X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

টিপু হত্যায় গুলি সরবরাহ করেছিল বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী!

নুরুজ্জামান লাবু
১৭ জুন ২০২২, ২৩:০২আপডেট : ১৭ জুন ২০২২, ২৩:০২

রাজধানীর মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুসহ জোড়া খুনের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের খিলগাঁও জোনাল টিম। হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা সুমন শিকদার ওরফে মুসাকে ওমান থেকে ফিরিয়ে আনার পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে, বিভিন্ন সন্ত্রাসী রাজধানী ঢাকার বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গুলি কিনতো। খোদ টিপুসহ জোড়া খুনেও পুরানা পল্টন এলাকার একজন অস্ত্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে গুলি সংগ্রহ করেছিল তারা।

মুসার কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়ার পর গোয়েন্দা পুলিশ বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) রাতে পুরানা পল্টনের আর্মস মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার জিতুকে গ্রেফতার করেছে। তার কাছ থেকে গুলি সংগ্রহ করা রাকিব নামে আরেক সন্ত্রাসীকেও গ্রেফতার করা হয়। দুই জনকেই শুক্রবার (১৭ জুন) আদালতে সোপর্দ করে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এছাড়া মূলহোতা মুসার প্রথম দফা রিমান্ড শেষে আবারও চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

গুলিতে নিহত জাহিদুল ইসলাম টিপু এবং সামিয়া আফনান

গত ২৪ মার্চ রাতে জাহিদুল ইসলাম টিপু নিজের গাড়িতে বাসায় ফেরার সময় ঢাকার ব্যস্ততম এলাকা শাহজাহানপুর আমতলা এলাকায় তাকে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। তখন যানজটে রিকশায় থাকা কলেজ শিক্ষার্থী সামিয়া আফনান গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। আলোচিত এই জোড়া খুনের ঘটনার দুই দিনের মাথায় গোয়েন্দা পুলিশের খিলগাঁও জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহিদুর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল শুটার মাসুমকে গ্রেফতার করে। হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে মাসুম। তার স্বীকারোক্তিতে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় আরফান, শামীম, মানিক ও মুসার নাম উঠে আসে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, টিপু হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার পর মোল্লা শামীম নামে একজনকে দায়িত্ব দিয়ে গত ১২ মার্চ দুবাই চলে যায় মুসা। হত্যাকাণ্ডের পর তদন্তে তার নাম বেরিয়ে এলে দুবাই থেকে পালিয়ে ওমান চলে যায় সে। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মুসার পাসপোর্ট সংগ্রহের পর পুলিশ সদর দফতরের এনসিবি শাখার মাধ্যমে রয়েল পুলিশ অব ওমানের এনসিবি শাখাকে চিঠি দিয়ে তাকে গ্রেফতারে সহযোগিতা চায়।

বাংলাদেশ পুলিশের অনুরোধে গত ১৭ মে মুসাকে আটক করে রয়েল পুলিশ অব ওমান। পরবর্তী সময়ে ওমানের পুলিশ বিষয়টি বাংলাদেশ পুলিশকে জানালে এডিসি শাহিদুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম ওমান যায়। ওমানের রাজধানী মাসকাট থেকে গত ৯ মে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুসাকে ঢাকায় ফেরত আনা হয়।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, মুসাকে দেশে ফিরিয়ে আনার পর প্রথম দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয়। টিপু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি তারা মগবাজারের ইশতিয়াক জিতু নামে এক তরুণের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিল।

জিতুকে গ্রেফতারের পর তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে গোয়েন্দা পুলিশ। এরমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদে মুসা জানায়, রকিব নামে আরেক তরুণের মাধ্যমে সে পুরানা পল্টনের প্রীতম ভবনের আর্মস মিউজিয়াম থেকে ১৫ রাউন্ড গুলি সংগ্রহ করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গুলি সরবরাহকারী জিতু জানিয়েছে, এসব গুলি দিয়ে টিপুকে হত্যা করার পরিকল্পনার কথা তার জানা ছিল না।

সুমন সিকদার মুসা

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, সুমন শিকদার ওরফে মুসা ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের একসময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রকাশ-বিকাশের সহযোগী হিসেবে কাজ করতো। পরবর্তী সময়ে সে মতিঝিল এলাকার আরেক সন্ত্রাসী ফ্রিডম মানিকের সহযোগী হিসেবে কাজ করে। তার সঙ্গে দুবাইয়ে অবস্থানরত আরেক পলাতক সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। টিপু হত্যাকাণ্ডে অস্ত্র সরবরাহকারী জিতু পলাতক জিসানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, টিপুকে হত্যার প্রধান কারণ হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদে মুসা একেক সময় একেক কথা উল্লেখ করছে। তবে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা, মতিঝিল এলাকার টেন্ডারসহ চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের কারণেই এই হত্যাকাণ্ড। এর মোটিভ জানতে মুসাকে দ্বিতীয় দফায় চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আরও জানান, তারা এখনও এই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করতে পারেননি। হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া মোল্লা শামীমের হেফাজতে রয়েছে সেগুলো। ঘটনার পর সে পালিয়ে ভুটানে গেছে বলে তারা তথ্য পেয়েছেন। তারা ভুটানের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে শামীমকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। 

মাসুম মোহাম্মদ আকাশ

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, টিপু হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলো শুটার মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ, আবু হোসেন মোহাম্মদ আরফান উল্লাহ ইমাম খান ওরফে দামাল, নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির, ওমর ফারুক, মোরশেদুল ইসলাম ওরফে কাইল্যা পলাশ, আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালে, নাসির উদ্দিন ওরফে মানিক, মোহাম্মদ মারুফ খান, মশিউর রহমান ওরফে ইকরাম, ইয়াসির আরাফাত ওরফে সৈকত, সেকান্দার শিকদার ওরফে আকাশ, হাফিজুল ইসলাম ওরফে হাফিজ, সুমন শিকদার ওরফে মুসা, ইশতিয়াক জিতু, জিতু ও রাকিব। তাদের মধ্যে আকাশ ও মানিক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

/জেএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ফোনে কথা না বলায় প্রেমিকের জন্য খুনি ভাড়া করে সৌদিপ্রবাসী প্রেমিকা
নিজ্জার হত্যার অভিযোগে কানাডায় তিন ভারতীয় গ্রেফতার
‘সম্পত্তির লোভে’ মনজিলকে হত্যা: ৭ বছরেও শেষ হয়নি বিচার
সর্বশেষ খবর
দুবাইতে বিশ্বের ২৩ নম্বর চীনের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
দুবাইতে বিশ্বের ২৩ নম্বর চীনের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
বরিশালে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক থ্রি-হুইলার ভাংচুর
বরিশালে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক থ্রি-হুইলার ভাংচুর
জিরোনার মাঠে বার্সেলোনার নাটকীয় হারে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল
জিরোনার মাঠে বার্সেলোনার নাটকীয় হারে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল
‘ফাইভ স্টার’ ম্যানসিটি, চার গোল হাল্যান্ডের
‘ফাইভ স্টার’ ম্যানসিটি, চার গোল হাল্যান্ডের
সর্বাধিক পঠিত
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ