বিমানবন্দর এক অদ্ভুত রঙ্গমঞ্চ। কেউ বেড়াতে, কেউ জীবন-জীবিকার তাগিদে দেশ থেকে দেশান্তর হয় এ মঞ্চ থেকে। একদিকে প্রিয়জনকে নিয়ে বাড়ি ফেরার আনন্দ, অন্যদিকে প্রিয়জনকে বিদায় দেওয়ার বেদনা; দুটো চিত্রেরই দেখা মেলে বিমানবন্দরে। এর বাইরে নানা ঘটনায় কত শত গল্প। আজকের গল্প সৌদি আরব প্রবাসী ইউসুফ কবিরকে নিয়ে। সৌদি থেকে দেশে ফিরে স্বজনের কাছে যাওয়ার আনন্দ মুহূর্তেই মলিন হয়ে গেলো তার। তবে সেটাও ক্ষণিকের জন্য। একটি হাত ব্যাগকে ঘিরে তার কান্না-হাসি।
বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আর্মড পুলিশের অফিসে মলিন মুখে বসে আছেন ইউসুফ কবির। দুচোখ ভেজা তার। কান্না করছেন আর আর্মড পুলিশ সদস্যদের কাছে সাহায্য চাইছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের পোস্টে তিনি দেখেছেন পুলিশের এই ইউনিট প্রবাসীদের হারানো কিংবা চুরি হওয়া জিনিসপত্র উদ্ধার করে দিচ্ছে। শুধু বিমানবন্দর নয়, ঢাকার বাইরে অন্য জেলা থেকেও উদ্ধার হচ্ছে খোয়া যাওয়া মালামাল। তাই আত্মবিশ্বাস নিয়ে তিনিও এসেছেন আর্মড পুলিশের কাছে।
২১ বছর ধরে সৌদি আরবে আছেন ইউসুফ। এবার ছুটিতে এসেছেন বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর)। ইমিগ্রেশন ঠিকঠাক মতো করে বেল্টে গিয়ে ব্যাগেজ পেয়েছেন কোনও ঝামেলা ছাড়াই। তারপর এলেন কাস্টম জোনে, সেখানে তার লাগেজগুলো তল্লাশি করা হয়। ইউসুফ কবিরও সহায়তা করলেন কাস্টমস কর্মকর্তাদের। নিজেই নিজের ব্যাগ স্কানিং মেশিনে দিলেন। তল্লাশি শেষে বের হয়ে এলেন টার্মিনাল থেকে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে বাবা, ছেলেসহ স্বজনরা এসেছেন তাকে নিয়ে যেতে। তর আর সইছে না তার।
ইউসুফ কবির বলেন, ‘গাড়ি নিয়ে আমরা রওনা হলাম। পথে দাউদকান্দি এলাকায় আমরা একটি হোটেলে থামলাম নাস্তা করার জন্য। নাস্তা শেষে আবার গাড়িতে উঠে দেখি আমার হাত ব্যাগটি নেই। তখন মনে পড়লো, আমি মনে হয় কাস্টম জোনে ব্যাগটি ফেলে এসেছি।’
এরপরই গাড়ি ঘুরিয়ে আবারও বিমানবন্দরের পথে রওনা দিলেন ইউসুফ কবির। অভিযোগ দিলেন আর্মড পুলিশের কাছে। সেখানে তিনি কাঁদতে থাকেন।
কী আছে এই হাত ব্যাগ, জবাবে ইউসুফ কবির বলেন, ‘ঘড়ি, মোবাইল ফোন, অলংকারসহ প্রায় ২ লাখ টাকার জিনিসপত্র ছিল।’
বিমানবন্দরের আর্মড পুলিশের সদস্যরা ইউসুফ কবিরকে বন্দরের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান। অতপর কাস্টম জোনেই পাওয়া যায় তার সেই হাত ব্যাগটি। কিছুক্ষণ আগেও যার চোখ ভেজা ছিল, তার মুখে ফুটলো হাসি। ইউসুফ কবিরকে বুঝিয়ে দেওয়া হয় তার হাত ব্যাগটি। নিজেই খুলে দেখলেন সব কিছুই ঠিকঠাক আছে ব্যাগের ভেতরে। একটু আগেও যে ব্যাগ হারানোর শোকে বিমর্ষ ছিলেন, মুহূর্তেই তার মুখে হাসি।
বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিয়াউল হক বলেন, ‘কাস্টমস জোনে প্রায় সময় যাত্রীরা নিজের জিনিসপত্র তাড়াহুড়োয় ভুলে ফেলে যান। ইউসুফ কবিরের ক্ষেত্রেও একই রকম ঘটনা ঘটেছে। যখন কাস্টমস জোনে তার ব্যাগ তল্লাশির জন্য স্ক্যানিং করা হয় তখন তিন অন্যসব ব্যাগ নিলেও হাত ব্যাগটি আর নেননি। লম্বা জার্নি করে বিমানবন্দরে নামার পরও যাত্রীদের মধ্যে দ্রুত বের হয়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু তখনই অনেকেই মনের ভুলে নিজের মূল্যবান জিনিসপত্র ভুলে ফেলে যান। তাই নিজের জিনিসপত্র খেয়াল করে নিতে সদর্ক থাকা উচিত।’
ছবি: প্রতিবেদক