X
শনিবার, ০৩ মে ২০২৫
১৯ বৈশাখ ১৪৩২

তালপাতার পুঁথিতে তৈরি হলো নতুন ইতিহাস

উদিসা ইসলাম
২৩ এপ্রিল ২০২৩, ১০:০০আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৫০

ফিরে এলো তালপাতার পুঁথি। হাজার বছর আগে যে ঐতিহ্য ছিল—এবার বাংলাদেশের লেখক চয়ন খায়রুল হাবিব ও শিল্পী আফরোজা জামিল কংকার প্রচেষ্টায় রচিত হলো তালপাতায় ‘বাঙালির পরিচয় কাব্য’। এতে বঙ্গবন্ধুর জীবন কাব্য রচিত হয়েছে। দুষ্প্রাপ্য এই ঐতিহ্য ফিরিয়ে এনে ইতিহাসের বয়ান তুলে ধরা চয়ন খায়রুল হাবিব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘আশা করবো সরকার এবং বিভিন্ন ফাউন্ডেশন এগিয়ে আসবে। ‘বাঙালির পরিচয় কাব্য’ নামে যে তালপাতার পুঁথিটি, তার প্রথম কপিটি আমরা বঙ্গবন্ধু জাদুঘরকে উপহার দেবো। এই তালপাতার পুঁথিটিতে সব বাঙালির ভাগ আছে।’’

চয়ন খায়রুল হাবিব বলেন, ‘আমাদের দেশে বহু পুরনো, হাজার বছরের তালপাতার পুঁথি সংরক্ষিত আছে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে অতি অনুসরণীয় ও সম্মানিত এ গ্রন্থ একাদশ ও দ্বাদশ শতকে লেখা অষ্টসাহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতা নামের দুটি পুঁথি রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। ইতিহাসবিদ গৌতম ভদ্র রাজশাহী সফরে এসে এই পুঁথি দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। এর পাঠোদ্ধার করা হয়নি।’ দুর্বোধ্য এ পুঁথি পাঠোদ্ধার জরুরি উল্লেখ করে তিনি সে সময় বলেন, ‘এ ইতিহাস আমাদের সম্পদ।’

লেখক চয়ন খায়রুল হাবিব ও শিল্পী আফরোজা জামিল কংকার  উদ্যোগে তালপাতায় রচিত হলো ‘বাঙালির পরিচয় কাব্য’ আর এবার পুরোপুরি আমাদের নিজেদের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় তৈরি হলো এ সময়ের পুঁথি—বাঙালির পরিচয় কাব্য। হঠাৎ তালপাতার পুঁথি করার ইচ্ছে কেন হলো প্রশ্নে এই পুঁথির টেক্সট রচয়িতা চয়ন খায়রুল হাবিব বলেন, ‘বাঙালির পরিচয় কাব্য' নামে আখ্যানধর্মী দীর্ঘ কবিতাটি আমি লিখে শেষ করি ২০২০ সালে ফ্রান্সের ব্রিটানি উপকূলে। এর প্রতি পরতে বাংলাদেশের ইতিহাস, বাঙালি জনগোষ্ঠীর বিবর্তন এবং বঙ্গবন্ধুর জীবনের প্রতীকী আখ্যান তুলে ধরেছি। বাংলা পুঁথিসাহিত্য নিয়ে আমার আগ্রহ অনেক দিনের। ২০১০ থেকে ২০১৯ অবধি, ৯ বছর ধরে যখন অপেরাধর্মী 'জুলেখা ট্রিলজি' লিখি, প্রচুর পুঁথি পাঠ করি। 'বাঙালির পরিচয় কাব্য' লিখবার শুরু থেকে কাজটিকে তালপাতায় অলংকরণসহ সংরক্ষণের প্রণোদনা কাজ করছিল। কিন্তু বাংলাদেশে তালপাতার পাখা থাকলেও, তালপাতার পুঁথি লিখবার দক্ষতাসম্পন্ন আলংকারিক আর নেই। এটা নিয়ে বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলা শুরু করি, যাতে এখান থেকে একটা লুপ্ত শিল্প পুনরুদ্ধার-প্রকল্পের সূত্রপাত ঘটানো যায়।’

তালপাতায় লেখা হচ্ছে পুঁথিকাব্য তারপর কাজটা কীভাবে শুরু করলেন জানতে চাইলে শিল্পী আফরোজা জামিল কংকা বলেন, ‘চয়ন খায়রুল হাবিব আমাকে ওর কাব্যটি নিয়ে পরিকল্পনার কথা বললো। কাব্যটার ওপর ভিত্তি করে চিত্রাংকনের প্রস্তাব দিলো এবং সেটা তালপাতার পুঁথি আকারে করতে হবে। আমি প্রথমে সাহস করতে পারিনি। কিন্তু পরে রাজি হই। কিন্তু কীভাবে করবো? কাব্যটি বেশ কঠিন আকারে লেখা। চয়ন ফ্রান্স থেকে ফোনে ব্যাখ্যা করছিল, আর আমি স্কেচ করে যাচ্ছিলাম। এর পর মাথা খুলে গেলো। আবেগে আপ্লুত হয়ে গেলাম। বঙ্গবন্ধুর পুরো সংগ্রামী জীবনটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো।’

লেখার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে তালপাতা পদ্ধতিটি মোটেই সহজ নয়। তালপাতার ওপর ছবি এঁকে এবং লিখে সেটাকে খোদাই বা এচিং করতে হয়, তারপর বিশেষ কালি দিয়ে সেগুলোকে মুছে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হয়। আমার এর ওপর কোনও দক্ষতাই ছিল না। প্রথমে ওড়িশাতে শিল্পী প্রশান্ত মহারানার কাছে গিয়ে কাজটি শিখবো ভাবলেও পরে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে তাকেই ঢাকাতে নিয়ে আসতে হয়। এই কাজটির খোদাইকর প্রশান্তই। প্রশান্তর সাত প্রজন্ম তালপাতা চিত্রশিল্পী। আমি লেখা এবং চিত্রকর্ম তালপাতার ওপর করলাম, আর সেগুলো খোদাই করলো প্রশান্ত। তৈরি হলো এক নতুন ইতিহাস। কাজটি করতে গিয়ে আমি খুব আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ, আমি তার দ্বিতীয় কন্যা, যিনি জাতির পিতাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।’

 তালপাতার ওপরে লেখার পর চলছে প্রক্রিয়াজাতকরণ উল্লেখ্য, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট শিল্পী আফরোজা জামিল কংকার বাবা শহীদ কর্নেল জামিল আহমেদ বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হন।

পুঁথি তো হলো, এখন এই পুঁথি নিয়ে কী করবেন জানতে চাইলে চয়ন বলেন, ‘তালপাতার পুঁথি বাংলাদেশে এখন লুপ্ত শিল্প। 'বাঙালির পরিচয় কাব্য'কে তালপাতার পুঁথিতে রূপান্তরের সুবাদে কংকা এখন এ শিল্পে একজন পারঙ্গম শিল্পী। পরের প্রজন্মের কাছে আমরা এটাকে ছড়িয়ে দিতে চাই। মে মাসের ১৩ তারিখ থেকে জাতীয় জাদুঘরে পুঁথিটি নিয়ে একটি প্রদর্শনী হবে। তালপাতার পুঁথি একটা শ্রমসাধ্য, সময়সাপেক্ষ কারুকলা। এটাকে লোকজ শিল্পের অন্যান্য বিপণনের মধ্যে আনা যায় কিনা, তা নিয়ে কংকা এবং আমার পরিকল্পনা আছে।’

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ঈদ নির্বিঘ্ন হওয়ায় কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
ঈদ উপলক্ষে অর্ধেকের বেশি গার্মেন্ট কারখানা এখনও বন্ধ
দীর্ঘ ছুটির পর কর্মব্যস্ত রূপে ফিরেছে ঢাকা
সর্বশেষ খবর
‘কর্মীদের আর্থিক নিরাপত্তা ছাড়া গণমাধ্যম স্বাধীন হবে না’
মুক্ত গণমাধ্যম দিবস‘কর্মীদের আর্থিক নিরাপত্তা ছাড়া গণমাধ্যম স্বাধীন হবে না’
খিলগাঁওয়ে পৃথক ঘটনায় দুই শিশুর মৃত্যু
খিলগাঁওয়ে পৃথক ঘটনায় দুই শিশুর মৃত্যু
রাজধানীতে মোটরসাইকেল ধাক্কায় পথচারী নিহত, আহত স্বামী-স্ত্রী
রাজধানীতে মোটরসাইকেল ধাক্কায় পথচারী নিহত, আহত স্বামী-স্ত্রী
পুকুরে গোসল করাকে কেন্দ্র করে দুই দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত ২০
পুকুরে গোসল করাকে কেন্দ্র করে দুই দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত ২০
সর্বাধিক পঠিত
সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতার ওপর দিনে সশস্ত্র হামলা, রাতে বাড়িতে আগুন
সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতার ওপর দিনে সশস্ত্র হামলা, রাতে বাড়িতে আগুন
আগে রওনা দিয়েও এড়ানো গেলো না ‘নোটাম’, শাহজালালের ফ্লাইট গেলো ওসমানীতে
আগে রওনা দিয়েও এড়ানো গেলো না ‘নোটাম’, শাহজালালের ফ্লাইট গেলো ওসমানীতে
দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয় আটক
দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয় আটক
‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ফার্মাসিস্ট যুক্ত করার কথা ভাবছে সরকার’
‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ফার্মাসিস্ট যুক্ত করার কথা ভাবছে সরকার’
শৃঙ্খলা ফেরাতে রাস্তায় নামলেন ওসি
শৃঙ্খলা ফেরাতে রাস্তায় নামলেন ওসি