উচ্চ আদালত থেকে জামিনপ্রাপ্তির পরও দুই জনকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে টাকা আদায়ের ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনের মাধ্যমে হাইকোর্টকে জানিয়েছেন পুলিশের আইজি। জবাবে হাইকোর্ট বলেছেন, শুধুমাত্র সাসপেন্ডই (বরখাস্ত) শেষ কথা নয়। হাইকোর্ট থেকে জামিন নেওয়ার পরও কিভাবে রিমান্ড চাইতে পারে? তাদের তো চাকরি থাকার কথা না।
পরে শরীয়তপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে আগামী ৬ আগস্ট পরবর্তী শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করেন আদালত।
সোমবার (২৪ জুলাই) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এদিন হাইকোর্টের পূর্ব নির্দেশনা অনুসারে আদালতে হাজির হন পদ্মা সেতু দক্ষিণ থাকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুস্তাফিজুর রহমান, শরীয়তপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির এবং শরীয়তপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে লিখিত ব্যাখ্যা আদালতে দাখিল করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। আদালতে পুলিশের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। আবেদনের পক্ষে ছিলেন মজিবুর রহমান।
পরে আইনজীবী মজিবুর রহমান বলেন, ‘আজকে আদালতে পুলিশপ্রধানের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় জড়িত পুলিশের তিন জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তখন আদালত বলেছেন, সাসপেন্ডই শেষ কথা নয়। পরে আদালত বিচারকের বিষয়ে নথি তলব করে আগামী ৬ আগস্ট পরবর্তী দিন নির্ধারণ করে দেন।
এই আইনজীবী বলেন, জামিনে থাকার পরও তাদেরকে ধরে নিয়ে শুধুমাত্র নির্যাতনই করেনি। তাদের রিমান্ডও চাওয়া হয়েছে। আদালত বলেছেন, তাদের জামিন হয়েছে কী হয়নি এটাতো অনলাইনেই দেখা যায়। এরপরও কেন আসামিদের পুলিশের কাস্টডিতে দেওয়া হলো? কেন তাদের রিমান্ডে নেওয়া হলো, এ প্রশ্ন করেছেন আদালত।
মজিবুর রহমান আরও বলেন, ছিনতাই মামলায় ৭ জন আসামিকে হাইকোর্ট থেকে জামিন করিয়েছিলাম। এই জামিনপ্রাপ্তির পরও ৭ জনের মধ্যে ২ জনকে পুলিশ আটকের পরও নির্যাতন চালিয়ে টাকা আদায় করে তাদেরকে আদালতে সোপার্দ করা হয়। আদালত জামিনের তথ্য যাচাই-বাছাই না করে আসামিদের কারাগারে পাঠিয়ে দেন। এ ঘটনা নিয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এরপর বিষয়টি আমি আদালতে উপস্থাপন করি। আদালত শুনানি নিয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তা এবং এক বিচারককে তলব করেছেন। পাশাপাশি পুলিশপ্রধান এবং শরীয়তপুরের পুলিশ সুপারকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়া কয়েকজন আসামি ও তাদের স্বজনদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে ৭২ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করা হয়।
ভুক্তভোগীর বড় ভাই আবু জাফর ঠান্ডু জেলা পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। এ ঘটনায় শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মোহাম্মদ বদিউজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়। ঘটনায় অভিযুক্তদের সম্পৃক্ততা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার।
এ ঘটনায় নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করেন আসামিদের আইনজীবী মজিবুর রহমান।
পরে গত ১৩ জুন উচ্চ আদালত থেকে জামিনপ্রাপ্তির পরও দুই জনকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে টাকা আদায়ের ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের তলব করেন হাইকোর্ট। পদ্মা সেতু দক্ষিণ থাকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মুস্তাফিজুর রহমান, শরীয়তপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির এবং শরীয়তপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলেন আদালত। একইসঙ্গে পুলিশের আইজি ও শরীয়তপুরের পুলিশ সুপারকে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলেন আদালত।