তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১ জেলায় অর্পিত, খাস খতিয়ান ও বিভিন্ন শ্রেণিভুক্ত জমি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে লক্ষাধিক মামলা চলছে দেশের বিভিন্ন আদালতে। বছরের পর বছর চলা এসব মামলার নিষ্পত্তি কবে নাগাদ হবে, সংশ্লিষ্ট কেউই জানাতে পারেননি। তারা বলছেন, জায়গা-জমি সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে এমনিতেই দীর্ঘদিন লেগে যায়। আর এসব মামলা হচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে। নানা কারণেই দ্রুত মামলার জট খোলে না। তবে বর্তমান সময়ে মামলা তদারকির জন্য ঢাকাসহ সারাদেশেই ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে মামলার ডাটাবেজ। গত নভেম্বরে এই ডাটাবেজের কাজ শুরু হয়। মন্ত্রণালয়ের আইন বিভাগ থেকে বিভিন্ন আদালতে নিয়োজিত আইনজীবীদের মাধ্যমে তদারকিও করা হচ্ছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৬১ জেলায় ১ লাখ ২৭ হাজার ১৫৪ একর জমির বিপরীতে মামলা চলমান রয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৩১০টি। এ বছরের সেপ্টেম্বর (২০২২) পর্যন্ত সরকারের পক্ষে মামলার রায় হয়েছে ৭৬০টির, সরকারের বিপক্ষে রায় হয়েছে ৪০১টি। তবে কোন আদালতে কতো মামলা বিচারাধীন সেটা আলাদা করে তথ্য পাওয়া যায়নি।
মন্ত্রণালয়ের অপর একটি তথ্য অনুযায়ী, পুঞ্জিভূত মামলা অনিষ্পন্ন রয়েছে ৮০ হাজার ৪২২টি। সবচেয়ে বেশি মামলা চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিরাজগঞ্জ, গাজীপুর, পাবনা ও সাতক্ষীরায়। তবে কয়েকটি বাদে বেশিরভাগ জেলাতেই মামলা রয়েছে হাজারের ওপরে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এই পর্যন্ত ভূমি মন্ত্রণালয়কে বিবাদী করে দায়ের করা রাষ্ট্রীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলো চিহ্নিত করার কাজ চলছে। প্রথমে গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলো ও পরে সব মামলা ডাটাবেজের আওতায় নিয়ে এসে মনিটরিং করা হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি ও অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনসহ ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত আইনের একটি তালিকাও ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে।
গত নভেম্বরে (২০২২) মর্টগেজ (বন্ধকী) ডাটা ব্যাংক ও মামলা ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের উদ্বোধন করেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। গত ১৫ ডিসেম্বর সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ই-নামজারিসহ অনেকগুলো বিষয় ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। আগামী ১ বৈশাখের মধ্যে ভূমি মালিকদের মালিকানা সংক্রান্ত স্মার্ট কার্ড দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। যেটার নাম হবে ‘সার্টিফিকেট অব ল্যান্ড ওউনারশিপ’ (ভূমি মালিকানার সনদ)। যে কার্ডে ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য থাকবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভূমি সেবাগুলোকে ডিজিটালাইজেশনের অংশ হিসেবে ভূমি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ভূমি সংস্কার বোর্ডের অধীনে ২০১৬ সালের ২ নভেম্বর থেকে ই-মিউটেশন কার্যক্রম শুরু করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এ বছরের ১৭ মার্চ (২০২০) থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন বিভাগের ৩০০টি উপজেলা ও সার্কেলে শতভাগ ই-নামজারি সেবা চালু করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
পুরোপুরি ই-নামজারির কার্যক্রম চালু হলে উপজেলা ভূমি অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মচারীরা ই-নামজারির সিস্টেমের মাধ্যমে সহজে, দ্রুত নির্ভুলভাবে অনলাইন নামজারির কাজগুলো করতে পারবেন। সেবা-প্রত্যাশী নাগরিকরা ঘরে বসে কিংবা যেকোনও ডিজিটাল সেন্টার থেকে নামজারির আবেদন জমা দেওয়ার পাশাপাশি আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা জানতে পারবেন। এছাড়া, এই পদ্ধতির মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয়, ভূমি সংস্কার বোর্ড, ভূমি আপিল বোর্ড ও বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনাররা (ভূমি) নামজারি কার্যক্রম মনিটরিং করার পাশাপাশি বহুমাত্রিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে পারবেন। মামলা তদারকিতেও গতি আসবে। ইতোমধ্যে মামলা ব্যবস্থাপনা সিস্টেমে ২১ হাজারের বেশি মামলা এন্ট্রি করা হয়েছে। মর্টগেজ (বন্ধকী) ডাটা ব্যাংক ও মামলা ব্যবস্থাপনা সিস্টেমে সব উপাত্ত এন্ট্রি করার প্রক্রিয়াটি চলমান রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব মামলাই এন্ট্রি করা হবে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের ঝুলে থাকা লক্ষাধিক মামলা তদারকির বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার যুগ্ম সচিব মো. খলিলুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জমি সংক্রান্তে সরকারকে বিবাদী করে দায়ের করা মামলাগুলো জেলা পর্যায়ে মনিটরিং করেন জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা। সেখানেও আইনজীবী রয়েছে সরকারের পক্ষে লড়ার জন্য। এছাড়া উচ্চ আদালতে যেসব মামলা বিচারাধীন সেগুলো তদারকি করতেও আইনজীবী রয়েছে। কোন মামলা কোন পর্যায়ে রয়েছে, মন্ত্রণালয় থেকেও সেগুলো মনিটরিং করা হয়।
একই মন্ত্রণালয়ের আইন-১ শাখার উপ-সচিব মো. আবুল কালাম তালুকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জমি সংক্রান্ত মামলা নানা কারণে এমনিতেই দীর্ঘায়িত হয়। তারপরও মন্ত্রণালয় থেকে তারা নিয়মিত খোঁজখবর নেন এসব বিষয়ে। এজন্য মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি উইং কাজ করছে।
