X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

গাছের বদলে ঝোপ!

জুবায়ের আহমেদ
০১ জুন ২০২৩, ১০:০০আপডেট : ০১ জুন ২০২৩, ১২:৪৩

উন্নয়নের কারণ দেখিয়ে বিভিন্ন সময় সড়ক বিভাজকে বেড়ে ওঠা গাছগুলো কেটে ফেলে নগর কর্তৃপক্ষ। কেটে ফেলা গাছগুলোর বেশিরভাগেরই বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর। ছায়াদানকারী এসব গাছ নগরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রেখে আসছিল। গাছগুলো কেটে ফেলার ফলে নগরে সবুজের উপস্থিতি আরও কমে গেছে। প্রাণ-প্রকৃতিতেও পড়েছে বিরূপ প্রভাব। এই ক্ষতি পূরণে কার্যকর গাছ না লাগিয়ে লাগানো হয়েছে তরুলতা প্রজাতির বিভিন্ন ফুল গাছের চারা। এতে সৌন্দর্য ছড়ালেও নগরের পরিবেশ ও প্রকৃতিতে তেমন পরিবর্তন আসবে না বলে মনে করেন উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞরা। ফলে গাছের বদলে অনেকটা ঝোপে সজ্জিত হচ্ছে নগরী।

সম্প্রতি ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডে সড়ক বিভাজক তৈরি করতে কাটা হয় বিভাজকে থাকা প্রায় সব গাছ। পরে স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশপ্রেমীদের প্রতিবাদে ওই বিভাজকে লাগানো হয় রঙ্গন, কামিনী, বাগান বিলাস, চন্দ্রপ্রভা ও কাঞ্চন ফুলের মতো একটু বড় গাছের চারা। এছাড়া একই চিত্র দেখা যায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে।

এ বিষয়ে সাত মসজিদ সড়ক গাছরক্ষা আন্দোলনের সমম্বয়কারী আমিরুল রাজিব বলেন, আমাদের বড় বৃক্ষ দরকার যেটা ছায়া দেবে, পাখিদের আবাসস্থল হবে, একই সঙ্গে নগরবাসী উপকৃত হবে। সড়ক বিভাজকে দেশি গাছ লাগানোর দাবি জানিয়েছি আমরা। বিদেশি গাছগুলো প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখে না। ঝড় হলে ভেঙে যায়, তাছাড়া পশু-পাখির জন্যও তেমন কাজে আসে না।

শহরের বিভাজকে শোভা পাচ্ছে এসব গাছ

তিনি বলেন, শোভাবর্ধনকারী গাছ যেমন ফুল গাছ বা তরুলতা প্রজাতির গাছ রাস্তাঘাটে লাগানোর উপযোগী না। কেননা এগুলো বেশিদিন থাকেও না, আর এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য যতটুকু গুরুত্ব দেওয়া দরকার সেটা দেওয়াও হয় না। ফলে গাছগুলো মরে যায় আবার নতুন সিজনে নতুন করে লাগানো হয়। এতে হয়তো একটা বাণিজ্যিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কেউ লাভবান হতে পারে, তবে স্থায়ী সমাধান হয় না।

এছাড়া শহরের বায়ুদূষণ রোধে বড় গাছ কার্যকর ভূমিকা রাখে জানিয়ে তিনি বলেন, নগরের বায়ু প্রতিনিয়তই নানানভাবে দূষিত হচ্ছে। একটা ছোট গাছের শিকড়ে ওইটুকু শক্তি নাই যে মাটি ধরে রাখবে, যেটা বড় কাছের শিকড়ে থাকে। ফলে দেখা যায় শুষ্ক সময়ে মাটি সরে যায়।

শহরে গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে গাছের জীবনকাল ও পরিবেশ-প্রকৃতি বিবেচনা করতে হবে জানিয়ে ‘সহনাগরিক ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাইদ সোহাগ বলেন, শহরে বনায়ন অনেক চ্যালেঞ্জিং। নতুনভাবে গাছ রোপণের মতো মাটি খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই যেইটুকু স্থানে গাছ লাগানোর সুযোগ রয়েছে তাকে পরিপূর্ণ ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে বিদেশি গাছ এনে দেশীয় গাছের ডাইভার্সিটি নষ্ট না করে এবং বনের গাছ লোকালয়ে না লাগিয়ে দেশি ফল এবং ফুলের গাছকে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে।

দ্রুত বর্ধনশীল গাছ যেকোনও দুর্যোগে ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা বেশি

তিনি বলেন, আমাদের যেকোনও আয়োজনে গাছ রোপণ করা হলে দ্রুত বর্ধনশীল গাছ বাছাই করা হয়। কিন্তু দ্রুত বর্ধনশীল গাছ যেকোনও দুর্যোগে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে। কারণ এসব গাছ তুলনামূলক কম মজবুত হয়। তাই আমার পরামর্শ যথাসম্ভব ফলের গাছ বেশি লাগানো। এসব গাছ শহরের তাপমাত্রা কমাতে সহায়ক হবে, একই সঙ্গে ফল অর্থ্যাৎ খাদ্যেরও ব্যবস্থা হবে। তাই ফুটপাত বা সড়ক বিভাজকে যেখানে সুযোগ রয়েছে ফলের গাছ লাগাতে হবে। আর এসব গাছের পরিচর্যারও তেমন প্রয়োজন হয় না। কেবল সড়কে চলাচলে অসুবিধা সৃষ্টি করলে ডাল-পালা ছেঁটে দিতে হয়।

তবে সড়কে নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করে এমন গাছ লাগানো হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন পরিবেশ, জলবায়ু, ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) মো. খায়রুল বাকের।

তিনি বলেন, সড়ক বিভাজকে ফুলের গাছ থাকবে, কম উচ্চতার গাছ থাকবে, যে দেখলে দৃষ্টিনন্দন লাগবে। মানুষের মনে দোলা দেবে। যেকোনও ফলের গাছ সড়ক বিভাজকে লাগানোর উপযোগী নয়। এগুলো বড় হয়ে ডালপালা ছড়ায়, এগুলোর শিকড় বড় হলে বিভাজকের ক্ষতি করে। গাছের ডালপালায় ধাক্কা লেগে মানুষ আহত হয়েছে, এরকম অভিযোগও আমার কাছে আসে। আর বড় গাছ হলে ভেঙে পড়ার ঝুঁকি থাকে। ফুলের গাছ ভেঙে পড়ার সুযোগ নাই। তাই এসব ফলের গাছ, বড় গাছ লাগাবো না। কাকরাইল থেকে সচিবালয় পর্যন্ত ফুলের গাছ রোপণ করা আছে। সকালে যখন কেউ আসে, সরকারি অফিসাররা আসে, আমরা দেখি কত সুন্দর লাগে, ফুল ফুটে থাকে, আমরা তো চাই এরকম পরিবেশ।

বিদেশি গাছ নগরে তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখে না

বৃক্ষবিশারদদের পরামর্শে শহরের কোথায় কী গাছ লাগানো হবে তার তালিকা করা হয়েছে জানিয়ে ডিএসসিসির এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা বাগানে, লেকে, জলাশয়ের পাশে কী কী গাছ লাগাবো সেগুলো ঠিক করে নিয়েছি। আর ডিভাইডারে কম উচ্চতার গাছ হবে দৃষ্টিনন্দন। সেগুলো ঠিক করে নিয়েছি বৃক্ষবিশারদ, বৃক্ষ নিয়ে যাদের অভিজ্ঞতা আছে তাদের পরামর্শে।

একই ভাবনা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের। ডিএনসিসি পরিবেশ, জলবায়ু, ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নুরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা সড়কের ডিভাইডারে কম উচ্চতার ও মাঝারি সাইজের গাছ লাগাবো। এর সবগুলো মেয়র (আতিকুল ইসলাম) নিজেই বাছাই করেছেন। আসছে ৬ জুন বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন মেয়র। এই সিজনে প্রায় ৫০ হাজার গাছ লাগাবো। আগামী দুই বছরের মধ্যে দুই বা তারও অধিক গাছ লাগাতে পারবো বলে আশা করি।

তবে এই সিজনের গাছ রোপণের তালিকায় কোনও ফলের বা বৃক্ষজাতীয় গাছ নেই বলে জানান ডিএনসিসির এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, সব ধরনের গাছ লাগানো হবে। তবে ধাপে ধাপে।

/আরআইজে/
সম্পর্কিত
বাড্ডায় নারীর মরদেহ উদ্ধার
জমি নিয়ে বিরোধ, বৈদ্যুতিক শকে চাচাতো ভাইকে ‘হত্যা’
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
সর্বশেষ খবর
কৃষকের মুখে হাসি কপালে চিন্তার ভাঁজ
কৃষকের মুখে হাসি কপালে চিন্তার ভাঁজ
টিভিতে আজকের খেলা (৫ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৫ মে, ২০২৪)
দুবাইতে বিশ্বের ২৩ নম্বর চীনের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
দুবাইতে বিশ্বের ২৩ নম্বর চীনের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
বরিশালে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক থ্রি-হুইলার ভাংচুর
বরিশালে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক থ্রি-হুইলার ভাংচুর
সর্বাধিক পঠিত
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ