X
শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
১৩ আষাঢ় ১৪৩২

ভিক্ষাবৃত্তির নেপথ্য সিন্ডিকেট সদস্যদের ধরতে অভিযান চালাবে পুলিশ

নুরুজ্জামান লাবু
০৩ মার্চ ২০২২, ২৩:৫৫আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২২, ১৬:৩১

রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও ট্রাফিক সিগন্যালে ভিক্ষুকের সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে শিশুদের দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করানোর প্রবণতা  আশঙ্কাজনক হারে চোখে পড়ছে। এর নেপথ্যে কোনও সিন্ডিকেট রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে বলেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। সম্প্রতি ডিএমপি’র মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা ইউনিটগুলোকে তিনি এই নির্দেশ দেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সমাজসেবা অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, আগে রাজধানী ঢাকায় প্রায় ৫০ হাজার ভিক্ষুক ছিল। গত কয়েক বছরে এই সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজধানীর ভিক্ষুকদের মধ্যে তুলনামূলকহারে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি। নারী বা শিশুদের বাধ্যতামূলকভাবে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামানো হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখাই ডিএমপি মূল উদ্দেশ্য।

ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাস্তায় ভিক্ষুক বা ভিক্ষুক সিন্ডিকেটকে প্রতিরোধের জন্য আলাদা সংস্থা রয়েছে। তারা যদি সুনির্দিষ্টভাবে কোনও সিন্ডিকেটের বিষয়ে প্রতিবেদন দেয় তাহলে অভিযান চালিয়ে তাদের আইনের আওতায় আনা যেতে পারে। এছাড়া অঙ্গহানি করে ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করা হচ্ছে– এরকম সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য পেলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা অন্যান্য বড় বড় অপরাধ দমনে কাজ করার পাশাপাশি সব অপরাধীকে ধরতে গোয়েন্দা নজরদারি করি।’

জানা গেছে, ২০১০ সালে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শিশুদের অপহরণের পর পঙ্গু বানিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামানো একটি চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। সেই সময় এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। এছাড়া সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভিক্ষুকদের বিভিন্ন স্থানে ভিক্ষা করিয়ে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার খবরও বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু স্পর্শকাতর ও মানবিক দিক বিবেচনা করে ভিক্ষুকদের বিষয়ে কেউ তেমন মাথা ঘামায়নি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সড়ক ও সিগন্যাল এলাকায় শিশু ভিক্ষুকের সংখ্যা তুলনামূলক হারে বেড়েছে।

সমাজসেবা অধিদফতরও বলছে, প্রাচীনকাল থেকেই মানব সমাজে ভিক্ষাবৃত্তি চলে আসছে। উপমহাদেশেও এর ইতিহাস দীর্ঘদিনের। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের শোষণ, বঞ্চনা এবং নদী ভাঙন, দারিদ্র, রোগ-ব্যাধি, অশিক্ষা ইত্যাদি কারণে ভিক্ষাবৃত্তির ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। তবে স্বল্পোন্নত অবস্থান থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তরণ ঘটলেও দেশ থেকে ভিক্ষাবৃত্তি কমেনি। বর্তমান সময়ে কিছু মানুষের কর্মবিমুখতা এবং একদল স্বার্থান্বেষী মহলের অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ভিক্ষাবৃত্তির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে।

অধিদফতর মনে করে– ভিক্ষাবৃত্তি একটি সামাজিক ব্যাধি, এটি স্বীকৃত কোন পেশাও নয়। এজন্য প্রাথমিকভাবে রাজধানীর ঢাকা শহরের কিছু এলাকা ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হয়। এছাড়া গত বছর এসব এলাকায় ১৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ১৮০ জন পেশাদার ভিক্ষুককে আটক করা হয। এরমধ্যে ৭২ জনকে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে বিভিন্ন মেয়াদে আটক রেখে প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন দেওয়া হয়। বাকি ১০৮ জনকে নিজ নিজ পরিবারে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

সমাজসেবা অধিদফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, রাজধানী ঢাকায় ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিতদের সামাজিক নিরাপত্তার বেষ্টনী বা ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে আনা যায় না। রাজধানী ঢাকার ভিক্ষুকদের বেশিরভাগই এককালীন অর্থ নিয়ে বিকল্প কর্মসংস্থানে যেতে চান না। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ধরে এনে পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখা হলেও তারা পালিয়ে যান।

অধিদফতর বলছে– ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনে ৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ১৪ হাজার ৭০৭ জন ভিক্ষুক উপকারভোগী হয়েছেন। কিন্তু এই তালিকায় রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নিয়োজিত ভিক্ষুকের সংখ্যা একেবারেই কম।

সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. শাজাহান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঢাকায় ভিক্ষুক পেশায় নিয়োজিতরা বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চলে। সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে। ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে আয়কৃত টাকার একটি অংশ সিন্ডিকেটের সদস্যরা নেয়। এজন্য ঢাকার ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিতরা পুনর্বাসনের জন্য আগ্রহী হয় না।’

ডিএমপি’র একজন কর্মকর্তা জানান, ডিএমপি অধ্যাদেশের ৮১ ধারায় ভিক্ষাবৃত্তিকে দণ্ডযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

ডিএমপি’র অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, যদি কেউ সড়কে বা অথবা উন্মুক্ত স্থানে শরীরের ক্ষত বা অঙ্গহানির অবস্থা দেখিয়ে টাকা নেয় তাহলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। এর শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ডের কথা বলা হয়েছে। তবে মানবিক কারণে ভিক্ষুকদের বেলায় এই ধারা প্রয়োগ করা হয় না বললেই চলে।

তবে ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনা অনুযায়ী ভিক্ষাবৃত্তির নেপথ্যে থাকা সিন্ডিকেটের সদস্যদের ধরতে নজরদারি রাখা হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সারা দেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার ১৬৭৩ জন
ডিএমপির ৬ ডিসি বদলি
গুম-খুনে বড় ভূমিকা পালনকারী পুলিশ বাহিনীর সংস্কার জরুরি: সামান্তা শারমিন
সর্বশেষ খবর
অক্সিজেন ফেসিয়াল করলে এই ৭ উপকার পাবেন
অক্সিজেন ফেসিয়াল করলে এই ৭ উপকার পাবেন
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আপাতত বৈঠকের পরিকল্পনা নেই: ইরান
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আপাতত বৈঠকের পরিকল্পনা নেই: ইরান
রেললাইন পার হতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় যুবকের মৃত্যু
রেললাইন পার হতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় যুবকের মৃত্যু
দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাট হাতে বিপদে অজি দল
দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাট হাতে বিপদে অজি দল
সর্বাধিক পঠিত
পরীক্ষায় বাড়তি সময় না দেওয়ায় পরিদর্শককে মারধর ছাত্রদল নেতার, দিলেন হত্যার হুমকি
পরীক্ষায় বাড়তি সময় না দেওয়ায় পরিদর্শককে মারধর ছাত্রদল নেতার, দিলেন হত্যার হুমকি
মাসদার হোসেন মামলার রিভিউ আবেদনের রায় রবিবার
মাসদার হোসেন মামলার রিভিউ আবেদনের রায় রবিবার
৮ আগস্ট ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা নিয়ে ক্ষোভ হাসনাত-সারজিসের
৮ আগস্ট ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা নিয়ে ক্ষোভ হাসনাত-সারজিসের
মব না, এটি প্রেসার গ্রুপ: প্রেস সচিব
মব না, এটি প্রেসার গ্রুপ: প্রেস সচিব
দুদকের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ ভুল করেছেন: ডিজি আক্তার হোসেন
দুদকের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ ভুল করেছেন: ডিজি আক্তার হোসেন