X
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বাড়ছে ডেঙ্গু, দুই সিটির উদ্যোগে ভাটা

রাশেদুল হাসান
২৬ আগস্ট ২০২২, ০৮:০০আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২২, ০৮:০০

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকাগুলোতে ক্রমেই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এদিকে, ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা নির্মূলে কীটনাশক ছিটানোর মতো কিছু প্রথাগত কাজের বাইরে আর কোনও উদ্যোগ নেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। অথচ ২০১৯ সালে ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করলে দুই সিটিই অভিনব কিছু উদ্যোগের কথা জানিয়েছিল।

কীটতত্ত্ববিদরা বলেছেন,  ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মশক বিভাগকে ঢেলে সাজানো দরকার। অভিজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ, নিয়মিত মশার ঘনত্ব জরিপ, মশক কার্যক্রম তদারকি ও মূল্যায়ন এবং কীটনাশকের কার্যকারিতা পরীক্ষার নিয়মিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ আগস্ট সকাল ৮টা থেকে ২৫ আগস্ট সকাল ৮টা পর্যন্ত সারা দেশে ১৮০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে শুধু ঢাকাতেই ভর্তি হন ১৩৪ জন।

২৩ আগস্ট সকাল ৮টা থেকে ২৪ আগস্ট সকাল ৮টা পর্যন্ত সারা দেশে ১৬৫ জন ডেঙ্গু রোগীকে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে ১২৫ জনই ঢাকার রোগী।

চলতি বছরে এখন পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১৯ জন। আর এ মাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪৫৭ জন আর মারা গেছে দুই জন।

এ বছরের এপ্রিলে ভর্তি হয়েছেন ২৩ জন, মে'তে ১৬৩ জন, জুনে ৭৩৭ জন, জুলাইতে ১৫৭১ জন।

ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও এতে উদ্বেগের কিছু দেখছেন না ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান বলেন, এতে উদ্বেগের কিছুই নেই। এটা আমাদের জন্য কিছুটা নতুন। এখন এটি জ্বর-ডায়রিয়ার মতো সাধারণ রোগে পরিণত হয়েছে। এখন ডায়রিয়ার হিসাব নিলেও এর চেয়ে বেশি পাওয়া যাবে। ম্যালেরিয়াতেও তো অনেকে আক্রান্ত, সেটা নিয়ে কেউ তো উদ্বিগ্ন হয় না! ২০১৯ সালের জুন থেকে অক্টোবরের হিসাবে এখনও আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কম।'

এ পরিস্থিতিতে কি কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি  বলেন, নিয়মিত কার্যক্রম চলছে। সকালে লার্ভিসাইডিং আর বিকালে ফগিং। পাশাপাশি আমরা শহরের বিভিন্ন ড্রেনে গাপ্পি মাছ ছেড়েছি। এছাড়াও ড্রোন দিয়ে ছাদবাগানগুলোতে পানি আছে কিনা তদারকি করা হচ্ছে।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন,  পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আছে। উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আর স্বাস্থ্য অধিদফতরের রিপোর্টে প্রচুর ভুল তথ্য দেওয়া হয় আর সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানো হয়। আমরা অন্তত ২০টি ভুল পেয়েছি।'

এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. জি এম সাইফুর রহমান বলেন,  আমি এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। কারণ, ভাইরাসবাহী রোগকে এত হালকা করে দেখার সুযোগ নাই। এবার একদিন বৃষ্টি হলে তিন দিন খরা—এজন্য এডিস মশা আস্তে আস্তে বাড়ছে। এটা হঠাৎ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। অক্টোবর পর্যন্ত উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনও কারণ নেই।'

মশক কার্যক্রমের তদারকি ও মূল্যায়ন নেই

জি এম সাইফুর রহমানের মতে, সিটি করপোরেশন যে মশক নিধন কার্যক্রম চালায় এটা অনেকটা অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতো। কোন ওয়ার্ডে কোন ধরনের মশার কী পরিমাণ ঘনত্ব—এর ওপর সিটি করপোরেশন জরিপ চালায় না। নিয়মিত লার্ভিসাইডিং ও এডাল্টিসাইডিং করা হচ্ছে কিন্তু তা কোন এলাকায় কতটুকু করা হচ্ছে—জানা জরুরি! যে কীটনাশক প্রয়োগ হচ্ছে—তার ফল পাওয়া যাচ্ছে কিনা কিংবা সঠিকভাবে কর্মীরা প্রয়োগ করছেন কিনা, পাশাপাশি কোন সেরোটাইপের রোগী কোথায় আছে—এটাও মশক নিধন কার্যক্রমের জন্য জরুরি।

২০১৯ সালে ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করলে কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল ডিপার্টমেন্ট খোলার চিন্তা করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

এ বিভাগ পরিচালনার অভিজ্ঞতা নিতে দক্ষিণ সিটির তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকন ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরিফ আহমেদ সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য বিভাগ ঘুরে আসেন।

তারা জানিয়েছিলেন—সিটি করপোরেশন এখন থেকে ট্রাপ মেশিনের সাহায্যে জরিপ করে মশার ঘনত্বের ভিত্তিতে লাল,  সাদা,  হলুদ বিভিন্ন জোনে ভাগ করে কার্যক্রম চালাবে।

এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, 'এরকম বিভাগ খোলার চিন্তা আমাদের নেই। এটা ছিল তখনকার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত।'

আর উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছিলেন, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে সারা বছরব্যাপী ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট পরিচালনা করা হবে।

এ বিষয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের কীটতত্ত্ববিদের সংকট রয়েছে। এ কার্যক্রম পরিচালনা করতে সিটি করপোরেশনের প্রতিটি অঞ্চলে অন্তত একজন করে কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ করা দরকার।

বর্তমানে দুই সিটির মশক বিভাগে দুই জন কীটতত্ত্ববিদের পদ আছে। আর দুই সিটিতে একজন করে দুই জন কীটতত্ত্ববিদ কাজ করেন। তারা বলছেন, একজন কীটতত্ত্ববিদের পক্ষে এত ওয়ার্ডে যাওয়া সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে কীটতত্ত্ববিদ সাইফুর বলেন, 'সিটি করপোরেশনের মশক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অন্তত চার-পাঁচ জন অভিজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদের একটি দল মশক কার্যক্রম তদারকি ও মূল্যায়নের জন্য থাকা দরকার। আর বর্তমানে সিটি করপোরেশনের এমন কর্মকর্তারা মশক বিভাগ পরিচালনা করেছেন, যাদের মশা নিয়ে বলার মতো গবেষণাই নেই।'

/এমএস/
সম্পর্কিত
যে জাদুঘরের পরতে পরতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
কাওরানবাজারে লা ভিঞ্চি হোটেলের জেনারেটর রুমে আগুন
ধোলাইখালে মিউচুয়াল ট্র্যাস্ট ব্যাংকের শাখায় আগুন
সর্বশেষ খবর
স্বাস্থ্য সহকারী পদে লিখিত পাস করে মৌখিকে প্রক্সি দিতে এসে ধরা
স্বাস্থ্য সহকারী পদে লিখিত পাস করে মৌখিকে প্রক্সি দিতে এসে ধরা
একক নয়, বাকশাল ছিল একটি জাতীয় দল: ওবায়দুল কাদের
একক নয়, বাকশাল ছিল একটি জাতীয় দল: ওবায়দুল কাদের
চীন সফর: শি’র মন জয়ের চেষ্টায় ব্যস্ত ছিলেন পুতিন
চীন সফর: শি’র মন জয়ের চেষ্টায় ব্যস্ত ছিলেন পুতিন
খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের বাজেট দাবি
খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের বাজেট দাবি
সর্বাধিক পঠিত
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ইসির
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ইসির
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
দাম কমেছে সবজি-মাংসের, তবু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক
দাম কমেছে সবজি-মাংসের, তবু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
কোথায় কীভাবে কেএনএফ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়, জানালেন নারী শাখার প্রধান
কোথায় কীভাবে কেএনএফ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়, জানালেন নারী শাখার প্রধান