X
বুধবার, ২১ মে ২০২৫
৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাড়ছে ডেঙ্গু, দুই সিটির উদ্যোগে ভাটা

রাশেদুল হাসান
২৬ আগস্ট ২০২২, ০৮:০০আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২২, ০৮:০০

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকাগুলোতে ক্রমেই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এদিকে, ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা নির্মূলে কীটনাশক ছিটানোর মতো কিছু প্রথাগত কাজের বাইরে আর কোনও উদ্যোগ নেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। অথচ ২০১৯ সালে ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করলে দুই সিটিই অভিনব কিছু উদ্যোগের কথা জানিয়েছিল।

কীটতত্ত্ববিদরা বলেছেন,  ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মশক বিভাগকে ঢেলে সাজানো দরকার। অভিজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ, নিয়মিত মশার ঘনত্ব জরিপ, মশক কার্যক্রম তদারকি ও মূল্যায়ন এবং কীটনাশকের কার্যকারিতা পরীক্ষার নিয়মিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ আগস্ট সকাল ৮টা থেকে ২৫ আগস্ট সকাল ৮টা পর্যন্ত সারা দেশে ১৮০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে শুধু ঢাকাতেই ভর্তি হন ১৩৪ জন।

২৩ আগস্ট সকাল ৮টা থেকে ২৪ আগস্ট সকাল ৮টা পর্যন্ত সারা দেশে ১৬৫ জন ডেঙ্গু রোগীকে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে ১২৫ জনই ঢাকার রোগী।

চলতি বছরে এখন পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১৯ জন। আর এ মাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪৫৭ জন আর মারা গেছে দুই জন।

এ বছরের এপ্রিলে ভর্তি হয়েছেন ২৩ জন, মে'তে ১৬৩ জন, জুনে ৭৩৭ জন, জুলাইতে ১৫৭১ জন।

ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও এতে উদ্বেগের কিছু দেখছেন না ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান বলেন, এতে উদ্বেগের কিছুই নেই। এটা আমাদের জন্য কিছুটা নতুন। এখন এটি জ্বর-ডায়রিয়ার মতো সাধারণ রোগে পরিণত হয়েছে। এখন ডায়রিয়ার হিসাব নিলেও এর চেয়ে বেশি পাওয়া যাবে। ম্যালেরিয়াতেও তো অনেকে আক্রান্ত, সেটা নিয়ে কেউ তো উদ্বিগ্ন হয় না! ২০১৯ সালের জুন থেকে অক্টোবরের হিসাবে এখনও আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কম।'

এ পরিস্থিতিতে কি কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি  বলেন, নিয়মিত কার্যক্রম চলছে। সকালে লার্ভিসাইডিং আর বিকালে ফগিং। পাশাপাশি আমরা শহরের বিভিন্ন ড্রেনে গাপ্পি মাছ ছেড়েছি। এছাড়াও ড্রোন দিয়ে ছাদবাগানগুলোতে পানি আছে কিনা তদারকি করা হচ্ছে।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন,  পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আছে। উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আর স্বাস্থ্য অধিদফতরের রিপোর্টে প্রচুর ভুল তথ্য দেওয়া হয় আর সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানো হয়। আমরা অন্তত ২০টি ভুল পেয়েছি।'

এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. জি এম সাইফুর রহমান বলেন,  আমি এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। কারণ, ভাইরাসবাহী রোগকে এত হালকা করে দেখার সুযোগ নাই। এবার একদিন বৃষ্টি হলে তিন দিন খরা—এজন্য এডিস মশা আস্তে আস্তে বাড়ছে। এটা হঠাৎ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। অক্টোবর পর্যন্ত উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনও কারণ নেই।'

মশক কার্যক্রমের তদারকি ও মূল্যায়ন নেই

জি এম সাইফুর রহমানের মতে, সিটি করপোরেশন যে মশক নিধন কার্যক্রম চালায় এটা অনেকটা অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতো। কোন ওয়ার্ডে কোন ধরনের মশার কী পরিমাণ ঘনত্ব—এর ওপর সিটি করপোরেশন জরিপ চালায় না। নিয়মিত লার্ভিসাইডিং ও এডাল্টিসাইডিং করা হচ্ছে কিন্তু তা কোন এলাকায় কতটুকু করা হচ্ছে—জানা জরুরি! যে কীটনাশক প্রয়োগ হচ্ছে—তার ফল পাওয়া যাচ্ছে কিনা কিংবা সঠিকভাবে কর্মীরা প্রয়োগ করছেন কিনা, পাশাপাশি কোন সেরোটাইপের রোগী কোথায় আছে—এটাও মশক নিধন কার্যক্রমের জন্য জরুরি।

২০১৯ সালে ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করলে কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল ডিপার্টমেন্ট খোলার চিন্তা করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

এ বিভাগ পরিচালনার অভিজ্ঞতা নিতে দক্ষিণ সিটির তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকন ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরিফ আহমেদ সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য বিভাগ ঘুরে আসেন।

তারা জানিয়েছিলেন—সিটি করপোরেশন এখন থেকে ট্রাপ মেশিনের সাহায্যে জরিপ করে মশার ঘনত্বের ভিত্তিতে লাল,  সাদা,  হলুদ বিভিন্ন জোনে ভাগ করে কার্যক্রম চালাবে।

এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, 'এরকম বিভাগ খোলার চিন্তা আমাদের নেই। এটা ছিল তখনকার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত।'

আর উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছিলেন, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে সারা বছরব্যাপী ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট পরিচালনা করা হবে।

এ বিষয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের কীটতত্ত্ববিদের সংকট রয়েছে। এ কার্যক্রম পরিচালনা করতে সিটি করপোরেশনের প্রতিটি অঞ্চলে অন্তত একজন করে কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ করা দরকার।

বর্তমানে দুই সিটির মশক বিভাগে দুই জন কীটতত্ত্ববিদের পদ আছে। আর দুই সিটিতে একজন করে দুই জন কীটতত্ত্ববিদ কাজ করেন। তারা বলছেন, একজন কীটতত্ত্ববিদের পক্ষে এত ওয়ার্ডে যাওয়া সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে কীটতত্ত্ববিদ সাইফুর বলেন, 'সিটি করপোরেশনের মশক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অন্তত চার-পাঁচ জন অভিজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদের একটি দল মশক কার্যক্রম তদারকি ও মূল্যায়নের জন্য থাকা দরকার। আর বর্তমানে সিটি করপোরেশনের এমন কর্মকর্তারা মশক বিভাগ পরিচালনা করেছেন, যাদের মশা নিয়ে বলার মতো গবেষণাই নেই।'

/এমএস/
সম্পর্কিত
আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা বরদাশত করা হবে না: ডিএমপি
কদমতলীতে জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে যুবকের আত্মহত্যার অভিযোগ
রাজধানীতে মুষলধারে বৃষ্টি, যানজটে নাকাল
সর্বশেষ খবর
আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে আইপিএলের ফাইনাল 
আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে আইপিএলের ফাইনাল 
টিভিতে আজকের খেলা (২১ মে, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (২১ মে, ২০২৫)
অর্থনৈতিক অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে জিরো টলারেন্স
অর্থনৈতিক অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে জিরো টলারেন্স
কে হচ্ছেন নতুন পররাষ্ট্র সচিব 
কে হচ্ছেন নতুন পররাষ্ট্র সচিব 
সর্বাধিক পঠিত
মহার্ঘ ভাতা পেতে যাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা: অর্থ উপদেষ্টা
মহার্ঘ ভাতা পেতে যাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা: অর্থ উপদেষ্টা
ভ্যানচালকের কাছে এসএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র
ভ্যানচালকের কাছে এসএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র
ধানমন্ডিতে মধ্যরাতে বাসার সামনে অবস্থান, আটক ৩
ধানমন্ডিতে মধ্যরাতে বাসার সামনে অবস্থান, আটক ৩
ক্যানসার ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধক আলুর তিনটি জাত উদ্ভাবন
ক্যানসার ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধক আলুর তিনটি জাত উদ্ভাবন
স্টারলিংকের সংযোগ কীভাবে পাবেন, কোথায় ব্যবহার করতে পারবেন
স্টারলিংকের সংযোগ কীভাবে পাবেন, কোথায় ব্যবহার করতে পারবেন