X
বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫
১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ডিপ্রেশন কি নতুন ‍কিছু?

উদিসা ইসলাম
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:০০আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:০০

আপনার চার পাশে কেউ হয়তো পরিবারে মনোনিবেশ করতে পারে না, কেউ চাকরির জায়গায় ভালো কিছু করতে না পেরে হতাশ, কেউ চাকরি পেয়ে হতাশ, কারোর সম্পর্ক নিয়ে সমস্যা, কেউবা সম্পর্ক হচ্ছে না বলে অখুশি, আবার কারোর কোনও সমস্যা নেই বলে একঘেয়েমিতে বিরক্ত। এমন একটা ওষুধ এলো— যা খেলে আপনার এই সমস্যাগুলো দূর হবে, অবসাদ থেকে মুক্তি মিলবে, আপনি জাগতিক কাজে মনোনিবেশ করতে পারবেন এবং হলোও তাই। সবাই আনন্দে থাকতে শুরু করলো। একসময় দেখা গেলো— আসলে সেই ওষুধে কোনও উপকরণই ছিল না, সেটা শ্রেফ ময়দার গোলা। সেই ‘ওষুধ’ সেবনের পাশাপাশি যে নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছিল, মূলত সেটাই তাদেরকে অবসাদ থেকে বের করে এনেছে— নিয়মিত ব্যায়াম, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো, আড্ডা, কাছের মানুষের সঙ্গে ফোনালাপ, যা করতে ইচ্ছে করে সেটাই করা। এটি ‘হ্যাপি-পিল’ নামে এক সিনেমার গল্প। জীবন সিনেমা নয়, কিন্তু সিনেমার গল্পতো জীবন থেকেই নেওয়া। মূল বিষয় হলো নিজের ওপর বিশ্বাস আনা।

এই যে মানুষের অবসাদ— এটা কি নতুন কিছু? মনোচিকিৎসকরা বলছেন, এটি যুগে যুগে ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এর ধরন এবং কারণ বদলেছে। ডিপ্রেশন কেবল মন খারাপ নয়, এটি শরীরের ওপর প্রভাব ফেলে এবং একসময় গিয়ে মানুষ এটা থেকে বের হওয়ার সক্ষমতা হারায়। তবে একটু মন খারাপ হলেও আমার ডিপ্রেশন চলছে— এটা বলেন যারা প্রকৃত ডিপ্রেশনের যেসব রোগী, তাদের পরিস্থিতিটাকে বুঝতে চান না। যারা প্রকৃত ডিপ্রেশনের রোগী তাদের ক্ষেত্রে ওষুধের পাশাপাশি যেকোনও উপায়ে ভুক্তভোগীর আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর কাজটিই করেন চিকিৎসকরা।

কখন বুঝবেন আপনি ডিপ্রেশনে

দীর্ঘদিন মন খারাপ, নিজেকে সবকিছু থেকে বিরত রেখে চুপ হয়ে যাওয়ার সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে, ডিপ্রেশন যেকোনও সময় আপনাকে গ্রাস করতে পারে। একটা পর্যায়ে আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া, সব বিষয়ে পিছিয়ে পড়া, আমি পারবো না— এই চিন্তা নিজের মনে ঢুকিয়ে নেওয়া ও বিশ্বাস করা, বাস্তব থেকে দূরে সরে যেতে থাকা, আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া, সব বিষয়ে পিছিয়ে পড়া। কথায় কথায় রেগে যাওয়া। কেউ ভালো কথা বললেও তা যেন শুনতে না চাওয়া। খেতে ভালো না লাগা। সবমিলিয়ে নিজের প্রতি ভালোবাসা কমতে থাকা।

মনোরোগ বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘লক্ষণ যদি আপনার মাঝে দু’সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে অব্যাহত থাকে, তাহলে সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া আপনার জন্য প্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে। কারণ, এসব সমস্যা বেশি দিন ধরে পুষে রাখা মানে রোগকে আরও জটিল করা। অর্থাৎ, মাইনর ডিপ্রেশন টার্ন করতে পারে মেজর ডিপ্রেশনে।’

কেন ডিপ্রেশন হয়?

কেন ডিপ্রেশন হয় বলতে গিয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মেখলা সরকার বলেন, ‘ডিপ্রেশন মানসিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া। আমাদের জীবনে অনেক চড়াই-উৎড়াই থাকে। সেটা নিজেদের মন মতো না হলে, কোনও কিছু হারালে মন খারাপ হয়। সাময়িকভাবে আত্মবিশ্বাস কমে যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে তখনই রোগ বলবো— যখন সেটা দু সপ্তাহের বেশি সময় থাকবে। এরপরে এমনকি সুইসাইডাল আইডিয়াও আসতে পারে। টানা এরকম চলতে থাকলে তখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার দরকার। মন খারাপের ঘটনায় মন খারাপ না হলে সেটাতো অস্বাভাবিক। কিন্তু মনে রাখতে হবে— চাপ মোকাবিলার ক্ষমতা সবার সমান না। কোনও একটি ঘটনায় অনেকে মুষড়ে পড়ে, অনেকের কম মন খারাপ হয়।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কি একটা কারণ?

এখন আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেক লাইফ দেখে সেটাকে বাস্তব মনে করতে চাই। যখন অন্যরা ভালো আছে, আমি কেন নেই বোধ তৈরি হয়, তখন সেটা সামলানো মুশকিল। তবে কারোর বিষণ্নতা রোগ হলে সেটা জেনেটিক হওয়ার চান্স বেশি। বেড়ে ওঠার সঙ্গে মানসিক গঠনের ভূমিকা আছে। আমাদের সন্তানরা অনলাইনে যুক্ত হচ্ছে, বাস্তবের সঙ্গে যোগাযোগ কমে যাচ্ছে। কিন্তু তা না হয়ে সব সম্পর্কের সঙ্গে পৃথক পৃথক যোগাযোগ তৈরি হওয়ার কথা ছিল। আমরা প্রকৃতির মধ্য দিয়েও আনন্দের অনুভূতি পাই। কেউ আসল জীবনের মধ্য দিয়ে বড় হলো সে জীবনটাকে পরিচালনা করা শেখে। রিয়েল লাইফের এই জায়গাগুলো দিলে লাইফ ম্যানেজমেনেটর যে ক্ষমতা, তা  তৈরি হয় না। ভার্চুয়াল মিডিয়ায় যা দেখছে, সেটাকেই সে বাস্তব মনে করছে। বন্ধুরা কোথায় যায় কী করে দেখে, সেটা দেখে সে বিষণ্ন বোধ করে। এটা যে ফেক লাইফ সেটা বোঝার মতো মানসিক গড়ন তার হয়নি বলেই ডিপ্রেশনে পড়ে।

ডিপ্রেসড না হওয়া থেকে মুক্তির উপায়

মুক্তি লাভে শিশু-কিশোরদের জন্য অভিভাবকের দায়িত্ব যেমন আছে, একজন পরিণত মানুষেরও নিজের দায়িত্ব আছে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মেখলা সরকার বলেন, ‘আমরা সামাজিক পরিবর্নশীলতার মধ্য দিয়ে পার হচ্ছি। এখানে প্রযুক্তি জীবন নিয়ন্ত্রণ করছে। অনলাইন থাকবে, কিন্তু এটা যেন অভিভাবকের জানা-বোঝার মধ্যে হয়। শিশু স্বাধীনভাবে বড় হবে ঠিকই, কিন্তু একটা যথাযথ মনিটরিং থাকবে। কারণ, কোনটা ভালো-মন্দ সে পুরোটা তখনও বুঝে না। কোনটা আসল আর কোনটা দেখানো জীবন, সেটার পার্থক্য বুঝাতে হবে। আর মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের যেন সুযোগ থাকে, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ডিপ্রেশনে যদি আপনি পড়েই যান, তাহলে থেকে মুক্তি পেতে হলে সর্বপ্রথম এর চিকিৎসার প্রয়োজন। এর সঙ্গে আরও বেশি করে প্রয়োজন কাছের কোনও মানুষের। যে তাকে খুব ভালো করে বোঝে, জানে, এবং মনের যত্ন নিতে পারবে। এমন কোনও মানুষের কাছাকাছি থাকতে হবে।’

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পটুয়াখালীতে তিন ধরে টানা বৃষ্টি
পটুয়াখালীতে তিন ধরে টানা বৃষ্টি
সরকারি দায়িত্ব ছাড়ছেন ইলন মাস্ক
সরকারি দায়িত্ব ছাড়ছেন ইলন মাস্ক
কমলাপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে এক কিশোরের দুই পা বিচ্ছিন্ন
কমলাপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে এক কিশোরের দুই পা বিচ্ছিন্ন
টাইলসের দাগ দূর করার টিপস জেনে নিন
টাইলসের দাগ দূর করার টিপস জেনে নিন
সর্বাধিক পঠিত
আনু মুহাম্মদের স্ট্যাটাসে আসিফ নজরুলের বিস্ময়
আনু মুহাম্মদের স্ট্যাটাসে আসিফ নজরুলের বিস্ময়
ঢাবিতে বামপন্থিদের মশাল মিছিল ঘিরে উত্তেজনা, ‘ভুয়া ভুয়া’ দুয়োধ্বনি
ঢাবিতে বামপন্থিদের মশাল মিছিল ঘিরে উত্তেজনা, ‘ভুয়া ভুয়া’ দুয়োধ্বনি
সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য জুয়েলারি ব্যবসা বন্ধ
সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য জুয়েলারি ব্যবসা বন্ধ
ভুয়া পরিচয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে ১২ বছর চাকরি: বরখাস্ত মামা-ভাগনে
ভুয়া পরিচয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে ১২ বছর চাকরি: বরখাস্ত মামা-ভাগনে
কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা
কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা