X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

রানা প্লাজা ধস: ১০ বছরেও মামলার বিচারে ধীরগতি

মহিউদ্দিন খান রিফাত
২৪ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০১আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০১

২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টায় সাভারের রানা প্লাজা ভবনের তৃতীয় তলায় পিলার ও দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়। খবর পেয়ে বিজিএমইএ কর্মকর্তারা রানা প্লাজায় আসেন। তারা ওই ভবনের গার্মেন্টস মালিকদের পরামর্শ দেন—বুয়েটের ভবন বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করা পর্যন্ত সব কার্যক্রম যেন বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু পাঁচ গার্মেন্টস মালিক এবং তাদের লোকজন ভয়ভীতি দেখিয়ে পরদিন (২৪ এপ্রিল) শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেন। এর সঙ্গে যোগ দেন রানা প্লাজা ভবনের মালিক খালেক ও সোহেল রানা। পরে এদিনই (২৪ এপ্রিল) ধসে পড়ে রানা প্লাজা।

রানা প্লাজা ধসের ১০ বছর পূর্ণ হলো আজ ২৪ এপ্রিল। সবচেয়ে বড় এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ১৩৬ জন পোশাকশ্রমিক। কিন্তু এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার ১০ বছর পার হয়ে গেলেও বিচারকাজ চলছে ধীরগতিতে।

রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়। এরমধ্যে শ্রমিকদের মৃত্যুতে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে মামলা করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে অপর মামলাটি করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। আর ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে আরেকটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দায়ের করা এসব মামলার বিচার চলছে ধীরগতিতে। আর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া সেই ভবন নির্মাণে ত্রুটি থাকার অভিযোগে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা আইনে দায়ের করা মামলাটির জট খোলেনি এখনও। দীর্ঘদিন হাইকোর্টে স্থগিত হয়ে আছে এটি। হাইকোর্টে শুনানির কোনও উদ্যোগ নেই।

শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাটি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। ওই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয় ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই। পরে সাক্ষীর পর্যায়ে এসে থেমে যায় মামলার কার্যক্রম। হাইকোর্টের আদেশে পাঁচ বছর স্থগিত থাকে মামলাটি। পরে গত বছরের জানুয়ারিতে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়। গত বছরের ৩১ জানুয়ারি মামলার বাদীর জবানবন্দি গ্রহণের মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সর্বশেষ গত ১৫ মার্চ আদালতে পাঁচ জন সাক্ষ্য দেন। এ পর্যন্ত ৪৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ১৫ মে পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে। এ মামলায় অভিযোগপত্রে সাক্ষী করা হয়েছে ৫৯৪ জনকে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ভবন ধসে প্রাণহানির ঘটনায় প্রথমে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর’ অভিযোগে একটি মামলা করেন সাভার থানার এসআই  ওয়ালী আশরাফ। তদন্ত শেষে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে ৪১ জনকে আসামি করে তাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত মৃত্যু ঘটানোসহ দণ্ডবিধির বেশ কিছু ধারায় বিভিন্ন অভিযোগ আনেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ২০১৫ সালের ১ জুন অভিযোগপত্র জমা দেন। মামলাটির ৪১ আসামির মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন একজন। তিনি হলেন রানা প্লাজা ভবনের মালিক সোহেল রানা। জামিনে আছেন ৩২ জন আসামি। পলাতক ৬ জন। মারা গেছেন ২ জন আসামি।

ইমারত নির্মাণ বিধিমালার মামলাটির তদন্ত শেষে সিআইডি সোহেল রানা ও তার বাবা-মাসহ ১৮ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। আসামিদের মধ্যে একমাত্র সোহেল রানা কারাগারে রয়েছেন। পাঁচ আসামি পলাতক, অন্যরা জামিনে আছেন। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন।

ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে আরেকটি মামলা করে দুদক। রানা প্লাজা ধসের জন্য ছয় জন সরকারি কর্মকর্তাকে অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি করার অনুমতি না পাওয়ার কারণে তিন বছর ঝুলে ছিল এই মামলা। সে সময় জনপ্রশাসন ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুক্তি ছিল—যারা বড় অপরাধ করেননি, তাদের অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি করার অনুমতি দিতে পারবে না তারা। শেষ পর্যন্ত সরকারের অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি বিমল সমাদ্দার বলেন, ‘এ মামলার সাক্ষীর সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ২০২২ সালের মাঝামাঝি। আর এরমধ্যে ৪৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভব হয়েছে। এই মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন আসামি উচ্চ আদালতে আবেদন করেন। এরমধ্যে ছয় জনের পক্ষে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ আসে। এখনও দুই জনের স্থগিতাদেশ বহাল আছে। এ রকম পরিস্থিতিতে আপনি মামলা শুরু করতে পারবেন না। ফলে বিচারিক আদালতের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও উচ্চ আদালতের এই আদেশের কারণে মামলার কার্যক্রম শুরু করতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে গত বছর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যাদের স্থগিতাদেশ নেই তাদের মামলা চালিয়ে নেওয়ার।’

মামলার দীর্ঘসূত্রতার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমাদের একইসঙ্গে আরও অনেক মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে হয়। প্রতি ১৫ দিন বা এক মাস পর পর আমরা এই মামলার ডেট পাচ্ছি। একেকবার সাক্ষী পাওয়ার ওপর ভিত্তি করে পাঁচ জন পর্যন্ত সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়েছি। সাক্ষী পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে এখন। সাক্ষীদের অনেকেই এখন আর তাদের আগের ঠিকানায় থাকেন না। ফলে তাদের বিভিন্ন জায়গা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিয়ে আদালতে আনা হয়। সব মিলিয়ে চ্যালেঞ্জ অনেক।’

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
তিন মামলায় মিল্টনের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
‘সম্পত্তির লোভে’ মনজিলকে হত্যা: ৭ বছরেও শেষ হয়নি বিচার
আদালতে মিল্টন সমাদ্দার
সর্বশেষ খবর
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা