X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘ভুয়া ডিবিতে’ নাকাল মানুষ, চক্রের ৬ সদস্য গ্রেফতার

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১১ অক্টোবর ২০২২, ১৫:৪৩আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২২, ১৬:১০

রাজধানীর কোনও ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকা তুলে ফিরছেন কেউ, মুহূর্তেই তারা খবর পেয়ে যাচ্ছে। পরে পথে গতিরোধ করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয় দিয়ে তাকে কালো গ্লাসের মাইক্রোবাসে তুলে নেবে। এরপর পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বেঁধে মাইক্রোবাসের সিটের নিচে উপুড় করে চলে তার ওপর নির্যাতন। এ অবস্থায় কিছুক্ষণ ঢাকার আশপাশের এলাকায় মাইক্রোবাস নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তারা। পরে টাকা নিয়ে নির্জন কোনও স্থানে চোখবাঁধা অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ডিবি পরিচয়ে, ডিবির ব্যবহৃত সরঞ্জাম নিয়ে রাজধানীতে এভাবেই ডাকাতি করছিল তারা। এই চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০।

মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১০ অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন এ তথ্য জানান।।

তিনি বলেন, ‘‘সোমবার (১০ অক্টোবর) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি, ভুয়া ডিবি পরিচয় দিয়ে একটি চক্র রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তি ও পথচারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে  ডাকাতি চেষ্টা করছিল। পরে ভুয়া ডিবি পরিচয়কারী ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা হলো—সবুজ খাঁন (৪৬), মিন্টু পাটোয়ারী (৪০), রাসেল মোল্লা (৪৫), ইকবাল মিয়া (৩৯), মনিরুল ইসলাম (৪০) ও  খোকন মিয়া (৪৫)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩টি ভুয়া ডিবি পুলিশের জ্যাকেট, ২টি ওয়াকিটকি সেট, ১টি হাতকড়া, ১টি খেলনা পিস্তল, ১টি হ্যান্ডফ্লাশ লাইট, ১টি পুলিশ মনোগ্রাম সংবলিত স্টিকার, ৭টি মোবাইল ফোন ও নগদ ১ হাজার ৯৫০ টাকা জব্দ করা হয়।

অধিনায়ক মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সদস্য। তারা ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, মতিঝিল, বায়তুল মোকাররমসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করতো। তারা মূলত ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তিকে টার্গেট করে ডাকাতি করতো।’

তিনি জানান, গ্রেফতারকৃত সবুজ খাঁন ভুয়া ডিবি পুলিশ চক্রের মূলহোতা। এ কাজের জন্য গ্রেফতারকৃত রাসেল ব্যাংক ও জনবহুল এলাকায় অবস্থান করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট করতো। তাকে অনুসরণ করতো এবং ব্যক্তির শরীরের গড়ন, পোশাকের বর্ণনা ও অবস্থান সম্পর্কে তাদের সমন্বয়ক মিন্টুকে জানায়। তখন মিন্টু পরিকল্পনা অনুযায়ী অন্য সহযোগীদের নিয়ে ডিবি পুলিশের জ্যাকেট-সদৃশ পোশাক পরা অবস্থায়, হাতে ওয়াকিটকি সেট ও হ্যান্ডকাফ নিয়ে ভাড়া করা মাইক্রোবাসযোগে টার্গেট ব্যক্তিকে ঘিরে ফেলে। তারা  ডিবি পুলিশের কর্মকর্তা হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতো। টার্গেট ব্যক্তি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে মাদক কারবারি বা মামলার আসামিসহ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে মারধর করতো এবং দ্রুত স্থান ত্যাগ করে চলে যেতো। পরবর্তী সময়ে ভিকটিমের কাছে থাকা টাকা, মোবাইল ও স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে তাকে সুবিধাজনক স্থানে মাইক্রোবাস থেকে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যেতো।

র‌্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃত মো. সবুজ খাঁন ভুয়া ডিবি পুলিশ চক্রের মূলহোতা। সে ডাকাতি করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি (ডিবি পুলিশের জ্যাকেট, ওয়াকিটকি, হাতকড়া, খেলনা পিস্তল ইত্যাদি) সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করতো। তার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী ও পল্টন থানায় একই অপরাধে ৩টি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।

গ্রেফতারকৃত মিন্টু পাটোয়ারী পেশায় ছদ্মবেশী সিএনজি ও অটোরিকশা চালক। এই পেশার আড়ালে সে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করার জন্য তথ্য সংগ্রহ করতো। পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সুবিধাজনক সময়ে নির্দিষ্ট বাড়ি, দোকান, ব্যাংক, ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তিদের পথরোধ করে তাদের সর্বস্ব লুটে নিতো।

গ্রেফতারকৃত  রাসেল মোল্লা  পেশায় গাড়িচালক। সে তার এই পেশার আড়ালে ডাকাত দলের গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করতো। সে ডাকাত সরদার সবুজের নির্দেশে বিভিন্ন ব্যাংক ও জনবহুল এলাকায় অবস্থান করে ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তিদের টার্গেট করে। এরপর তাকে অনুসরণ করতে থাকে এবং তার বর্ণনা ও অবস্থান সম্পর্কে দলের সমন্বয়ক মিন্টুকে জানায়। মিন্টু রাসেলের দেওয়া তথ্যমতে ভিকটিমের কাছে উপস্থিত হয়ে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাকে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। এরপর সর্বস্ব লুট করে। আসামি রাসেলের বিরুদ্ধে ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানায় র‌্যাব।

গ্রেফতারকৃত  ইকবাল মিয়া মূলহোতা সবুজের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করতো। সে প্রায় ৩ বছর গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলার শিবচর থেকে ঢাকায় এসে এই দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ডাকাতি করে আসছে। ডাকাতির পর আবার শিবচরে চলে যেতো সে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বগুড়ার শেরপুর থানায় ১টি ছিনতাইয়ের মামলা রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত মনিরুল ইসলাম পেশায় একজন দর্জি। ১ বছর ধরে সে দর্জি পেশা ছেড়ে ডাকাত দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মিন্টুর সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছিল। তার বিরুদ্ধে বগুড়ার শেরপুর থানা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

/এআরআর/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বন ডাকাতদের জন্যই পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয়: জিএম কাদের
র‌্যাবের নতুন মুখপাত্র কমান্ডার আরাফাত
উপবৃত্তির নামে প্রতারণা, ক্রেডিট-ডেবিট কার্ডে অর্থ লুট
সর্বশেষ খবর
ব্রাজিলিয়ানের গোলে আবাহনীতে স্বস্তি
ব্রাজিলিয়ানের গোলে আবাহনীতে স্বস্তি
স্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করল ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভস্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করল ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
বৈশাখী মেলায় গানের আয়োজন, কমিটির সঙ্গে দর্শকদের সংঘর্ষে নিহত ১
বৈশাখী মেলায় গানের আয়োজন, কমিটির সঙ্গে দর্শকদের সংঘর্ষে নিহত ১
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
সর্বাধিক পঠিত
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!