তামাকজাত পণ্য ব্যবহারের কারণে প্রতিদিন বাংলাদেশে ৪৪২ জন মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। তাই চলতি সংসদেই সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাসের দাবি জানিয়েছে বেসরকারি সংগঠন নারী মৈত্রী।
এ সময় এই মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে এবং জনসাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সংশোধিত ধূমপান এবং তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইনটি দ্রুত সংসদে উত্থাপন এবং চলতি সংসদ অধিবেশনেই পাসের দাবি জানান বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি।
সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে নারী মৈত্রী আয়োজিত ‘২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের গুরুত্ব’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
সভায় মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ‘প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ বাংলাদেশে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে, বিশেষ করে শিশু ও নারীরা সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার লক্ষ্যে আইনটির খসড়া তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি পাসের জোরালো দাবি জানাচ্ছি। আইনটি দ্রুত পাস করা গেলে, প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করি।’ আইনটি যাতে সংসদে অবিলম্বে পাস হয়, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন তিনি।
নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলি বলেন, ‘তামাক নারীস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তামাক ব্যবহারের কারণে প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। তামাকের কারণে যেসব রোগ হচ্ছে— সেই রোগের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে অনেক পরিবার দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, তামাকের কারণে সরকার বছরে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। তাই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন যত দ্রুত পাস হবে, তত বেশি প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে এবং সরকারের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কমবে।’
সভায় তামাক বিষয়ক প্রবন্ধে নারী মৈত্রীর তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সমন্বয়কারী নাসরিন আক্তার জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধিত খসড়াতে ধূমপানের নির্ধারিত এলাকা বিলুপ্ত, বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ, খুচরা বিড়ি-সিগারেট বিক্রি বন্ধ, ই-সিগারেট নিষিদ্ধ, তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম বন্ধ ও সিগারেটের প্যাকেটে সতর্কবার্তার পরিসর ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আইনটিকে আরও শক্তিশালী করবে। ফলে তামাকের কারণে একদিকে যেমন মৃত্যুহার কমবে অপরদিকে জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটবে।
তামাকবিরোধী সংসদীয় নারী ফোরামের আহ্বায়ক ও সংসদ সদস্য শবনম জাহান শিলা বলেন, ‘‘বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত মানুষ কর্মক্ষেত্র, রেস্তোরাঁয় এবং গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। এমন পরিস্থিতিতে পাবলিক প্লেসে 'ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান' বা 'ডেজিগনেটেড স্মোকিং জোন' বাতিলের দাবি জানাই।’’
তামাকবিরোধী সংসদীয় নারী ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম বলেন, ‘বাংলাদেশে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। নারীরা মুখের ক্যানসার, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকসহ অনেক জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এছাড়া তামাকের কারণে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের গর্ভপাত হচ্ছে, সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মায়ের মৃত্যুও হচ্ছে। এজন্য নারীর সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাস করার দাবি জানাই।’
জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী ও অতিরিক্ত সচিব হোসেন আলী খোন্দকার বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ বিদ্যমান ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫, (সংশোধিত ২০১৩) এর অধিকতর সংশোধনী আনায়নের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত যে খসড়াটি প্রণয়ন করেছে, সেটি পাস হলে দেশে তামাক সেবনকারীদের সংখ্যা কমবে এবং এসজিডির লক্ষমাত্রা ৩ লক্ষ্য পূরণ হবে।’
নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলির সভাপতিত্বে এসময় তামাকবিরোধী সংগঠনের অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।