাতে না পেরে অনেকেই প্রথম দিকে গ্রামে ফিরে গেলেও পরবর্তীতে ঢাকায় ফিরে এসে টিকে থাকতে শিশুকে কাজে পাঠিয়েছে। ফলে সার্বিক বিবেচনায় শিশু শ্রম বেড়েছে। পর্যবেক্ষণ বলছে, প্রায় ৮০ লাখ শিশু শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। এখন স্কুল ‍খুলে দিলেও এই নতুন করে শ্রমে যুক্ত হওয়া শিশুটিকে ফেরানো যাবে না।’

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
নাটবল্টুর সঙ্গেই কাটছে শৈশব-কৈশোর
১০ বছরের শিশুও জানে ‘দিনে কাজ ১২ ঘণ্টার’
প্রাতিষ্ঠানিক কল-কারখানায় কোনও শিশুশ্রম নেই: প্রতিমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় ৮ সেনা আহত
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় ৮ সেনা আহত
ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র
ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র
এক উপজেলায় ১৩ প্রার্থীর সবাই আ.লীগের
এক উপজেলায় ১৩ প্রার্থীর সবাই আ.লীগের
শিরোপাজয়ী দল কি কোটি টাকা পাবে?
ফিরছে সুপার কাপশিরোপাজয়ী দল কি কোটি টাকা পাবে?
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক