বিএনপির গত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় যেকোনও ধরনের নাশকতা ও সহিংসতা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হার্ডলাইনে থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এরপরও থেমে নেই নাশকতা। একের পর এক বাসে অগ্নিসংযোগ করে চলছে দুর্বৃত্তরা। ফলে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এত কড়া নিরাপত্তা বলয়ের মাঝেও কীভাবে যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে?
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ায় বিএনপির ডাকা ২৯ অক্টোবর দেশব্যাপী হরতাল ও পরবর্তী টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানী ও দেশজুড়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোসহ বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নাশকতা ও সহিংসতা ঠেকাতে পুলিশের পাশাপাশি মাঠে আছে র্যাব, বিজিবি ও বিপুল পরিমাণ আনসার।
পুলিশ সূত্র জানায়, নিরাপত্তার অংশ হিসেবে রাজধানীতে ১৯ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া রাজধানীসহ সারা দেশে পর্যাপ্ত বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
ডিএমপির সূত্র বলছে, রাজধানীর প্রবেশমুখসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট।
দেখা গেছে, এত কড়া নিরাপত্তার মাঝেও ৩১ অক্টোবর সকাল ৬টা থেকে ২ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা (৩ দিন) পর্যন্ত দুর্বৃত্তরা সারা দেশে ৩৪টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করেছে। এর মধ্যে শুধু রাজধানীতেই ১২টি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
এছাড়া বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা ফের ৪৮ ঘণ্টা (৫ ও ৬ নভেম্বর) অবরোধ কর্মসূচির আগেই শনিবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ও রাতে রাজধানীর পৃথক স্থানে পরপর চারটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
এদিকে আজ রবিবার (৫ নভেম্বর) সকাল ৬ থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দুটি বাসসহ একটি মিনি ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাস রয়েছে। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বাংলামোটরে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। প্রশ্ন উঠেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সতর্কতার পরও এত গাড়িতে অগ্নিসংযোগ কীভাবে হচ্ছে?
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, চোরাগোপ্তা হামলা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি এসব ঘটনায় জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে পুলিশের টহল আরও জোরদারের কথা বলছেন তারা।
ডিএমপি থেকে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নাশকতা, সহিংসতা ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা রোধ করতে গোয়েন্দা সদস্যদের উপস্থিতি এবং নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) জানিয়েছে, গোয়েন্দা নজরদারি কার্যক্রম চলমান থাকবে। কেউ যদি কোনও ধরনের নাশকতা কিংবা সহিংসতার পরিকল্পনা করে, সঙ্গে সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। যেকোনও উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় র্যাবের স্পেশাল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স রিজার্ভ রাখা হয়েছে। নাশকতা ও সহিংসতা প্রতিরোধে র্যাব ফোর্সেস সার্বক্ষণিক রাজধানীসহ দেশব্যাপী নিয়োজিত থাকবে। এ বিষয়ে সারা দেশে র্যাবের সব ব্যাটালিয়নকে গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি টহল জোরদারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক পুলিশ প্রধান শহীদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একেবারে জাল ফেলে নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের পক্ষে সম্ভব নয়। তাদের তো সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরও সহিংসতা ঠেকাতে পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয় রয়েছে। তাদের শিফটিং ডিউটিও বাড়িয়েছে। আমরা যেটি দেখতে পাচ্ছি, চোরাগোপ্তা হামলাসহ যানবাহনে অগ্নিসংযোগ হচ্ছে। দেখা গেছে, যে স্থানটি নিরাপদ মনে হচ্ছে, সেখানে এসব বেশি হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘নাশকতার ঘটনা মোকাবিলা করতে হলে পুলিশের পাশাপাশি জনসাধারণকেও সতর্ক থাকতে হবে। যেসব এলাকায় ঘটনা ঘটছে, সেসব এলাকার লোকজন অ্যালার্ট থাকলে মোকাবিলা করা সম্ভব।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, ‘এ মুহূর্তে তারা যে পরিমাণে টহল দিচ্ছে, টহল আরও বাড়াতে হবে। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেষ্টায় কমতি নেই। তারপরও নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, ‘তারা দুই দিনের (৫ ও ৬ নভেম্বর) যে অবরোধের ডাক দিয়েছে, সেখানেও আমাদের আগাম গোয়েন্দা তথ্য আছে। পুলিশের প্রতিটি সদস্য বিভিন্ন এলাকায় থাকবে।’
জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘অবরোধকে কেন্দ্র করে কেউ যেন নাশকতা করতে না পারে, আমরা সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ঢাকাবাসীর নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’