বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।
শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বিকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার’ শীর্ষক আলোচনা সভার বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত এ সভায় হানিফ বলেন, ‘বছর দশেক আগে আমি বলেছিলাম, বাংলাদেশের শিক্ষার অধঃপতনের জন্য ছাত্র রাজনীতি যতটা না দায়ী, শিক্ষক রাজনীতি তারচেয়ে বেশি দায়ী। অনেকে এই বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। অনেকে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাস বলতে গেলে বঙ্গবন্ধুর কথা চলে আসে। যেই বঙ্গবন্ধুর মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি, সেই স্বাধীনতার ইতিহাস কি বিকৃত হয়নি? সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শামিল হয়নি? আমাদের স্বাধীনতা কি কোনও গোলটেবিল বৈঠকে হয়েছিল? দীর্ঘ এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়েছিল। জাতির পিতার নেতৃত্বে ৪৭-এর দেশভাগের পর ধাপে ধাপে একাত্তরের বিজয় এসেছিল।’
এসময় তিনি আরও বলেন, ২৭ তারিখ বিকাল পাঁচটায় জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। এই বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে পরে ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে।
হানিফ বলেন, ‘ইতিহাস বিকৃত করেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা! কীসের লোভে! কেন? যে শিক্ষক নিজের সৃষ্টির ইতিহাস বিকৃত করে, তারা দ্বারা আদর্শ মানুষ গড়ে উঠবে, এমনটা আশা করা মোটেও উচিত নয়।’
এ সময় খালেদা জিয়ার জন্মদিন ১৫ আগস্ট সমর্থন করে লেখা বইয়ের লেখকের প্রশংসা করায় ঢাবি আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুলেরও সমালোচনা করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এই নেতা আরও বলেন, কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্য বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছেন—এভাবে অনেকে লেখেন। এটি সত্য নয়। বহু সময় ধরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিকল্পনা চলছিল। দীর্ঘ প্লট রচনা করা হয়েছিল। একাত্তরের পরাজয়ের পর বিরোধী শক্তি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়েছিল। তারা এই পরাজয় মেনে নিতে পারেনি। হেনরি কিসিঞ্জারের অনেক কথায় সেই প্রতিশোধ স্পৃহা খুঁজে পাওয়া যাবে।
‘আমাদের দুর্ভাগ্য, বঙ্গবন্ধু যখন দেশকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন, তখন হঠাৎ এক বাম সংগঠনের আবির্ভাব হলো। তাদের সঙ্গে যোগ দিলো রাজাকার, আল বদররা। রাতারাতি তারা শক্তিশালী হলো এবং ৭২ ও ৭৩-এ অরাজকতা সৃষ্টি করলো বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ক্ষেত্র তৈরি করতে। এই আল বদরদের পেট্রোনাইজ করলো পাকিস্তানি পরাজিত শক্তি ও তাদের পশ্চিমা দোসররা। পরিকল্পিতভাবে ধাপে ধাপে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্লট তৈরি করে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তারা।
‘এই ঘটনায় সরাসরি যারা জড়িত তাদের বিচার হয়েছে। কিছু এখনও বাইরে আছে। পেছনের কুশীলবদের বিচারের জন্য একটি তদন্ত কমিটি প্রয়োজন। পাকিস্তানিদের এজেন্ট হিসেবে যারা কাজ করেছে, তারা পরাজিত হলেও তাদের ষড়যন্ত্র আছে। বিদেশিদের কাছে নানাভাবে মিথ্যা অভিযোগ করে আমাদের সরকারকে উৎখাতের স্বপ্ন দেখে।’
এসময় তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু কতগুলো ভিন্ন অভিধা বটে। তবে এগুলো একই সূত্রে গাঁথা। এসডিজি অর্জনে আমরা যেই ইনক্লুসিভনেস, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বলি, এটি বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শে ছড়িয়ে আছে। অন্তর্ভুক্তি সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখতেন ষাটের দশকে। এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশ্বাস করে আমরা সেগুলো অর্জন করবো।’
এসময় বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম-আলম চৌধুরী পারভেজের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওছারের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন অ্যালামনাইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার, জাতীয় ক্রিকেটার বীর মুক্তিযোদ্ধা রকিবুল হাসান, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু ও কবি ও সংস্কৃতি কর্মী তারিক সুজাত।