প্রতিবেশীর সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ। সেই বিরোধ গিয়ে ঠেকেছে আদালতে। অধস্তন আদালত থেকে সেই বিরোধ এখন উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। এর মধ্যেই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা ভুক্তভোগীকে ফোন করে অকথ্য ভাষায় করেছেন গালাগালি। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী লিটন কর্মকার ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনারের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। ভুক্তভোগী লিটন কর্মকার জানান, তিনি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তা যেকোনও সময় তার ক্ষতি করতে পারে। বিষয়টি জানিয়ে তিনি স্থানীয় থানায় একটি জিডি করতেও গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ জিডি নেয়নি।
লিটন কর্মকার জানান, তিনি আশুলিয়া এলাকায় একটি স্বর্ণের দোকানে কাজ করেন। পরিবার নিয়ে মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার নালী এলাকায় থাকেন। সেটিই তার পৈত্রিক বাড়ি। প্রতিবেশী রবীন্দ্রনাথ সাহার সঙ্গে ২০ শতাংশ জমি নিয়ে বিরোধ চলছে তার। বিষয়টি নিয়ে দেওয়ানি মামলা চলমান। উচ্চ আদালত থেকে স্টে অর্ডার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুই দিন আগে ঢাকার ডিবি অফিস থেকে এসআই মানিক নামে একজন পুলিশ কর্মকর্তা তাকে ফোন করে অশ্লীল ও অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। প্রতিবেশী রবীন্দ্রনাথ সাহাদের সঙ্গে দ্রুত বিষয়টি ফয়সালা করার জন্য বলেন। তা না হলে তার ক্ষতি করা হবে বলে হুমকি দেন।
জানা গেছে, রবীন্দ্রনাথ সাহার ছেলে সুমনের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়েছে ডিবির কর্মকর্তা এস আই মানিকের। সেই সূত্র ধরে এস আই মানিক তাদের পক্ষ নিয়ে লিটন কর্মকারকে হুমকি ও ভয়-ভীতি দেখান। এস আই মানিকের অশ্লীল ও অকথ্য ভাষায় গালাগালির একটি অডিও রেকর্ড এই প্রতিবেদক সংগ্রহে রয়েছে। সেখানে এস আই মানিককে বলতে শোনা গেছে- ‘কে লিটন নাকি? আমি ঢাকা ডিবি অফিস থেকে বলছি, মানিক। শরীরে কি চর্বি বেশি হয়ে গেছে নাকি। এই শু... বাচ্চা। এই শু... বাচ্চা, মা..উনের বাচ্চা, শরীরে কি চর্বি বেশি হয়ে গেছে? একেবারে শেষ করে ফেলবো। আমি যদি আসি তোর কয়েক ভাইবোনকে সাফ মেরে ফেলবো শু... বাচ্চা। তুই চিনোস? তোরে কিন্তু পাড়াবো শু... বাচ্চা। মাস্তানি করো? তোর কত বড় সাহস, তোর কলিজা টাইনা ছিঁড়ে ফেলবো।’
একটানা এভাবে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের পর লিটন কর্মকার ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলেন, ‘আমারে কী ব্যাপারে গালিগালাজ করতেছেন বলবেন তো, কী দোষ’? এস আই মানিক বলেন, ‘টিটকারি করোস। তোরা সুমনদের সাথে ঝামেলা করোস কেন। কালকে অটলরে আমি ফোন দিয়ে সুন্দরমতো কথা বলছি। যে দাদা ঝামেলা কইরেন না, আমি এসে বুঝিয়ে দেবো। খুব সাহস হয়ে গেছে, চর্বি হয়ে গেছে। এই শু... বাচ্চা, তোর কোন বাপ আছে। তোর কোন বাপ তোরে নাড়ায়। এখন তুই আমারে চিনবি, তোর বাপ চিনবে। তোর এত বড় সাহস কে দিছে।’
এ সময় লিটন কর্মকারকে বলতে শোনা যায়, ঘটনা না জেনেই আমাকে গালিগালাজ করতেছেন। পাল্টা উত্তরে এসআই মানিক বলেন, ‘ঘটনা জানা, না জানার কিছুই নাই। আমি ফোন দিয়েছি। তোরা টিটকারি করোস কেন। তোদের বলছিলাম চুপচাপ থাকার জন্য। তোরা টিটকারি করোস কেন? তোদের এতবড় সাহস দেয় কারা? আমি কিন্তু তোদের পাড়াবো শালা।’
লিটন কর্মকারকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি না শুনে, এক মুখে না শুনে গালাগালি করতেছেন কেন? এ সময় এসআই মানিক বলেন, আমি আসবো। আমি এমন কোনও ... ও ডরাই না। তোর কোন লোক আছে নিয়ে আসিস।’
জানা গেছে, এস আই মানিক ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান জোনাল টিমে কর্মরত রয়েছেন। অশ্লীল ও অকথ্য ভাষায় গালাগালি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি গালাগালির কথা স্বীকার করেন। এসআই মানিকের ভাষ্য, ‘আমার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল। আমার চাকরি জীবনে মানুষের সঙ্গে কখনও খারাপ ব্যবহার করি নাই। আমার শাশুড়ি ক্যানসার পেশেন্ট ছিল। তার মৃত্যু হয়েছে। মাথা কাজ করছিল না। সুমন আমার বন্ধু। ওদের নাকি গালাগালি করছে। এটা শুনে আমি ফোন করেছিলাম।’
এসআই মানিক বলেন, ঘটনাটা স্থানীয় ওসি স্যারের মাধ্যমে মীমাংসা হয়ে গেছে। আমি মাফ চেয়ে নিয়েছি। তারপরও অভিযোগ দিয়েছে। অনেক সাংবাদিকের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক। আপনিও বিষয়টা দেইখেন।
ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা জানান, একজন পুলিশ কর্মকর্তা হয়ে কারও পক্ষ নিয়ে এভাবে অশ্লীল ও অকথ্য ভাষায় গালাগালি করাটা কোনোভাবেই শোভনীয় নয়। এছাড়া জমি, অর্থ, ফ্ল্যাট বা দেওয়ানি মামলা চলমান রয়েছে এমন কোনও বিষয় নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা যেন হস্তক্ষেপ না করে, সে জন্য ডিএমপি সদর দফতর ও পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে একাধিক সার্কুলার দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ৫ জুলাইও ডিএমপি কমিশনার খন্দকাল গোলাম ফারুকের সই করা এক অফিস আদেশে অর্থ আদায়, জমিজমা, প্লট, ফ্ল্যাট, সম্পত্তি দখল বা বেদখলের ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের জড়িত না হওয়ার জন্য একটি নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
ডিএমপির একজন কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি এক ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে কয়েক কোটি টাকা আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়। বিষয়টি ডিএমপি কমিশনারের কানে যাওয়ার পর অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার দুই কর্মকর্তাকে ডিবি থেকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।