X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘রাষ্ট্রের মৌলিক চরিত্রে কোনও পরিবর্তন ঘটেনি’

ঢাবি প্রতিনিধি
২৩ জুন ২০২২, ২২:৫৩আপডেট : ২৩ জুন ২০২২, ২২:৫৩

বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, ত্রৈমাসিক নতুন দিগন্ত পত্রিকার সম্পাদক  ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, ইতিহাসের তিনটি পর্যায়ে আমার যোগাযোগ ঘটেছে।  উপনিবেশিক বা ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তানি আমল এবং বাংলাদেশ সময়ে। এই সময়ে বড় রাষ্ট্র ছোট হলো, আরও ছোট হলো। যেই অভিজ্ঞতা আমি লাভ করেছি তা হলো রাষ্ট্রের মৌলিক চরিত্রে কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। রাষ্ট্রের কাঠামো আমলাতান্ত্রিক হয়ে উঠেছে। অর্থনৈতিক বিকাশ পুঁজিবাদী হয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) ৮৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে আত্মজৈবনিক বক্তৃতার আয়োজন করা হয়। এসময় তিনি এসব কথা বলেন।

আত্মজৈবনিক বক্তৃতায় দীর্ঘ আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক তার জীবনের নানা অংশে ঘটে যাওয়া বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ এখনও উপনিবেশ থেকে মুক্ত হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পরও ইংরেজি ভাষায় বক্তৃতা করতাম। সেটা রয়ে গেছে কিন্তু। রাষ্ট্র বদল হয়েছে তবে উপনিবেশ বদল হয়নি। পাকিস্তানিরা পূর্ব বঙ্গকে একটি উপনিবেশ করতে চেয়েছে। আজকে বাংলাদেশ উপনিবেশে পরিণত হয়েছে। এটা পশ্চিমা উপনিবেশ নয়, এটা বাঙালি বেনিয়াদের উপনিবেশ। যারা বিদেশে টাকা পাচার করে।

তিনি বলেন, আমার প্রথম অভিজ্ঞতা হলো ১৯৪৩ সালে। ৩০ লাখ লোক মারা গেলো। আমাদের গ্রামে একজন লোক আত্মহত্যা করেছে। আমরা তখন শিশু। গিয়ে দেখি লোকটি গাছে ঝুলছে। লোকটি বেকার ছিল এবং অনাহারে ভুগছিল। এই আত্মহত্যার ঘটনা আমাকে ব্রিটিশ আমলের কথা মনে করিয়ে দেয়। ব্রিটিশ শাসনের একটি প্রতিচ্ছবি ছিল এটি।

পাকিস্তান রাষ্ট্র অভ্যুদয়ের ঘটনা নিয়ে ইমেরিটাস অধ্যাপক বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশভাগ এত বড় দুর্ঘটনা আমাদের ইতিহাসে আর ঘটেনি। পলাশী হলো প্রথম দুর্ঘটনা এবং দেশভাগ হলো দ্বিতীয়। ৪৭ সালে আমরা এসে স্টেশনে নামলাম। ঢাকায় আমাদের থাকার জায়গা ছিল না। বহু আত্মীয়ের বাড়ি ঘুরে নাজিরাবাজার উঠলাম। একটি বিষয় দেখলাম যারা সরকারি চাকরি করতেন তারা অবসর নিয়ে এসেছেন। কিন্তু যারা বেসরকারি চাকরি করতেন, ছোটখাটো ব্যবসা করতেন তারা বেকার হয়ে গেছেন৷ পাকিস্তানিরা যখন গোয়ালন্দ থেকে স্টিমারে এলো তখন কারও মুখে কোনও আনন্দ দেখলাম না। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ যেন একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেছে। এটি আমার পাকিস্তানি রাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা।

তৎকালীন সামাজিক অবস্থা নিয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের মেয়েরা যখন তার মায়েরা বের হতেন তখন রিকশায় কাপড় দিয়ে বের হতো। কিন্তু বোরকা পরে মেয়েরা রাস্তাঘাটে চলাফেরা করছেন এমনটি আমরা দেখি নি। এখন হিজাব, বোরকা কীভাবে এলো আপনারা দেখেছেন। তারপর তিনি প্রতিদিন সকালে উঠে একটি টিপ পরতেন সেটি নিয়ে তার মা বকাঝকা করত। বাংলাদেশেও আমরা দেখেছি টিপ পরার কারণে পুলিশের লোক তাকে মোটরসাইকেল দিয়ে মেরে ফেলতে উদ্ধত হয়েছিল। এই পরিবর্তন আমাদের সামনেই ঘটলো। এটি হচ্ছে বাংলাদেশের ছবি।

তিনি বলেন, আরেকটি সত্য হলো, ৪৭ সালে যখন আমরা স্বাধীন হলাম তখন রেশন কার্ড ছিল একটি জরুরি ব্যবস্থা। খাবারের জন্য পচা চাল, দুর্গন্ধ গম কলে ভাঙাতে হত। আবার যখন ৭১ এ স্বাধীন হলো তখন আবার দুর্ভিক্ষ, আবার সেই তেল পাওয়া যাচ্ছে না। সবকিছুর অভাব। এইভাবে পরিবর্তন আমরা দেখলাম।

বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনেও যোগ দিয়েছিলেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি ওসমানী উদ্যান রক্ষা, লালনের আখড়া, আড়িয়াল বিল রক্ষা এই তিনটি আন্দোলনে ছিলাম। এটা পরিবেশের কারণে নয় অধিকারের জায়গা থেকে আমি আন্দোলন করেছি। ওসমানী উদ্যান আমাদের খোলা জায়গা সেটা কেন একটি অডিটোরিয়াম নির্মাণের জন্য নেওয়া হবে, আড়িয়াল বিলে কেন এয়ারপোর্ট হবে, তাও অবৈজ্ঞানিকভাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েও তিনি কেন উপাচার্য হননি সে বিষয়ে তিনি বলেন, আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম এরশাদের সময়ে আমাকে ভাইস চ্যান্সেলর হতে হবে। আমাদের ইলেকট্রিশিয়ান সে এসে আমার স্ত্রীকে বললো, আপা স্যার নাকি ভাইস চ্যান্সেলর হবে তাহলে তো আমাদের কপাল খুলে যাবে। আমি তো ভাবলাম এদের যে আশা আমি তো মেটাতে পারবো না। একে তো সামরিক শাসন তার উপর আবার এতজনের আশা আকাঙ্ক্ষা আমি তো মেটাতে পারবো না।

‘আমি এর আগে ডিন হয়েছিলাম তখন আমি বুঝেছি এটি তো আমার কাজ নয়। আমি তখন আমার  স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম তুমি কি মনে করো? নাজমা (স্ত্রী) সব কিছু দেখেছে। তার মধ্যেও ভয় ঢুকেছে যে আমরা যদি এখান থেকে ছেড়ে সেই বড় বাড়িতে চলে যাবো। এই যে সামাজিক জীবন সকলের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবো। যখন ফেরত আসবো তারা আমাদের কীভাবে দেখবে। নাজমা তখন ছোট করে বলেছিল, আমি কিন্তু একজন লেকচারারকে বিয়ে করেছিলাম৷ আমি তখন বললাম এটি আমার পথ নয়’—বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ২১ টি সাক্ষাৎকার নিয়ে ‘আজ ও আগামীকাল’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী গান পরিবেশন করে। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন ও বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন অধ্যাপক আজফার চৌধুরী।

/এমআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ