X
মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪
৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

উপ-সহকারী পরিচালক শরীফের চাকরিচ্যুতি নিয়ে দুদকে তোলপাড়

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬:১০আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭:০৮

দুর্নীতি দমন কমিশনের পটুয়াখালী জেলা কার্যালয়ে কর্মরত উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দীনকে আকস্মিক চাকরিচ্যুত করা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিষয়টিকে অসাংবিধানিক আখ্যায়িত করে ওই কর্মকর্তাকে পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে দুদকের কর্মচারী (চাকরি) বিধিমালা- ২০০৮-এর বিতর্কিত ৫৪(২) ধারা বাতিল করারও দাবি জানান তারা। এই দাবিতে বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে দুদক কার্যালয়ের সামনে একটি মানববন্ধনও করা হয়। এতে প্রায় শতাধিক মধ্যম ও নিম্নপদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশ নেন। পরে দুদক চেয়ারম্যান বরাবর একটি স্মারকলিপিও জমা দেন তারা।

চাকরিতে বহালের দাবিতে মানববন্ধন

তবে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দীনের বিরুদ্ধে তিনটি বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে। আরও কয়েকটি বিভাগীয় মামলা দায়ের হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তার কারণে দুদকের সম্মানহানি হচ্ছিল। এ কারণে বিধি অনুযায়ী তাকের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তবে উপ-সহকারী পরিচালক শরীফের বিরুদ্ধে কী অভিযোগে বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে সে বিষয়ে দুদক সচিব স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।

জানা গেছে, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লা স্বাক্ষরিত এক আদেশে উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দীনকে আকস্মিক চাকরিচ্যুত করা হয়। আদেশে বলা হয়েছে, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৫৪(২)-তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে শরীফ উদ্দিনকে (উপ-সহকারী পরিচালক) চাকরি থেকে অপসারণ করা হলো। তিনি বিধি মোতাবেক ৯০ দিনের বেতন এবং প্রযোজ্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন।’ চাকরিচ্যুতির ১৬ দিন আগে শরীফ চট্টগ্রামের খুলশী থানায় জীবননাশ ও দুদকের চাকরি খাওয়ার হুমকির বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন।

সহকর্মীরা বলছেন, শরীফ উদ্দীন দীর্ঘদিন দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। তিনি দক্ষ ও পরিশ্রমী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। তিনি চট্টগ্রাম অফিসে কর্মরত থাকাকালীন ৫২টি মামলা দায়ের করেন। দুদকের প্রতিটি মামলা দায়েরের আগে বাদী প্রাথমিক ইনকোয়ারি বা অনুসন্ধান করে ঘটনার সত্যতা পেলে মামলা দায়েরের জন্য কমিশন বরাবর প্রতিবেদন পাঠান। পরে কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে মামলা রুজু করা হয়। উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ নিজেই তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে ১৫টি মামলার তদন্ত শেষ করে বিচারের জন্য আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন। তিনি কক্সবাজারের আলোচিত ভূমি অধিগ্রহণের নামে শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এ কারণে বিভিন্ন পক্ষ তাকে বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন, প্রাণনাশের হুমকি ও চাকরি খাওয়ার হুমকিও দিয়েছেন।

দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে দুদক কর্মচারী বিধিমালার যে ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে, তার কার্যকারিতার বিষয়টি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ওই ধারায় বলা হয়েছে, ‘এই বিধিমালায় ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কোনও কারণ না দর্শাইয়া কোনও কর্মচারীকে নব্বই দিনের নোটিশ প্রদান করিয়া অথবা নব্বই দিনের বেতন পরিশোধ করিয়া তাহাকে চাকরি হইতে অপসারণ করিতে পারিবে।’ অন্যদিকে সংবিধানের ১৩৫(২) নম্বর অনুচ্ছেদে লেখা আছে- ‘অনুরূপ পদে (প্রজাতন্ত্রের অসামরিক পদে) নিযুক্ত কোনও ব্যক্তিকে তাহার সম্পর্কে প্রস্তাবিত কোনও ব্যবস্থা গ্রহণের বিরুদ্ধে কারণ দর্শাইবার যুক্তিসঙ্গত সুযোগদান না করা পর্যন্ত তাহাকে বরখাস্ত, অপসারিত বা পদাবনতি করা যাইবে না।’

দুদক সূত্র জানায়, দুর্নীতি দমন কমিশন কর্মচারী (চাকরি) বিধিমালা, ২০০৮-এর ৫৪ বিধিটি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন নং ১৪২৪/২০১১ দায়ের করা হলে ২০১১ সালের ১৭ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগ দুদক চাকরি বিধিমালার ৫৪ বিধিকে অসাংবিধানিক হিসেবে ঘোষণা করে। উক্ত রায়ের বিপরীতে আপিল দায়ের হলে আপিল আদালত ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর আপিল খারিজ করে হাইকোর্ট বিভাগের ৫৪ বিধি অসাংবিধানিক ঘোষণাটি বহাল রাখে। এর বিপরীতে কমিশন আপিল বিভাগের উক্ত সিদ্ধান্তের বিপরীতে ৩২/২০১৭ সিভিল রিভিশন দায়ের করলে একতরফা (রিটকারীর প্রতিনিধির অনুপস্থিতিতে) শুনানি করে গত বছরের ২৮ নভেম্বর হাইকোর্টের আদেশটি স্থগিত করে। বিষয়টি এখনও উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।

দুদকের মধ্যম সারির একজন কর্মকর্তা জানান, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে এভাবে একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাতে আকস্মিক চাকরি থেকে অপসারণ করায় দুদক দুর্নীতিবাজদের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা করছে বলে সাধারণ মানুষ মনে করতে পারে। যদি উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দীনের বিরুদ্ধে কোনও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে তবে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে তার শাস্তি দেওয়া যেতে পারে। এ কারণে দুদকের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই কাজের প্রতি স্পৃহা হারিয়ে ফেলতে পারে।

/এনএল/এমআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ: কাস্টমসের সাবেক কর্মকর্তা ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই বিল তুলে আত্মসাৎ, দুদকের অভিযান
ব্যাংক এমডি ও ব্যবসায়ী মিলে আত্মসাৎ করলেন ১০৯ কোটি টাকা
সর্বশেষ খবর
কোরবানির পশুর বর্জ্য যথাযথভাবে অপসারণে মন্ত্রণালয়ের আহ্বান
কোরবানির পশুর বর্জ্য যথাযথভাবে অপসারণে মন্ত্রণালয়ের আহ্বান
‘বাংলাদেশে মত প্রকাশের অধিকার সংকটজনক পরিস্থিতেই রয়েছে’
‘বাংলাদেশে মত প্রকাশের অধিকার সংকটজনক পরিস্থিতেই রয়েছে’
বার বার কেন বন্ধ হচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার?
বার বার কেন বন্ধ হচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার?
কিংসের ট্রেবল জয় নাকি মোহামেডানের শ্রেষ্ঠত্ব
কিংসের ট্রেবল জয় নাকি মোহামেডানের শ্রেষ্ঠত্ব
সর্বাধিক পঠিত
১০০ লিচু ১০০০ টাকা, তবু দুশ্চিন্তায় এই গ্রামের চাষিরা
১০০ লিচু ১০০০ টাকা, তবু দুশ্চিন্তায় এই গ্রামের চাষিরা
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
সংসদীয় কমিটির তোপের মুখে টেলিটক
সংসদীয় কমিটির তোপের মুখে টেলিটক
সহিংসতার দুটি মামলা থেকে খালাস পেলেন ইমরান খান
সহিংসতার দুটি মামলা থেকে খালাস পেলেন ইমরান খান
ভোটারের অপেক্ষায় কুমিল্লার একটি কেন্দ্র
ভোটারের অপেক্ষায় কুমিল্লার একটি কেন্দ্র