X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

জন্মের ৩৫ বছর পর বাবার স্পর্শ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২২ অক্টোবর ২০২৩, ০২:৫৯আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৩, ০২:৫৯

ভাগ্যের সন্ধানে চেয়েছিলেন ইরানে পাড়ি জমাতে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ইরান পাঠানোর মতো মানুষও পেয়েছেন খুঁজে। কিন্তু তখনও তিনি বুঝতে পারেননি পড়েছেন দালালের খপ্পরে। ইরানের নাম করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় পাকিস্তানে। এরপর কেটে গেলো তিন যুগ। দীর্ঘ এই সময়ে পরিবারের সাথে যোগাযোগ হয়েছে একবার। অনেক চেষ্টা করেছেন নিজের জন্মভূমিতে ফেরার। কিন্তু বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ফেরা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে পরিবারও ছেড়ে দিয়েছিল তার আশা। অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় তিনি ফিরেছেন জন্মভূমিতে। তবে জীবন থেকে হারিয়ে ফেলেছেন ৩৫টি বছর। তিনি বরিশালের আবদুল জব্বার। তিন যুগ পর পরিবারকে কাছে পেয়েছেন তিনি। পরিবারও পেয়েছে তাকে।

শুক্রবার (২০ অক্টোবর) রাতে একটি ফ্লাইটে দেশে ফিরিয়ে আনা হয় জব্বারকে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ৩৫ বছর আগে ভাগ্য বদলের আশায় ইরান যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন আবদুল জব্বার। সে অনুযায়ী দালালরা তাকে নেয় ভারতে। এরপর পাকিস্তান হয়ে ইরান। কিন্তু পাকিস্তান থেকে বের করা হয়নি তাকে। ছয় মাস পর আবদুল জব্বার পরিবারের কাছে একটা চিঠি পাঠান। জানান ভয়াবহ বিপদে আছেন তিনি। এরপর আর কোনও খোঁজ নেই। পরিবার জানে না বেঁচে আছেন নাকি মরে গেছেন। মাঝখানে কেটে যায় ৩৫ বছর। এরপর পাকিস্তান থেকে তাদের এক আত্মীয়ের ঠিকানায় হঠাৎ এক চিঠি।

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান জানান, ৩৫ বছর পর হঠাৎ আসা ওই চিঠির সূত্র ধরে পাকিস্তানের বিভিন্ন কমিউনিটি গ্রুপে পোস্ট দেন। চিঠির ঠিকানায় গিয়ে তার বাবার খোঁজ করতে বলেন। একজন ডাক্তার তাতে সাড়া দেন। তিনি ঠিকানা অনুযায়ী গিয়ে জানান, কামালের বাবা সেখানে বেঁচে আছেন। ঠিক ওই সময়ে গণমাধ্যমে একটা নিউজ দেখেন কামাল যে ব্র্যাকের সহায়তায় ২৫ বছর পর সৌদি আরব প্রবাসী আবুল কাশেমের সন্ধান পেয়েছে তার সন্তানেরা। নতুন আশায় কামাল যোগাযোগ করেন ব্র্যাকে। জানান তার বাবা পাকিস্তানে আটকে আছেন ৩৫ বছর ধরে।

তিনি বলেন, আসলে কাশেম চাচার ঘটনার পর সারাদেশ থেকে এমন একাধিক ঘটনার খোঁজ পাই আমরা। প্রত্যেকটা নিয়েই কাজ করছিলাম। এর মধ্যে আমাদের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কমিউনিকেশন ম্যানেজার আয়মান আপা কামালের বাবার ঘটনা জানান।

তিনি বলেন, পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম বৈধ কোনও কাগজপত্র নেই। তাই ৩৫ বছরে ধরে পাকিস্তানে আটকে আছেন তিনি। সব তথ্য নিয়ে আমরা যোগাযোগ করি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। আবেদন করা হয় ফিরিয়ে আনার। রায়হান মাঝে মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার ও কল্যাণ শাখায় যান। আমাদের পরিচিত এক কর্মকর্তা বেশ সহায়তা করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাকিস্তান দূতাবাসে যোগাযোগ করে। শুরু হয় অপেক্ষার পালা! এরপর পাকিস্তান থেকে পুলিশের বিশেষ শাখায় চিঠি আসে আবদুল জব্বাররের পরিচয় নিশ্চিত করতে। পরিবার ও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ হলো। নাগরিকত্ব নিশ্চিত করে চিঠি গেলো পাকিস্তানে। কাটলো আরও কয়েক মাস! অবশেষে সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে গতকাল রাতে দেশে ফিরলেন জব্বার! পরিবারের দীর্ঘ ৩৫ বছরের প্রতীক্ষার অবসানে জন্ম নিলো নতুন এক সুখের!

তিনি আরও বলেন, ৩৫ বছর পর এক বাবা তার সন্তানকে জড়িয়ে ধরছেন। স্বামীকে পেয়ে কাঁদছেন স্ত্রী। খুশিতে কাঁদছেন সবাই! এমন ঘটনাগুলো দেখলে চোখ ভিজে যায়! আসলে বাস্তব সিনেমার চেয়েও সুন্দর! কিন্তু একেকটা সুন্দরের পেছনে কত বেদনা, কত যে অপেক্ষা থাকে! এই যেমন আজকের সুন্দরের পেছনে ৩৫ বছরের অপেক্ষা! আসলে আমাদের মাইগ্রেশন টিমের একদল কর্মী যেসব অসাধারণ কাজ করে তার প্রত্যেকটাই একেকটা সিনেমা হতে পারে।

জব্বারের ছেলে কামাল হোসেন জানান, প্রায় ৩৫ বছর আগে তার বাবা বিদেশে গেছেন। বাবাকে তিনি কখনও চোখে দেখেননি। যদি তার বাবাকে আমরা খুঁজে দিতে পারি! ভীষণ করুণ সেই আকুতি! কী করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। পাকিস্তান মানে অতিরিক্ত জটিলতা। তাও একজন আবার ৩৫ বছর ধরে সেখানে আটকে আছেন! বেশ স্পর্শকাতর বিষয়।

এ সময় জব্বারের ছেলে বারবার ব্র্যাক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দূতাবাস, পুলিশসহ সবাইকে ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানান।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কামালের বাবাকে আনার জন্য তিনি একটি আবেদন দিয়েছিলেন। সেই আবেদনপত্রের সূত্রে জানা গেছে, তার বাবা ১৯৮৮ সালে পাকিস্তান গিয়েছিলেন। এরপর থেকে তাদের সাথে আর কোনও যোগাযোগ ছিল না। চলতি বছরের গত ৮ জানুয়ারি তাদের কাছে পাকিস্তান করাচি দূতাবাস থেকে একটি চিঠি আসে। সেই চিঠিতে জানানো হয় আব্দুল জব্বার তার বৈধ কাগজপত্রের কারণে দেশে ফিরে আসতে পারছেন না। এরপর আব্দুল জব্বারের ছেলে কামাল ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগের সাথে যোগাযোগ করেন।

উল্লেখ্য, আবদুল জব্বার যখন বিদেশে যান, তখন তার বড় ছেলে আবুল হোসেনের বয়স তিন বছর। কন্যা নুপুরের বয়স ২ বছর। ছোট্ট সন্তান কামাল তখনও পৃথিবীতে আসেনি। স্ত্রীকে অন্তঃসত্ত্বা রেখেই বিদেশে যান তিনি। বাবা বিদেশে যাওয়ার তিনমাস পর জন্ম কামালের। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করা কামাল কখনও বাবাকে দেখেননি।

 

/এসও/এমএস/
সম্পর্কিত
তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া ৮ যুবকের লাশের অপেক্ষায় স্বজনরা
১০ মাসে এলো রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স
প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে: প্রতিমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
ছেলের মৃত্যুর ৪ দিনের মাথায় চলে গেলেন বাবা, গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া
ছেলের মৃত্যুর ৪ দিনের মাথায় চলে গেলেন বাবা, গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া
গাজা ও ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
গাজা ও ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
অনেক নার্ভাস ছিলেন সাইফউদ্দিন
অনেক নার্ভাস ছিলেন সাইফউদ্দিন
বকশিবাজার মোড়ে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
বকশিবাজার মোড়ে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা