ঈদের আগে গতকাল ছিল বেশির ভাগ চাকরিজীবীর শেষ কার্যদিবস। আজ বুধবার (১৯ এপ্রিল) থেকে শুরু ঈদের ছুটি। তাই নাড়ির টানে বাড়ি যাচ্ছে বহু নগরবাসী। সড়ক, নৌ, বিমান কিংবা রেল—এই পথগুলোতেই যাত্রা শুরু করে মানুষ। তবে ঈদের ছুটির আগে থেকেই ট্রেনে করে যাত্রীদের বাড়ি ফেরার ব্যস্ততা বেশি দেখা গিয়েছে। এবার অনলাইনে শতভাগ টিকিট বিক্রির ফলে রেলস্টেশনে ছিল না কোনও অব্যবস্থাপনা।
বুধবার (১৯ এপ্রিল) কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা যায়। অনলাইনে শতভাগ টিকিট বিক্রিতে বদলে গিয়েছে স্টেশনের চিত্র, ভোগান্তি কমেছে যাত্রীদের। স্টেশনে নেই আগের মতো যাত্রীদের সেই চিরচেনা ভিড়। তাই ছুটির প্রথম দিনে আজ যাত্রীর সংখ্যাও বেড়েছে।
স্টেশনে টিকিটবিহীন যাত্রীর প্রবেশ ঠেকাতে তিন স্তরের চেকিংয়ের ব্যবস্থা রেখেছে রেল কর্তৃপক্ষ। ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ের নেওয়া এসব সিদ্ধান্তের সুফল পেতে শুরু করেছে যাত্রীরা। এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা।
সিলেটের যাত্রী আব্দুস সামাদ মাকে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। তিনি বলেন, কোনও রকম ঝামেলা ছাড়াই আমরা এবার যাত্রা করতে পারছি। ১০ দিন আগে টিকিট কেটে রেখেছিলাম অনলাইনে। কোনও সমস্যা হয়নি। স্টেশনে ঢুকতেও কোনও সমস্যা হয়নি। ঢোকার সময় টিকিট আছে কি না সেটা দেখেছে, আইডি কার্ড দেখতে চায়নি।
অনলাইন টিকিটিং সিস্টেমের প্রশংসা পাওয়া যাচ্ছে সব যাত্রীর কাছ থেকেই। তবে প্রসংশার পাশাপাশি তাদের অভিযোগ ও দাবিও রয়েছে। তারা জানান, সার্ভার ব্যবস্থা যেনও আরও উন্নত করা হয়।
তারেক হাসান যাবেন শান্তাহার। তিনি বলেন, আমি গতকালই টিকিট কিনেছি অনলাইনে। আজ বাড়ি যাবো ঈদ করতে। তবে টিকিট কাটতে গিয়ে সার্ভার ডাউন হওয়াতে তার কিছুটা সময় লেগেছে টিকিট কাটতে।
স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তপন মন্ডল ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছেন। তিনি জানান, অনলাইন টিকিট হওয়ায় খুবই ভালো হয়েছে। এখন আর ভোর বেলা এসে লাইনে দাঁড়াতে হয় না। আবার এবারের চেকিং সিস্টেমও করেছে তিন স্তরের, এটাও ভালো সিদ্ধান্ত। ঢুকতে কোনও ঝামেলা হয়নি। তবে তিনি জানান, অনলাইনে টিকিট সার্ভারের সমস্যার কারণে তার টিকিট কাটতে কিছুটা সমস্যা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যাত্রী মোস্তফা আহমেদ। স্ত্রী আর ছোট বোনকে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। বাড়িতে রয়েছে বাবা, মা আর ছোট ভাই। তিনি বলেন, অনলাইনে টিকিট হওয়ায় ভালো হয়েছে। কিন্তু সার্ভারের সমস্যাটা ঠিক করা উচিত বলে আমার মনে হয়। কারণ আমি গত ৮ তারিখে সকাল ৮টা থেকে ননস্টপ চেষ্টা করে সাড়ে ৯টায় টিকিট কাটতে পেরেছি। তবে স্টেশনে ঢোকার সিস্টেমটা ভালো করেছে। সব আলাদা আলাদা রো করে দিয়েছে। আগে তো প্ল্যাটফর্মে ঢুকলেই ভিড় দেখতাম, এবার সেটা নাই। সবকিছু সুশৃঙ্খলভাবেই হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মাসুদ সারওয়ার বলেন, ঘরমুখী মানুষের ট্রেনে ভ্রমণ নিরাপদ করতে আমরা এবার বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তার মধ্যে তিন স্তরের চেকিং অন্যতম। এর ফলে বিনা টিকিটের কোনও যাত্রী প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে পারছে না। ফলে টিকিটধারী যাত্রীরা স্বচ্ছন্দে ট্রেনে চড়তে পারছে।
তিনি আরও বলেন, জনসাধারণের সুবিধার্থে আমরা একটি ট্রেনের ২৫ শতাংশ টিকিট দিতে পারি। ধরেন একটি ট্রেনে ৬০০ আসন আছে। তার বিপরীতে আমরা ১৫০টি টিকিট দিতে পারবো। আমি দেখলাম কাউন্টারের সামনে দুই হাজার মানুষের ভিড় আছে। আমরা তো সবাইকে টিকিট দিতে পারবো না।