২০১৩ সালে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার বাগপাড়া এলাকায় এক নারী শ্রমিককে (২০) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় চার জনের মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন ও দু’জনকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন পাওয়া আসামিরা হলো— আশিকুর রহমান (৩৫), ইলিয়াছ মিয়া (২১), মো. রুমিন (২০) ও মো. রবিন (২০)। খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা হলো— মো. ইব্রাহিম (২২) ও আবদুর রহমান (২৪)।
আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনসুরুল হক চৌধুরী। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হারনুর রশিদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ আহমদ হিরো।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৩ মে দুপুরে পলাশ উপজেলার বাগপাড়া এলাকার ওই শ্রমিক কাজ শেষে একই এলাকায় কারখানার নিজস্ব মেসে ফিরছিলেন। তিনি জনতা পাটকলের ফটকের সামনে পৌঁছালে আসামিরা তাকে জোর করে পাশের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। পরে আশিকুর, ইলিয়াছ, রুমিন, রবিনসহ ছয় জন তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এর মধ্যে অন্যদের ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ধারণ করে অভিযুক্ত ইব্রাহিম ও আবদুর রহমান। ধর্ষণের পর তাকে আধা ঘণ্টা আটকে রাখে তারা। এ সময় কান্নাকাটি করলে ওই নারীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ঘটনার পরের দিন ওই শ্রমিক কারখানায় গিয়ে ঘটনাটি এক নারী নিরাপত্তাকর্মীকে জানান। তিনি কারখানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালে প্রশাসন বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক এ এস এম সাদেকুল ইসলাম বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে পলাশ থানায় ছয় জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন।
এরপর ২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট নরসিংদীর পলাশে নারী শ্রমিককে (২০) ধর্ষণের দায়ে ছয় জনের মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শামীম আহাম্মদ এ রায় দেন।
নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলো— পলাশ উপজেলার বাগপাড়া এলাকার আশিকুর রহমান (৩৫), ইলিয়াছ মিয়া (২১), মো. রুমিন (২০), মো. রবিন (২০), মো. ইব্রাহিম (২২) ও আবদুর রহমান (২৪)। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত ইব্রাহিম ও আবদুর রহমানকে আলাদাভাবে একই মামলায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে দুই লাখ টাকা করে জরিমানা এবং সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
পরে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে এবং নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে আসামিরা।